কালুরঘাট সেতু নিয়ে প্রত্যাশার শেষ নেই

| শুক্রবার , ১ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

কালুরঘাট সেতুর সংস্কার বা উন্নয়ন নিয়ে এলাকার জনসাধারণ কেবল স্বপ্নই দেখছেন। নানা সময়ে নানা পরিকল্পনার কথা গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। সেই সব পরিকল্পনা আবার মিশিয়ে যায় কালের গহ্বরে। গত ৩০ মার্চ দৈনিক আজাদীতে সর্বশেষ খবরটি প্রকাশ পেয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, কালুরঘাট সেতু হবে দ্বিতল। এতে আরো বলা হয়েছে, প্রতীক্ষিত কালুরঘাট রেল-কাম সড়ক সেতু হচ্ছে দ্বিতল বিশিষ্ট। উপরে দুই লেইনের সড়ক, নিচে রেললাইন। সেতুর নতুন ডিজাইন এভাবেই করা হচ্ছে। সেতুর প্রাথমিক সমীক্ষা রিপোর্ট মে মাসে রেল মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করা হবে। তাতে কোনো ধরনের সংযোজন-বিয়োজন না থাকলে জুনে নতুন ডিজাইনের কাজ চূড়ান্ত হবে। এরপর একনেক সভায় উঠবে। একনেকে পাস হলে দ্রুত নির্মাণ কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।
সংসদ সদস্য ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ মঙ্গলবার রেল ভবনের সভা কক্ষে কালুরঘাট রেল-কাম সড়ক সেতুর অগ্রগতি নিয়ে রেল মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কোরিয়ান প্রতিনিধির সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সভায় এই তথ্য জানানো হয়।
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদী পার হওয়ার জন্য কালুরঘাট ছিল প্রথম সেতু। শুধু ট্রেন চলাচলের জন্য ১৯৩১ সালে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সেতুটি নির্মাণ করলেও ১৯৫৮ সালে সেতুটি সব ধরনের যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। অর্থাৎ এর ওপর দিয়ে ট্রেনও যেমন চলাচল করছে, তেমনি অন্যান্য যানবাহনও চলাচল করতে পারছে। তবে যখন ট্রেন চলাচল করে তখন অন্যান্য যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। কালুরঘাট সেতুটি ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। নিষেধাজ্ঞা রয়েছে ১০ টনের বেশি ভারি যানবাহন চলাচলের ওপর। এরপরও জোড়াতালি দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয়েছে এ সেতু। তবে প্রকৌশলীদের বক্তব্য উঠে এসেছে পত্রিকান্তরে। তাঁরা বলেছেন, সংস্কারের পর সেতুটি ১৫ টন পর্যন্ত ভার নিতে পারবে। সেতুর ওপর দিয়ে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে যাত্রীবাহী ও ফার্নেস তেলবাহী ওয়াগণ ট্রেন চলাচল করে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সেতুর ব্যবহার বেশ অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। সেতুর উভয় পাশের ডেক ও লোহার বেড়া প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। ভেঙে গেছে সেতুর দুই পাশের ডেক ও লোহার প্রাচীর। সেতুতে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। গর্তে যানবাহনের চাকা আটকে নিত্য যানজট হচ্ছে একমুখী এই সেতুতে। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার যানবাহন চলাফেরা করছে। প্রতি বছর কর্তৃপক্ষকে সেতুটি মেরামত করতে হয়। জরাজীর্ণ এই সেতুর কারণে তিন দশকের বেশি সময় ধরে ওই অঞ্চলের মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তবু জোড়াতালি দিয়ে সচল রাখা হচ্ছে খুবই প্রয়োজনীয় সেতুটি।
আজাদীর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কালুরঘাট সেতুটি এখন দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সেতুর উভয় পাশের মানুষ এই সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু নানা কারণে সেতুর নির্মাণ কাজ পিছিয়ে গিয়েছিল। এখন কোরিয়ান দাতা সংস্থা নতুন কালুরঘাট সেতুর প্রি-ফিজিবিলিটি স্টাডি করছে। ফিজিবিলিটি স্টাডি, ডিজাইন ও বাজেট পুরোটাই তারা করছে। এদিকে নতুন সেতু নির্মাণ কার্যক্রম বিলম্বিত হওয়ায় বিদ্যমান সেতু মেরামতের জন্য বুয়েটের দ্বারস্থ হয়েছে রেলওয়ে। পুরনো সেতুটি মেরামতের জন্য বুয়েটকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দিতে যাচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলের পরামর্শ অনুয়ায়ী সেতুটি মেরামত করা হবে।
এ কথা আজ বলা বাহুল্য যে, চট্টগ্রাম মহানগরীর সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের কয়েকটি এলাকার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই কালুরঘাট সেতু। তার উপর গত ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে যানবাহনের চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এ সেতু দিয়ে চলাচল করছে। সেতুর এক পাশে গাড়ি উঠলে অন্য পাশ বন্ধ রাখতে হয়। ফলে দীর্ঘ যানজটের ভোগান্তি সহ্য করতে হয় যাত্রীসাধারণকে প্রতিনিয়ত। যানবাহনের চাপে দুলতে থাকে সেতুটি। ঝুঁকি নিয়েই চলছে যানবাহন, চলছে মানুষজন। বিশেষজ্ঞরা যে কোনো সময় কালুরঘাট সেতুতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প দোহাজারী-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্পের কাজও আটকে আছে এ কালুরঘাট সেতুর কারণে। এ সেতুর ওপর দিয়েই চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারমুখী রেল চলাচলেরও আয়োজন চলছে। দোহাজারী-ঘুমধুম রেল লাইন নির্মাণের কাজ এরই মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ শেষ হয়েছে।
আমরা এবার আশা করবো, কালুরঘাট সেতু নিয়ে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, দেশ ও জনসাধারণের বৃহৎ স্বার্থে অনতিবিলম্বে তা বাস্তবায়ন হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে