কাকে মা-বাবা ডাকবে অর্ক ও জুঁই

পটিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত স্বামী-স্ত্রী

চন্দনাইশ প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ১২ জুলাই, ২০২২ at ১১:৫৭ অপরাহ্ণ

স্ত্রী রূপ্না সেন(৩৮)কে ডাক্তার দেখানোর জন্য গত ১১ জুলাই বিকেলে চন্দনাইশের মোহাম্মদপুরস্থ সেনবাড়ি থেকে স্ত্রীকে সাথে নিয়ে বের হয়েছিলেন বিশ্বজিৎ সেন বিষু(৪৮)।

পটিয়ায় ডাক্তার দেখিয়ে সন্ধ্যার পর সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে ফিরছিলেন বাড়ি। তারা বাড়িতে ফিরেছেন ঠিকই কিন্তু লাশ হয়ে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়ার ভাইয়ের দীঘি নামক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান স্বামী-স্ত্রী দু’জনই।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে মোহাম্মদপুর সেনবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নিহত বিশ্বজিৎ সেন ও তার স্ত্রী রূপ্না সেনকে পারিবারিক শ্মশানে দাহ করে এসেছেন আত্মীয়-স্বজনরা। নিহতদের ছেলে দ্বীপ সেন অর্ক(১৬) ও কন্যা অমি সেন জুঁই(১২)কে নিয়ে বাড়ির দাওয়ায় বসে আসেন পিসী, কাকা-কাকীরা।

এসময় সুনসান নীরবতা বিরাজ করছিল সেখানে। মাঝে-মধ্যে কেঁদে উঠছিল অর্ক ও জুঁই।

বিশ্বজিৎ সেনের ছোট ভাই জিষু সেন জানান, তার বড় ভাই বিশ্বজিৎ চট্টগ্রাম ইপিজেড এলাকায় রিজেন্সি নামের একটি গার্মেন্টেসে চাকরি করতেন। কোরবানি ঈদের ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন তিনি। গত সোমবার বিকেলে তার ভাই স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলেন পটিয়ায়। ডাক্তার দেখিয়ে অটোরিকশাযোগে বাড়ি ফিরছিলেন কিন্তু পটিয়ার ভাইয়ের দীঘি নামক স্থানে পৌঁছার পর দ্রুতগতির একটি বাস তাদের বহনকারী অটোরিকশাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তারা। মর্মান্তিক এ ঘটনায় তারাসহ অটোরিকশায় থাকা ৬ জনই প্রাণ হারান। মা-বাবাকে হারিয়ে অনাথ হলো দ্বীপ সেন অর্ক ও অমি সেন জুঁই। তারা আর মা-বাবা বলে ডাকতে পারবে না কাউকে।

গতকাল সোমবার বিকেলে বিশ্বজিৎ ও তার স্ত্রী বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় অর্ক ও জুঁই দু’জনই ছিল ঘুম। তাই মা-বাবার সাথে শেষ কথাও বলা হয়নি তাদের। একইসাথে মা-বাবা দু’জনকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছে দুই ভাই-বোন।

উপজেলার কাঞ্চননগরস্থ বেগম গুল চেমন আরা একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজের ১০ম শ্রেণীতে পড়ে অর্ক ও একই স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে জুঁই।

তারা জানায়, তাদের মা-বাবা ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সময় তারা ঘুম থাকায় তাদের সাথে কথা হয়নি। প্রতিদিন মায়ের সাথে ঘুমাতো অর্ক ও জুঁই। বাবা থাকতো শহরে। ছুটির সময় আসত বাড়িতে। মা-বাবা দু’জনই এখন আকাশের তারা হয়ে গেছেন, মা আর বলবে না পড়তে বস, ভাত খেতে এসো। একথাগুলো আর কে বলবে আমাদের। আমরা মা ডাকবো কাকে? বাবা ডাকবো কাকে? একথাগুলো বলতে বলতে তারা অঝোরধারায় কান্না করছিল।

এ ঘটনায় নিহত বিশ্বজিৎ সেনের বড় ভাই কাঞ্চন সেন বাদী হয়ে পটিয়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

তিনি বলেন, “এভাবে আর কত মায়ের বুক খালি হবে, পিতা-মাতা হারাবে সন্তানরা?” এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ
পরবর্তী নিবন্ধরাস্তা পার হতে গিয়ে কোলকাতায় চবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু