কাটছে না পোল্ট্রি খাতের দুর্দিন

মুরগির বাচ্চা ও খাদ্যের দাম বাড়ার পাশাপাশি রয়েছে ওমিক্রন নিয়ে শঙ্কা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৪ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:৩৮ পূর্বাহ্ণ

পোল্ট্রি খাতের দুর্দিন যেন কাটছে না। গত ছয় মাস ধরে মুরগির বাচ্চা ও খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে অনেক খামারি টিকতে পারছেন না। ব্যয় সংকোচনের জন্য অনেকে খামারে মুরগির উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন। কয়েকজন খামারি জানান, কেবল ছয় মাসের মধ্যে মুরগির বাচ্চার দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। এছাড়া খাবারের দামও বেড়েছে বস্তায় ৭০০ টাকা পর্যন্ত। এর প্রভাবও ইতোমধ্যে মুরগির পাইকারি ও খুচরা উভয় বাজারে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে মুরগি। এছাড়া এখন করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ বাড়ছে। তাই ভবিষ্যতে কি হবে বলা যাচ্ছে না।
পোল্ট্রি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ছয় মাস ৫০ কেজি মুরগির খাদ্যের দাম ছিল ২ হাজার টাকা। বর্তমানে সেই বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ টাকায়। এছাড়া একই সময়ে একদিনের মুরগির বাচ্চার দাম ছিল ২৫ টাকা, এখন প্রতিটি বাচ্চা কিনতে হচ্ছে ৬৩ থেকে ৬৫ টাকায়। অন্যদিকে মুরগির বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ওষুধের দামও বেড়েছে দ্বিগুণ।
এদিকে জেলা প্রাণীসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগর ও বিভিন্ন উপজেলায় নিবন্ধিত ব্রয়লার মুরগির খামার রয়েছে প্রায় ৫ হাজার। এরমধ্যে বর্তমানে ৩ হাজার ৮০০টি চালু হয়েছে। করোনার অভিঘাতে বন্ধ হয়ে গেছে ১ হাজার ২০০টি। এছাড়া লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে ৪১৬টি। করোনার অভিঘাতে বন্ধ হয়ে গেছে ৮৫টি। অন্যদিকে করোনা শুরুর আগে থেকেই দেশের পোল্ট্রি শিল্পে বিনিয়োগ কমছে। বর্তমানে আমাদের দেশে সাতটি বিদেশি কোম্পানির বিনিয়োগ রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে পাঁচটি ভারতের, একটি থাইল্যান্ডের এবং একটি চীনের। ভারতীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে আছে ভিএইচ গ্রুপ, গোদরেজ, সগুনা, টাটা এবং অমৃত গ্রুপ। এছাড়া আছে থাইল্যান্ডের সিপি এবং চীনের নিউহোপ।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে বর্তমানে প্রায় ৬৫-৭০ হাজার ছোট-বড় খামার আছে। ব্রয়লার মুরগির মাংসের বার্ষিক উৎপাদন ২০১৬ সালে ছিল ৫ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন, ২০১৭ সালে ৫ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন এবং ২০১৮ সালে ছিল ৫ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন। গত ২০১৯ সালে সেটি দাঁড়ায় ৫ লাখ ২ হাজার মেট্রিক টনে। এছাড়া গত ২০২০ ও ২০২১ সালে ছিল সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের জীবিকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পোল্ট্রি শিল্পের সঙ্গে জড়িত, যার প্রায় ৪০ শতাংশই নারী।
জানতে চাইলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রিটন প্রসাদ চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, খরচের সাথে কিছুতেই খামারিরা পোষাতে পারছেন না। মুরগির উৎপাদনের খরচ হিসেবে কেজিতে ৫ টাকা লাভ করতেও কষ্ট হয়। বিশেষ করে মুরগির বাচ্চার দাম ও খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে অনেক খামারি উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন। যার ৫ হাজার পিস উৎপাদন ক্ষমতা তিনি ২ হাজার কমিয়ে দিয়েছেন। এখন আবার করোনার নতুন ধরণ ওমিক্রণ বেড়ে যাচ্ছে। সামনে কিছুই বুঝতে পারছি না।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. দেলোয়ার হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, শীতকালে এমনিতে মুরগির উৎপাদন কম হয়। আবার মুরগির চাহিদা বেশি থাকে। চাহিদা এবং যোগানের অসামঞ্জস্যের কারণে দাম বেড়ে যায়। আমাদের দেশে মুরগির খাদ্য আসে বাইরে থেকে। আন্তর্জাতিক বাজার বৃদ্ধির কারণেও মুরগির খাদ্যের দাম বাড়ে। মুরগির বাচ্চার বিষয়টি নির্ভর করে হ্যাচারিতে বাচ্চার উৎপাদনের ওপর। করোনা শুরুর পর পর পোল্ট্রি খাতে খুবই নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তখন অনেক হ্যাচারি মালিক চাহিদা না থাকায় বাচ্চা উৎপাদন করেননি। আবার হঠাৎ করে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাচ্চার দামের ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনতুন করে গড়তে ভাঙা হল চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬