কোমরে রশি বেঁধে আদালতে নেওয়ায় তোলপাড়, ক্ষোভ

সীমা গ্রুপের পরিচালক একদিনের রিমান্ডে ।। এসআই ক্লোজড, কারণ দর্শানোর নির্দেশ

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ১৬ মার্চ, ২০২৩ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ডে কদমরসুল এলাকায় অক্সিজেন প্ল্যান্ট বিস্ফোরণে হতাহতের মামলায় সীমা গ্রুপের পরিচালক পারভেজ উদ্দীন সান্টুর একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন নাহার রুমীর আদালত এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অপরদিকে কোমরে রশি বেঁধে শিল্পপতি পারভেজ উদ্দীনকে আদালতে হাজির করার ঘটনার জন্য দায়ী পুলিশের এসআই অরুন কান্তি বিশ্বাসকে ক্লোজড করে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

চট্টগ্রামের শিল্প পুলিশের সুপার মো. সোলায়মান বলেন, পারভেজ উদ্দীনকে আদালতে পাঠিয়ে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি শেষে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড় থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে শিল্প পুলিশ চট্টগ্রাম৩ এর একটি ইউনিট। শিল্প পুলিশ বিস্ফোরণের ঘটনায় যে মামলায় তাকে আদালতে নিয়েছে ওই মামলার বাদীসহ অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় সাতজনের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১০ লক্ষ টাকা করে দেয়া হয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুসারে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকরা ক্ষতিপূরণ দুই লক্ষ টাকা পাওয়ার নীতিমালা থাকলেও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের নির্দেশে মালিকপক্ষ ১০ লক্ষ টাকা করে নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন।

এদিকে গতকাল সীমা গ্রুপের পরিচালক পারভেজ উদ্দীন সান্টুকে কোমরে রশি বেঁধে ও হ্যান্ডকাপ পরিয়ে আদালতে নেওয়ার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিদের মাঝে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেককে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। চট্টগ্রামের একাধিক শিল্পপতি নিজেদের ফেসবুক পেজে এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে দোষী পুলিশ সদস্যদের বিচার দাবি করেন।

জসিম উদ্দিন নামে একজন লিখেছেন, ‘কোমরে এ দড়ি মানে দেশের হাজারো শিল্প প্রতিষ্ঠানের কোমরে দড়ি। তিনি একজন উদ্যোক্তা। এ হিসেবে হাজারো উদ্যোক্তার কোমড়ে দড়ি। যেহেতু তিনি মামলায় এজহার নামীয় আসামি, তাকে দাগি আসামির মতো দড়ি বেঁধে না নিয়ে ভিন্নভাবে নেয়া যেত।’ সরওয়ার্দী নামক একজন লিখেছেন, ‘করোনার সময় যখন মানুষ অক্সিজেনের অভাবে মরে যাচ্ছে, তখন এই মানুষটা বিনামূল্যে অক্সিজেন দিয়ে মানুষের পাশে ছিলেন। আমি বলছি না তার দোষ নেই, তাদের ভুলের কারণে হয়ত এমন দুর্ঘটনা হয়েছে, বিপরীতে ক্ষমা চেয়েছেন তারা। আইন অনুযায়ী দুই লাখ টাকার পাশাপাশি আরো আট লাখসহ মোট ১০লাখ টাকা করে নিহতদের পরিবারের হাতে তুলে দেন ও আহতদের যাবতীয় চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করেন। ঘটনার পাঁচ দিনের মধ্যে সব কিছু দিয়ে দেয়ার পরেও তাকে জেলে যেতে হবে কেন? আগে একটি কন্টেনার ডিপোতে ৫১জন নিহত হওয়ার পরেও তাদের কেন জেলে নেয়া হল না?’

নুরুল হুদা নামে একজন মন্তব্য করেন, ‘সান্টু সাহেব সীতাকুণ্ড থেকে এমপি হতে চেয়েছিলেন। তাই এ প্রতিহিংসা।’

সাহাব আজিজ নামে একজন লিখেছেন, ‘করোনার সময় আমার মা ছিলেন ডায়ালাইসিস রোগী। হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় খালি সিলিন্ডার নিয়ে দৌড়াদৌড়ি ও চারিদিকে ফোন করেও অক্সিজেন রিফিল করতে পারছিলাম না। হঠাৎ উনার ফেসবুক পোস্টটা চোখে পড়লো, ফোন করতেই সাথে সাথে সাড়া পেলাম। ফ্যাক্টরিতে গিয়ে রিফিল করে নিয়ে আসলাম, কোনো টাকা নেয়নি। সত্যিই পারভেজ ভাই খুব ভালো মানুষ। আপনারা উনার সম্মানহানি করবেন না। উনাকে নিঃশর্তে মুক্তি দিন।’

চট্টগ্রাম চেম্বার প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বিষয়টি নিয়ে সরাসরি পুলিশের আইজিকে ফোন করেন। তিনি বিষয়টিকে দুঃখজনক বলে উল্লেখ করে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানান এবং দোষী পুলিশ সদস্যদের বিচার দাবি করেন। পুলিশের আইজি ঘটনার ব্যাপারে শিল্প পুলিশের এসপি মো. সোলায়মানকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

চট্টগ্রাম মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. আবদুর রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, ব্যবসায়ী পারভেজ উদ্দীনকে হাতকড়া ও কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে হাজির করাটা অন্যায় ও বেআইনি আচরণ করেছেন। নিরাপত্তার জন্য যা করার সেটা করবে কিন্তু একজন ব্যবসায়ীকে হাতে হাতকড়া ও কোমরে দড়ি বেঁধে দেওয়া কাজটা ঠিক হয়নি। যারা এই কাজ করেছেন তারা ঠিক করেনি।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ছবিটির ব্যাপারে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন জানান, ছবিটি দেখে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান নিজে মর্মাহত হয়েছেন। পরে তিনি শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপারকে ফোন দিয়ে অতি উৎসাহী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন।

সীমা গ্রুপের পরিচালক পারভেজ উদ্দীনকে কোমরে রশি বেঁধে আদালতে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় শিল্প পুলিশের এসআই অরুন কান্তি বিশ্বাসকে ক্লোজড করা হয়েছে। একই সাথে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন পুলিশ সুপার। তিনি শিল্পপতি পারভেজকে আদালতে হাজির করার মূল দায়িত্বে ছিলেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিল্প পুলিশের সুপার মো. সোলায়মান। গতরাতে দৈনিক আজাদীকে তিনি বলেন, সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের পরিচালক পারভেজ উদ্দীনের কোমরে রশি বেঁধে আদালতে হাজির করার সময় মূল দায়িত্বে থাকা এসআই অরুণ কান্তি বিশ্বাসকে ক্লোজড করা হয়েছে। তাকে শোকজও করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে সংলাপের প্রশ্নই আসে না : তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধগাড়িতে কালো পতাকা উড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ভবনে যান বঙ্গবন্ধু