কোনো হিংসা-রেষারেষি নয় সব ধর্মের মানুষের সহাবস্থান চাই

রুমি চৌধুরী | শনিবার , ৮ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

ছোটবেলায় দুর্গাপূজা আসার আগে থেকেই শুরু হয়ে যেতো আমাদের জল্পনা-কল্পনা, প্ল্যান প্রোগ্রাম। এবার কোন কোন দিন কোথায় কোথায় যাবো, কী কী করবো, কোন ড্রেসটা পরে যাবো এইসব কিছুই। আবার বেশ ক’দিন আগে থেকেই টিফিনের টাকা জমিয়ে রাখতে হতো সাথে নিয়ে যাবো বলে। ক্ষিধে পাক না পাক, ঘুরে বেড়ানোর সময় এটা ওটা কিনে খাওয়ার মজা থেকেও বঞ্চিত হতে চাইতাম না।
তারপর সেই সপ্তমীর দিন থেকেই আনন্দ শুরু। দশ/বারো জনের মতো একটা গ্রুপ হতো আমাদের। সবাই মিলে চষে বেড়াতাম আশেপাশের সব হিন্দু এলাকায়। ভাটিখাইন, পাইকপাড়া, দক্ষিণ ছনহরা, পারলে আরো দূরের পূজা মণ্ডপে। প্রতিটি প্রতিমা দেখার পরই একবার করে গুণতাম কয়টি দেখা হলো। প্ল্যান থাকত আগের বছরের চেয়ে বেশি দেখার। তর্কাতর্কি হত কোন প্রতিমাটি বেশি সুন্দর, তা নিয়ে। তবে যে মণ্ডপে পূজার প্রসাদ দিতো, সেটিই বেশি ভোট পেতো সঙ্গত কারণেই, হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত শরীর যেহেতু। দেবীকে শ্রদ্ধাভরে প্রণাম, পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো হবার জন্য মানত… এসবতো ছিলোই!
এরপর পটিয়ার অধিবাসী হলাম যখন, তখন দলবেঁধে যেতাম কালীবাড়ি, সুচক্রদণ্ডী আরো বিভিন্ন এলাকায়। সে রকম প্রতিবছর ঈদ এলে অপেক্ষা করতাম ছনহরা, ভাটিখাইনের মুসলিম পরশীদের কাছ থেকে টিফিনবক্সে করে আনা সেমাই, রুটি-মাংসের জন্য। সপ্তাহব্যাপী বিটিভির অনুষ্ঠানমালার অপেক্ষার কথা নাইবা বললাম। বাড়িতে মুসলিম যাঁরা কাজ করতেন, তাঁদেরকে দেখতাম কাজ করতে করতে ইফতারের সময় হয়ে গেলে আমাদের বাড়িতেই ইফতার করে নিতে। মা-কাকীমারা সেদিন চেষ্টা করতেন তাঁদেরকে অপেক্ষাকৃত ভালো খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করতে, যেহেতু সারাদিনের রোজাদার। সেই মানুষগুলোকে আমরা পিশি/কাকা ডাকতাম। এখনো তা-ই ডাকি, দেখা হলে পা ছুঁয়ে প্রণাম করি। তাঁরাও কাছে ডেকে নেন পরম মমতায়।
এখনো প্রতিবছর যাই প্রতিমা দেখতে। আসকার দীঘির পাড় থেকে হেমসেন লেইন হয়ে চেরাগী পাহাড়, রহমতগঞ্জ থেকে জে এম সেন হল হয়ে হাজারী লেইনের কত কত মণ্ডপ! দেবী একজনই, প্রতিমাও প্রায় একই। তবুও মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে ঘুরে দেখার আনন্দটাই যেন আলাদা।
সামনেই প্রবারণা। ফানুসে ফানুসে আলোকিত হবে পুরো আকাশটাই। সেই ফানুস ওড়ানো দেখতে আসবে অনেক হিন্দু মুসলিম ভাইবোনেরাও। আর কী অদ্ভুত! এই বছর সেই একই দিনে পড়েছে ঈদ ই মিলাদুন্নবী ও লক্ষ্মী পূজা! কী সুন্দর মেলবন্ধন! যুগে যুগে কালেকালে এভাবেই সব ধর্মের মানুষের সহাবস্থান এই উপমহাদেশে। আমাদের দেশেও হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই একে অপরের সাথে সুখেদুঃখে মিলেমিশে ছিলো। সবসময় এভাবেই একসাথে থাকতে চাই আমাদের প্রিয় এই ভূমিতে। চাই না কোনো হিংসা-রেষারেষি, চাই না কোনো সামপ্রদায়িক বিরোধ-বিদ্বেষ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসময় কথা বলে
পরবর্তী নিবন্ধবিশ্ব লায়ন্স সেবা দিবস ২০২২ অন্তহীন ভালোবাসায় সেবা