কোন দিশা খুঁজছেন বিদিশা?

জাতীয় পার্টি

| বুধবার , ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ

এইচএম এরশাদের সঙ্গে বিয়ের সূত্রে জাতীয় পার্টিতে পদ নিয়ে সক্রিয় হয়েছিলেন বিদিশা। কিন্তু বিচ্ছেদের পর হারিয়ে যান দল থেকেও। এখন সন্তানের সূত্রে আবার
জাতীয় পার্টিতে ঢুকতে চাইছেন তিনি। বিদিশার নতুন প্রয়াসে ‘স্তিমিত’ বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মধ্যে নড়াচড়া শুরু হয়ে গেছে। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে বলে জানালেন বিদিশা।
এতে দলটিতে আবার ভাঙনের গুঞ্জন ছড়ালেও বিদিশাকে নিয়ে কোনো ‘মাথাব্যথা’ নেই বলেই জানালেন এরশাদের ভাই জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদের। সেনাপ্রধান থেকে ক্ষমতা দখল করে এরশাদ যে জাতীয় পার্টি গড়েছিলেন, তা তিন যুগে তিনবার ভেঙেছে। তবে এরশাদ নেতৃত্বাধীন অংশ বরাবরই শক্তিশালী থেকেছে। খবর বিডিনিউজের।
ক্ষমতাচ্যুত এরশাদকে ২০০০ সালে বিয়ে করেন কবি আবু বকর সিদ্দিকের মেয়ে বিদিশা সিদ্দিক। সন্তান শাহতা জারাব এরিকের জন্মের পর সেই সংসার টুটে যায় ২০০৫ সালে। তখন এরশাদের দেওয়া চুরির মামলায় জেলেও যেতে হয়েছিল বিদিশাকে। আইনি লড়াই চালিয়ে এরিককে নিজের কাছে রাখেন এরশাদ।
দুই বছর আগে এরশাদের মৃত্যুর পর তার বাড়ি বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে উঠে পড়েন বিদিশা। তার ছেলে এরিককে ‘চরম অবহেলা করে তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটানো হয়েছে’ বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
মাস দুয়েক আগে এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে এরিক জাতীয় পার্টির ‘নতুন কমিটি’ ঘোষণা করেন; যদিও তাকে রাজনীতি থেকে দূরেই রেখেছিলেন এরশাদ, আর দলেও তার কোনো পদ নেই। এরিক তার সৎ মা সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদকে ‘নতুন কমিটি’র চেয়ারপার্সন ঘোষণা করেন। মা বিদিশার সঙ্গে রওশনের ছেলে রাহগীর আল মাহি সাদকে (সাদ এরশাদ) কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন তিনি। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে ঘোষণা করা হয় এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদের নাম।
গত ১৪ জুলাই এরিকের সেই ঘোষণার পরপরই জাতীয় পার্টি জানায়, রওশন জাতীয় পার্টির চেয়ারপার্সন হতে চান না। এরশাদের মৃত্যুর পর রংপুরে তার আসনের এখনকার সংসদ সদস্য সাদ সরাসরি কোনো বক্তব্য দেননি।
এরপর দুই মাসে আর কোনো খবর না এলেও ‘নতুন কমিটি’ সংশ্লিষ্ট কয়েকজন নেতা বলেছেন, বিদিশার লক্ষ্য আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। আর সে লক্ষ্যেই তিনি বিভিন্ন জেলা বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন পুরনো নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। জাতীয় পার্টিরও জ্যেষ্ঠ কয়েকজন নেতাও তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, উত্তরের বিভিন্ন জেলার পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের সাথে বিদিশা যোগাযোগ করছেন বলে জানি। কেন্দ্রেরও অনেকে তার সাথে যোগাযোগ করছেন। আর তিনিও যোগাযোগ করছেন।
বিদিশার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি পুরোমাত্রায় জাতীয় পার্টিতে যুক্ত হতে চাইছেন আর একে তিনি বলছেন দল পুনর্গঠন। তিনি বলেন, দেখুন আমি কিন্তু কোনো পার্টি ঘোষণা করিনি। এটা জাতীয় পার্টির পুনর্গঠন। বর্তমান চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেক মানুষ বহিষ্কার হয়, বঞ্চিত হয়। তাদের নিয়ে আমি দলকে পুনর্গঠন করতে যাই। এরা জাতীয় পার্টির দুঃসময়ের মানুষ। এরশাদ সাহেবের কর্মী। আমি তাদেরকে নিয়েই পথ চলতে চাই।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভাবছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনাদের মনে আছে নিশ্চয়ই, ২০১৭ সালে ৫৮ দল নিয়ে একটি নির্বাচনী জোট করেছিলেন এরশাদ সাহেব। সেই জোট নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান কিছুই করেননি। সেই জোটের অনেকগুলো দলের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। তারাও আমার পাশে আছে। ওই দলগুলোর মধ্যে ইসলামিক ফ্রন্ট শুধু নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত।
বিদিশা বলেন, নির্বাচন তো অবশ্যই লক্ষ্য। কিন্তু সব কথা এখন বলাটা ঠিক নয়। আমাদের নিজস্ব কিছু চিন্তা-ভাবনা আছে। দল গুছিয়ে নেই, তারপর এসব বিষয় নিয়ে কথা বলব।
চেয়ারপাসনের পদ নিতে রওশন আগ্রহী নন বলে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বক্তব্য এলেও বিদিশা মনে করেন, এরশাদের প্রথম স্ত্রীর দোয়া তার ওপর রয়েছে। চেয়ারপারসন পদে জিএম কাদেরের থাকার বৈধতা নেই বলে দাবি করেন বিদিশা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএলপিজিএলে বন্ধ হয়েছে ‘অনিয়মের’ গ্যাস বিক্রি
পরবর্তী নিবন্ধযার মাথার দাম ৫০ লাখ ডলার