করোনা চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের বদলি আদেশ বাতিল হচ্ছে

জটিলতা নিরসনে তথ্য চেয়েছে মন্ত্রণালয় ।। অবসরে যাওয়া ও চাকরি না থাকা চিকিৎসককেও বদলি

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৭ জুলাই, ২০২১ at ৫:১৯ পূর্বাহ্ণ

করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও করোনা পরীক্ষায় আরটিপিসিআর ল্যাবসহ অন্যান্য ল্যাবে দায়িত্বরতদের বদলির আদেশ বাতিল হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন বিভাগের একমাত্র চিকিৎসকদের বদলির আদেশও বাতিল হতে পারে। বদলি আদেশে জটিলতা নিরসনে তথ্য চেয়েছে মন্ত্রণালয়।
গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপ-সচিব মো. আবু রায়হান মিঞার স্বাক্ষরিত এক আদেশে সকল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে। সংযুক্তি আদেশ বাস্তবায়নে জটিলতা থাকলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের বদলি আদেশ স্থগিত রেখে ৮ জুলাইয়ের (আগামীকাল) মধ্যে এ সংক্রান্ত তথ্য ও তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক, আরটিপিসিআর ল্যাবসহ অন্যান্য ল্যাবে দায়িত্বরত চিকিৎসক ও শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন বিভাগের একমাত্র ও অপরিহার্য চিকিৎসকদের সংযুক্তিতে বদলির আদেশ স্থগিত থাকছে।
উল্লেখ্য, ৫ জুলাই মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ১৫৬ জন চিকিৎসককে সংযুক্তিতে বিভিন্ন হাসপাতালে পদায়ন করা হয়। এর মধ্যে করোনা পরীক্ষায় চমেক আরটিপিসিআর ল্যাবে দায়িত্বরত ৬ জন চিকিৎসককেও সংযুক্তি দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকরাও বাদ যাননি। চমেক হাসপাতাল থেকে একযোগে এত সংখ্যক সিনিয়র চিকিৎসককে সংযুক্তিতে অন্যান্য হাসপাতালে পদায়নে চিকিৎসকদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনা শুরু হয়। ডেন্টাল ও বেসিক সাবজেক্টের চিকিৎসকরাও সংযুক্তি আদেশ থেকে বাদ পড়েননি। কিন্তু জেলা-উপজেলা হাসপাতালে গিয়ে তারা করোনার কী চিকিৎসা দেবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেবল চমেক নয়, কঙবাজার মেডিকেল কলেজের আরটিপিসিআর ল্যাবে দায়িত্বরত ল্যাব ইনচার্জকেও সংযুক্তিতে অন্যত্র পদায়ন করা হয়েছে মন্ত্রনালয়ের আদেশে। তবে তথ্যগত অপ্রতুলতার কারণে সংযুক্তি আদেশে এসব চিকিৎসকের পদায়ন করা হয়ে থাকতে পারে মর্মে গতকালের আদেশে উল্লেখ করেছে মন্ত্রণালয়। এছাড়া চিকিৎসকদের বর্তমান কর্মস্থলের বিষয়ে তথ্যগত ভুলের কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আদেশ ত্রুটিপূর্ণ হয়ে থাকতে পারে বলে মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেছে।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, করোনা চিকিৎসা ও আরটিপিসিআর ল্যাবে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের পাশাপাশি শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন বিভাগের অপরিহার্য চিকিৎসকদের তালিকা তৈরি করে এরই মধ্যে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তার। তিনি বলেন, আমাদের আরটিপিসিআর ল্যাবে দায়িত্বরত মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সব চিকিৎসককেও সংযুক্তি আদেশে অন্যত্র পদায়ন করা হয়। তারা চলে গেলে করোনা পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এছাড়া কিছু বিভাগের চিকিৎসকরা আছেন, যারা শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে যুক্ত। এসব বিষয় নিয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছি। মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের তালিকা পাঠাতে নির্দেশনা দেয়। আমরা ৬০ জনের মতো একটি তালিকা তৈরি করে মঙ্গলবারই (গতকাল) মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। করোনা পরীক্ষা কার্যক্রম, চিকিৎসা ও শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখতে যাদের ছাড়া চলবে না, এমন চিকিৎসকদেরই তালিকা তৈরি করে পাঠানো হয়েছে।
চমেক সূত্রে জানা গেছে, মেডিকেল কলেজে সব মিলিয়ে ৩৫০ জন শিক্ষক-চিকিৎসক রয়েছেন। এর মধ্যে প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদ মর্যাদার ১২০ জনকেই সংযুক্তি আদেশে বিভিন্ন হাসপাতালে পদায়ন করা হয়েছে। সংযুক্তিতে পদায়ন করা বাকি ৩৬ জন হাসপাতালের চিকিৎসক।
চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, করোনা চিকিৎসাসহ অন্যান্য চিকিৎসা কার্যক্রম যাতে বিঘ্নিত না হয় বিষয়টি মন্ত্রণালয় দেখবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছে।
প্রসঙ্গত, ৫ জুলাই জারিকৃত একাধিক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে চমেক হাসপাতালের ১৫৬ চিকিৎসককে একযোগে সংযুক্তির মাধ্যমে জেলা-উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালে পদায়ন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বদলিকৃতদের বড় অংশই সিনিয়র চিকিৎসক। মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের পার-১ শাখার উপ-সচিব জাকিয়া পারভীনের স্বাক্ষরে জারি করা প্রজ্ঞাপনে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় এবং জনসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এসব চিকিৎসককে সংযুক্তিতে পদায়নের কথা বলা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে ৭ জুলাইয়ের মধ্যে এসব চিকিৎসকের পদায়নকৃত কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়। অন্যথায় ৮ জুলাই বর্তমান কর্মস্থল থেকে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত হিসেবে গণ্য হবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়, চমেক হাসপাতাল থেকে ১২৬ জন চিকিৎসককে জেলা-উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালে সংযুক্তিতে পদায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালেই দেওয়া হয়েছে ৬০ জন। বিআইটিআইডি হাসপাতালে দেওয়া হয়েছে ১৬ জনকে। খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে ১৮ জন ও ফেনী জেলা সদর হাসপাতালে ১৭ জনকে পদায়ন করা হয়েছে। এছাড়া ফটিকছড়ি উপজেলায় ৮ জন ও ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলা হাসপাতালে ৭ জনকে সংযুক্তিতে পদায়ন করা হয়েছে। এর বাইরে ৩০ জনকে চমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে সংযুক্তিতে পদায়ন দেখানো হয়েছে।
একযোগে এত সংখ্যক চিকিৎসককে বদলির কারণে নিজেদের (চমেক) হাসপাতালে করোনার চিকিৎসাসহ অন্যান্য চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে বলে মন্তব্য করেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর। হতাশা প্রকাশ করে তিনি আজাদীকে বলেন, এত সংখ্যক চিকিৎসক নিয়ে গেলে আমার এখানে চিকিৎসার জন্য লোক থাকবে না। আর চিকিৎসার জন্য ডাক্তার না থাকলে করোনা ওয়ার্ডসহ অন্যান্য ওয়ার্ডেও মারাত্মক প্রভাব পড়বে।
অবসরে যাওয়া ও চাকরি না থাকা চিকিৎসককেও বদলি : স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংযুক্তিতে পদায়নের আদেশে অবসরে যাওয়া এবং চাকরি নেই এমন চিকিৎসককেও নতুন কর্মস্থলে পদায়নের তথ্য পাওয়া গেছে। আদেশে কঙবাজার মেডিকেল কলেজ থেকে বদলি করা হয় মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন নামে এক চিকিৎসককে। কিন্তু তিনি ওই কলেজ থেকে ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি অবসরে যান। এরপরও আদেশে কঙবাজার মেডিকেল কলেজ থেকে তাকে কঙবাজার জেনারেল হাসপাতালে সংযুক্তিতে পাঠানো হয়েছে।
কঙবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অনুপম বড়ুয়া আজাদীকে বলেন, সংযুক্তি আদেশে একজন বোধহয় আছেন, যিনি অবসরে গেছেন। তালিকায় যে নামটি দেখছি, এই নামে আমার জানামতে কলেজে কেউ নেই। আর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে আজ এ সংক্রান্ত তালিকা ও তথ্য পাঠানোর কথা জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে, চমেক থেকে ফেনী জেলা হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে সুজিত কুমার দাশ নামে এক চিকিৎসককে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ৫/৬ বছর আগে তিনি চমেক থেকে চাকরি ছেড়ে দেন। এই নামে কোনো চিকিৎসক বর্তমানে কলেজে নেই বলে জানান চমেক অধ্যক্ষ সাহেনা আকতার। চমেক সূত্র জানায়, সুজিত কুমার দাস চমেক নিউনেটাল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। পরে তিনি চমেক থেকে চাকরি ছেড়ে দেন।
৫ জুলাই মন্ত্রণালয়ের জারি করা সংযুক্তি আদেশে চমেকের ১৫৬ জন, রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের ৩৪, কঙবাজার মেডিকেল কলেজের ৪৮ জনকে সংযুক্তিতে অন্যত্র পদায়ন করা হয়। সংযুক্তি আদেশে জটিলতা নিরসনে তথ্য চেয়ে এরই মধ্যে নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নতুন মিশনে টাইগাররা
পরবর্তী নিবন্ধপ্রতিদিনই নতুন রেকর্ড