কেন ব্রিকসে যোগ দেবে বাংলাদেশ,জানালেন প্রধানমন্ত্রী

| বৃহস্পতিবার , ২২ জুন, ২০২৩ at ৭:৫১ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে কেন ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার সমন্বয়ে গঠিত ব্রিকস জোটে যোগ দিতে চায়, সেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলছেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এককভাবে কারো ওপর যেন নির্ভরশীল থাকতে না হয়, সেজন্যেই ব্রিকসে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সুইজারল্যান্ড সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে গতকাল বুধবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরের অন্যান্য বিষয়ের মত দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সঙ্গে বৈঠকের কথাও তিনি তুলে ধরেন। খবর বিডিনিউজের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্রিকস জোটের বর্তমান চেয়ার দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে তিনি ব্রিকস জোটে বাংলাদেশের যোগ দেওয়ার আগ্রহের কথা জানান। সিরিল রামাফোসা তখন বলেন, আগস্টে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠেয় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে জোটের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পরে সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে একজন সাংবাদিক জানতে চান, ইউক্রেইনরাশিয়া যুদ্ধের বাস্তবতায় যে অর্থনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে, সেই সময়ে ব্রিকসে যোগ দিলে কোনো সুবিধা বাংলাদেশের হবে কি না।

উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্রিকসে আমরা যোগ দেব এই কারণে, ব্রিকস প্রথম যখন এটার প্রস্তুতি নেয়, তখন থেকেই আমরা এর সঙ্গে ছিলাম এবং আছি। কিন্তু আমরা ফাউন্ডার মেম্বার হতে পারিনি। এখন আমরা চেয়েছি সেটার মেম্বার হতে। আমরা চাচ্ছি যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো একটার ওপর যেন নির্ভরশীলতা না হয়। কাজেই অন্যান্য দেশের সঙ্গেও যেন আমাদের অর্থ বিনিময়ের সুযোগটা থাকে। আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো যেন আমরা সহজে ক্রয় করতে পারি, আমার দেশের মানুষের কষ্ট লাঘব করতে পারি। সেই সমস্ত বিষয় বিবেচনায় করেই কিন্তু আমরা ব্রিকসে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীনের অর্থনৈতিক জোট ব্রিক এর প্রথম আনুষ্ঠানিক সম্মেলন হয় ২০০৯ সালে। পরের বছর দক্ষিণ আফ্রিকার অন্তর্ভুক্তিতে জোটের নাম হয় ব্রিকস। এই জোটের উদ্যোগে ২০১৫ সালের ২১ জুলাই যাত্রা করে নিউ ডেভলেপমেন্ট ব্যাংকএনডিবি। সে সময় বলা হয়েছিল, এসব দেশে অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের ক্ষেত্রে বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে নিউ ডেভলেপমেন্ট ব্যাংক।

নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এনডিবি) সূচনাতেই বাংলাদেশের যোগ দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় উঠেছিল। তখন চীনের উদ্যোগে প্রস্তাবিত এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকে (এআইআইবি) যোগদানকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল সরকার। ব্রিকসের সদস্য রাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এক ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশকে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে যুক্ত হওয়ার আমন্ত্রণ জানালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাতে ইতিবাচক সাড়া দেন। এর পরে ব্যাংকটিতে যুক্ত হওয়ার পথে যাত্রা শুরু হয়। ধাপে ধাপে আনুষ্ঠানিকতাগুলো শেষে ২০২১ সালের ২০ অগাস্ট এনডিবির বোর্ড অব গভর্নরসের সভায় নতুন সদস্য রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের যোগদান অনুমোদিত হয়। বাংলাদেশই ব্রিকস জোটের বাইরের প্রথম দেশ, যারা এই ব্যাংকের সদস্যপদ পেয়েছে। এবার মূল জোটে যোগ দেওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিক আবেদন করল বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে সেই সাংবাদিক আরও জানতে চেয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক কোনো মুদ্রা চালু করার পরিকল্পনা বাংলাদেশের আছে কি না। উত্তর দিতে গিয়ে মুচকি হেসে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদার ব্যাপারি জাহাজের খবর নিতে বলছেন। পরে তিনি বলেন, এখানে আমরা দেখব যে বিকল্প কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা অর্থ ব্যবহারের ব্যবস্থা কেউ যদি নেয়, আমরা তার সঙ্গে আছি। ইতোমধ্যে আমরা কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা করছি, আমরা যেন আমাদের নিজস্ব অর্থের বিনিময়ে ক্রয়বিক্রয় করতে পারি, সেই পদক্ষেপটাও কিন্তু আমরা ইতোমধ্যে নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু ডলারের ওপর নির্ভরশীল না, আমরা নিজেরা নিজেদের অর্থে বিভিন্ন দেশের সেঙ্গ যেন বিনিময় করতে পারি, কেনাবেচা যাতে যা লাগে করতে পারি, সেই পদক্ষেপও নেওয়া আছে। যখন এটা কার্যকর হয় তখন আপনারা এটা দেখতে পাবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজার রাঙামাটি বান্দরবানের সিভিল সার্জনকে বদলি
পরবর্তী নিবন্ধব্যাংকের ক্যাশ ইনচার্জের বিরুদ্ধে মামলা