কাউন্সিলরের বাড়িতে পুত্রবধূর লাশ

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৩ জুলাই, ২০২২ at ৪:৪২ পূর্বাহ্ণ

বিয়ের পর থেকেই স্বামী ও তার স্বজনদের অত্যাচারে প্রতিনিয়ত ক্ষরণ হচ্ছিল। মৃত্যুতেই তিনি খুঁজে নিলেন চির শান্তি। মৃত্যু যে অমোঘ নিয়তি, যেন জেনে গিয়েছিলেন। বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার সময় তাই নিকটাত্মীয়দের জনে জনে বলছিলেন, এটাই শেষ দেখা। তাকে আর দেখতে পাবে না তারা। কারণ ও বাড়িতে (শ্বশুরবাড়ি) গেলে তাকে মেরে ফেলবে, নয়তো অনবরত মানসিক, শারীরিক নিপীড়ন সইতে না পেরে তিনি আত্মঘাতী হবেন। তা-ই হলো। রেহনুমা ফেরদৌস নামে ২৫ বছর বয়সী মেয়েটির মরদেহ গতকাল শনিবার ভোরে শ্বশুরবাড়িতে বিছানায় শায়িত অবস্থায় পাওয়া যায়। সরাইপাড়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল আমিন তার শ্বশুর। শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলছেন, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। অন্যদিকে স্বজনদের অভিযোগ, রেহনুমাকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় পাহাড়তলী থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।
পাহাড়তলী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে সকাল ১০ টায় নিজ শয়নকক্ষ থেকে ওই গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করেছি। আমার যাওয়ার আগেই তার মরদেহ ফ্লোরে শোয়ানো ছিল। কাউন্সিলরের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, ওই গৃহবধূ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তার গলায় দাগের চিহ্ন রয়েছে। বিষয়টি এখন তদন্ত করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের পর বিস্তারিত বলা যাবে এটা হত্যা না আত্মহত্যা। রেহনুমা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আলকরণ ওয়ার্ডের প্রয়াত কাউন্সিলর ও নগর আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা তারেক সোলায়মান সেলিমের ভাই তারেক ইমতিয়াজের মেয়ে। তিন বছর আগে সিটি কর্পোরেশনের ১২ নং সরাইপাড়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল আমিনের বড় ছেলে ব্যাংকার নওশাদুল আমিনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়। তাদের ২ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
রেহনুমার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই তার স্বামী ও শাশুড়ি তার ওপর নিয়মিত মানসিক অত্যাচার চালিয়ে আসছিলেন। কখনো কখনো চলত শারীরিক অত্যাচারও। মুখ বুজে সব সহ্য করে সংসার করছিলেন রেহনুমা। বিশ্বাস ছিল নিজের আচরণ, ভালোবাসা আর কর্তব্যনিষ্ঠার মাধ্যমে একদিন ঠিকই মন জয় করে নেবেন শ্বশুরবাড়ির। কিন্তু উভয় পরিবারের আর্থিক অবস্থান সমমানের না হওয়ায় শ্বশুর পক্ষের মন জয় করা দুরূহ হয়ে পড়েছিল।
রেহনুমার চাচাত বোন লুসিফার লায়লা আজাদীকে বলেন, আমরা ভেবেছিলাম দুজনের মাঝে একটি সন্তান এলে সম্পর্ক ঠিক হয়ে যাবে। ভুল ভেবেছিলাম। গত এক বছর ধরে সম্পর্ক আরো খারাপ হতে থাকে। রেহনুমা প্রায়শ আমাকে ফোন করত। কান্নাকাটি করত। সব কথা শেয়ার করত। কিন্তু কয়েক মাস ধরে তাকে বাইরে বেরুতে দেওয়া হয় না। ফোনে কথা বলাও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, বাবার বাড়িতে যে মেয়েটি গ্লাসে ঢেলে পানিও খেত না, সেই মেয়েকে দিয়ে তার শাশুড়ি ফ্লোর মোছা, সিঁড়ি ধোওয়া-মোছা থেকে এমন কোনো কাজ নেই যা করাত না। মুখ বুজে সব সহ্য করে চলছিল সে। কিন্তু এত কিছু করেও মন পেল না। সে আত্মহত্যা করেছে না তাকে হত্যা করা হয়েছে সেটা তদন্তে বের হয়ে আসবে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পেলে বলতে পারব। কিন্তু যদি সে আত্মহত্যা করেও থাকে, তার প্ররোচনাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
জানা গেছে, রেহনুমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা কাউন্সিলর নুরুল আমিনের তুলনায় খারাপ ছিল। রেহনুমাকে এসব নিয়ে প্রায়ই নির্যাতন করত তার শ্বাশুড়ি ও স্বামী। নির্যাতনের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে পারিবারিক ও সামাজিক একাধিক বৈঠকও হয়েছিল। এর মধ্যে এই ঘটনা ঘটল।
রেহনুমার বাবা তারেক ইমতিয়াজ বলেন, আমরা গিয়ে আমার মেয়ের লাশ বিছানায় পেয়েছি। আমার মেয়েকে তারা নির্যাতন করত। এটি একটি হত্যাকাণ্ড। আমরা মামলা করব।
রেহনুমার পরিবারের আরেক সদস্য রবিউল বলেন, সকালে রেহনুমা তার বাবার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খোলা ফেসবুক গ্রুপে লিখেছিল তার সবার জন্য কষ্ট হচ্ছে। সে সবাইকে মিস করছে। এর কিছুক্ষণ পর আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে। তার লাশ পুলিশ ঝুলন্ত অবস্থায় পায়নি। গলায় দাগ ছিল, লাশের হাতের মুঠোতে কিছু চুলও ছিল। মনে হচ্ছে নির্যাতন করেই হত্যা করেছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে ফোন করা হয় সরাইপাড়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল আমিনকে। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশে মারা গেছে আরো ৬ জন, চট্টগ্রামে আক্রান্ত ৪৩
পরবর্তী নিবন্ধপশুর হাটে বাড়ছে ক্রেতা