কুরআন ইহলৌকিক মুক্তি ও পারলৌকিক সৌভাগ্য লাভের একমাত্র গ্যারান্টি

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক | শুক্রবার , ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৪:৪২ পূর্বাহ্ণ

কুরআন মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য এক বিশাল নেয়ামতস্বরূপ। এ কুরআন মানবজাতিকে যেমনি উন্নতির স্বর্ণশিখরে নিয়ে যেতে পারে, তেমনি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তেও নিয়ে যেতে পারে। মানবজীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে এই কুরআনের বিধানকে মেনে চলার মধ্যেই নিহিত রয়েছে ইহলৌকিক মুক্তি। পক্ষান্তরে, এই মহামূল্যবান কিতাব, মানবজাতির হৃদয়ের মহাস্পন্দন কুরআনকে যারা জিন্দেগীর প্রতিটি ক্ষেত্রে মেনে চলেনি ও এর অনুশাসনকে জীবন চলার প্রতিটি পদে পদে উপেক্ষা করেছে তারাই ধ্বংসের কিনারায় পৌঁছে যেতে বাধ্য। হযরত মু’আয (রাঃ) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, ‘আমি রাসূল (সাঃ) এর সাথে একটি সফরে ছিলাম। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আমাদেরকে এমন কিছু কথা বলুন, যা আমাদের উপকারে আসে। তিনি বললেন, তোমরা যদি সৌভাগ্যপূর্ণ জীবনযাপন করতে চাও, শহীদের মৃত্যুবরণ করতে চাও, হাশরের দিন মুক্তি চাও, উত্তপ্ত দিনে ছায়া চাও, গোমরাহী থেকে হিদায়াত চাও, তাহলে কুরআন অধ্যয়নে অধ্যবসায়ী হও। কারণ-তা আল্লাহর কালাম, শয়তান থেকে আত্নরক্ষার দুর্ভেদ্য দুর্গ এবং (পরকালে) পুণ্যের পাল্লায় ভারী (হবে)’। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত- ‘কুরআনই হচ্ছে প্রকৃত সমৃদ্ধি ও ঐশ্বর্য। যার পরে কোন দারিদ্র থাকতে পারে না। কুরআন ব্যতীত কোন ঐশ্বর্য হতে পারে না’ (তাবারানী)। এ জন্য কুরআনবিমুখ জীবনকে বরকত, কল্যাণ ও রহমতশূন্য বলে সতর্ক করা হয়েছে। বরং কুরআনশূন্য আবাসকে কবর বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বিখ্যাত কুরআন বিশারদ ও মহানবী (সাঃ) এর আপন চাচাতো ভাই হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআন পড়বে এবং তদানুযায়ী আমল করবে, আল্লাহ তাআলা তার ব্যাপারে জামিন হয়ে যান যেন সে পৃথিবীতে পথভ্রষ্ট ও পরকালে হতভাগ্য হতে না পারে। অতঃপর তিনি পাঠ করলেন কুরআনের এই আয়াতগুলো- ‘যে আমার স্মরণ (তথা কুরআন) থেকে বিমুখ থাকবে, তার জীবন-যাপন হবে সংকুচিত এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন উত্তোলন করব অন্ধ অবস্থায়। সে বলবে: হে প্রতিপালক! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উত্তোলন করলে? আমি তো ছিলাম চক্ষুষ্মান। তিনি বলবেন, এরূপই আমার নিদর্শনাবলী তোমার নিকট এসেছিল কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবে আজ তুমিও বিষ্মৃত হবে’- সূরা- ত্বাহা- ১২৪-১২৬। এই আয়াতের ব্যাখায় তাফসির ইবনে কাসীরে এসেছে, ‘আর যারা আমার হুকুমের বিরোধিতা করবে, আমার রাসূল (সাঃ) এর প্রদর্শিত পথ পরিত্যাগ করবে এবং অন্য পথে চলবে তারা দুনিয়ায় সংকীর্ণ অবস্থায় থাকবে। তারা প্রশান্তি ও সচ্ছলতা লাভ করবে না। নিজেদের গুমরাহীর কারণে সংকীর্ণ অবস্থায় কালাতিপাত করবে। যদিও বাহ্যত পানাহার ও পরিধােেনর ব্যাপারে প্রশস্ততা পরিদৃষ্ট হবে, কিন্তু অন্তরে ঈমান ও হিদায়াত না থাকার কারণে সদা সর্বদা সন্দেহ, সংশয়, সংকীর্ণতা এবং স্বল্পতার মধ্যেই জড়িয়ে পড়বে। তারা হবে হতভাগা, আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত এবং কল্যাণশূন্য। কেননা মহান আল্লাহর উপর তারা ঈমানহীন, তাঁর প্রতিশ্রুতির প্রতি বিশ্বাসহীন, মৃত্যুর পর তাঁর নি’আমাতের মধ্যে তাদের কোন অংশ নেই। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তাকে কিয়ামতের দিন অন্ধ করে উঠানো হবে’। হযরত ইকরিমাহ (রাঃ) বলেন, জাহান্নাম ছাড়া অন্য কিছু তার নযরে পড়বে না। যেমন- আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘কিয়ামাতের দিন আমি তাদেরকে সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায়, অন্ধ অবস্থায়, বোবা অবস্থায় এবং বধির অবস্থায়। তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম’- সূরা- ইসরা- ৯৭।
যেমন অন্যত্র আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘আজকে আমি তাদেরকে তেমনিভাবে ভুলে থাকব যেমনিভাবে তারা এই দিনের সাক্ষাতের কথা ভুলে গিয়েছিল’- সূরা আ’রাফ-৫১। যে ব্যক্তি কুরআনুল হাকীমের উপর বিশ্বাস রাখে এবং এর হুকুম অনুযায়ী আমলও করে, সে যদি ওর শব্দ ভুলে যায় তাহলে সে এই প্রতিশ্রুত শাস্তির অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং তার জন্য অন্য শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। যে ব্যক্তি কুরআন মুখস্ত করার পর তা ভুলে যায় তার জন্য কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে। রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তির ভেতরে কুরআনের কোন অংশ নেই, সে বিধ্বস্ত-বিরান ঘরতুল্য’ অর্থাৎ তার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। তার হৃদয় থাকে মানবতার ধ্বংস-চিন্তা ও বিনাশ সাধনে উম্মুখ ও সদা মশগুল- (সহীহ্‌ তিরমিযী)। সহীহ্‌ মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে ‘তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবর বানিও না। যে ঘরে সূরা বাকারাহ পাঠ করা হয়, শয়তান সেখান থেকে পালিয়ে যায়’। অতএব উপরোক্ত আল্লাহর কুরআনের আয়াত ও রাসূল (সাঃ) এর হাদীস থেকে বুঝা যায়- আল্লাহর কুরআনকে জীবনের একমাত্র অনুসঙ্গ করার মাধ্যমেই আমরা ইহলৌকিক মুক্তি ও পারলৌকিক সৌভাগ্য লাভ করতে পারি- এতে কোন সন্দেহ নেই। অতএব আসুন, কুরআন বান্ধব জীবন গড়ি, কুরআন বান্ধব পরিবার গড়ি, কুরআন বান্ধব সমাজ গড়ি, চূড়ান্তভাবে কুরআন বান্ধব রাষ্ট্র কায়েমের সংগ্রামে একতাবদ্ধ হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি।
লেখক: সভাপতি-রাউজান ক্লাব, সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতাল

পূর্ববর্তী নিবন্ধদূরের দুরবিনে
পরবর্তী নিবন্ধপ্রেক্ষাগৃহে ফিরছেন কেয়া