কাজী নজরুল ইসলাম : প্রেম-দ্রোহের বহ্নিশিখা

| বৃহস্পতিবার , ২৫ মে, ২০২৩ at ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী, আর হাতে রণতূর্য’। যার হৃদয়ে প্রেম আর রক্তে ছিলো দ্র্রোহের আগুন তিনিই কবি নজরুল ইসলাম। কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯১৯৭৬)। আমাদের জাতীয় কবি। তিনি ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মে বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কাজী নজরুল ইসলামের ডাক নাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। মক্তবে কুরআন, ইসলাম ধর্ম, দর্শন এবং ইসলামী ধর্মতত্ত্ব অধ্যয়ন শুরু করেন।

১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র নয় নছর বয়সে তিনি পিতাকে হারান। পিতার মৃত্যুর পর পারিবারিক অভাবঅনটনের কারণে তার শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্ত হয় এবং মাত্র দশ বছর বয়সে জীবিকা অর্জনের জন্য কাজে নামতে হয় তাকে। এসময় নজরুল মক্তব থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে উক্ত মক্তবেই শিক্ষকতা শুরু করেন। এবং মসজিদের মুয়াযযিন হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিশোর বয়সে যোগ দেন লেটোর দলে। নিজে গান লিখে তা গায়তেন। প্রথমে বর্ধমান জেলার একটি হাইস্কুলে, পরে ময়মনসিংহের দরিরামপুর হাই স্কুলে ভর্তি হন। স্কুলের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। মুসলিম পরিবারের সন্তান এবং শৈশবে ইসলামী শিক্ষায় দীক্ষিত হয়েও তিনি বড় হয়েছিলেন একটি ধর্মনিরপেক্ষ সত্তা নিয়ে। একই সঙ্গে তার মধ্যে বিকশিত হয়েছিল একটি বিদ্রোহী সত্তা। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার তাকে রাজন্যদ্রোহিতার অপরাধে কারাবন্দী করে।

১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে ‘মোসলেম ভারত’ পত্রিকায় বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’ প্রকাশিত হলে সাহিত্য জগতে এক শক্তিমান কবি হিসেবে আবির্ভূত হন নজরুল। তাঁর সাহিত্য জীবনের পরিধি মূলত তেইশ বছর। এর প্রথম দশ বছর প্রধানত কবিতা এবং শেষ তেরো বছর মুখ্যত সংগীত রচনা করেছেন তিনি। এছাড়াও তিনি রচনা করেছেন উপন্যাস, ছোটগল্প এবং প্রবন্ধ। নজরুল ছিলো সকল অন্যায় আর গ্লানির বিরুদ্ধে তীব্রকণ্ঠ প্রতিবাদ। তাঁর দেশাত্মবোধক গানগুলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিকামী জনতার প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করেছে। তিনি ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবেই খ্যাতিমান।

নজরুলের বিপুল ও বৈচিত্র্যময় রচনার মধ্যে উপন্যাস: ‘বাঁধনহারা’, ‘কুহেলিকা’, ‘জয়যাত্রা’; ছোটগল্প ‘ব্যথার দান’, ‘রিক্তের বেদন’, ‘শিউলিমালা’; কাব্যগ্রন্থ: ‘অগ্নিবীণা’, ‘বিষের বাঁশি’, ‘প্রলয় শিখা’, ‘সাম্যবাদী’, ‘ভাঙার গান’, ‘নতুন চাঁদ’, ‘দোলনচাঁপা’, ‘ছায়ানট’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। নজরুল পরপর তিনটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছিলেন। এগুলো হলো: দৈনিক নবযুগ, সাপ্তাহিক ধুমকেতু, এবং সাপ্তাহিক লাঙল। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে পিক্‌স ডিজিজ নামে এক রোগে আক্রান্ত হয়ে বিকল হয়ে পড়েন নজরুল। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে কবিকে স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে এসে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ আগস্ট ঢাকার পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধঅভিলাষী গাঙচিল