করোনা কাহিনি

সত্যব্রত বড়ুয়া | শুক্রবার , ২১ মে, ২০২১ at ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ

পরিবারের সদস্য সবার মুখে মাস্ক থাকে বলে এখন আমি কাকেও চিনতে পারছিনা। চিনতে পারছিনা নিজের স্ত্রীকেও। কণ্ঠস্বরে নাকি মানুষ চেনা যায়। কিন্তু মাস্ক মুখে যখন মানুষ কথা বলে তখন কণ্ঠস্বর পাল্টে যায়। কুকুর নাকি ঘ্রাণে মানুষ চিনতে পারে। চেষ্টা করলে আমিও নিশ্চয়ই পারবো। পরিবারের সদস্যরা আমার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ওদের অজান্তে ওদের গায়ের গন্ধ শুঁকতে লাগলাম। আমার স্ত্রী কিন্তু টের পেয়ে গেলো। সে বললো, তুমি কুকুরের মতো শুঁকছো কেনো। আমি বললাম, তোমাদের চিনবার এটাই সহজ পথ। সুখবর হলো, ‘ঘ্রাণ থেরাপি’ প্রয়োগ করে আমি এখন আমার পরিবারের সদস্যদের চিনতে পারছি। ভেবে দেখলাম করোনার জন্যে আমাদের বাংলা ভাষা দিন দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে। আমরা এখন অহরহই বলছি পেনডামিক, কোয়ারেনটাইন, আইসোলেশন, লকডাউন ইত্যাদি শব্দ। এক সময় দেখা যাবে মানুষ নবজাতকের নামকরণ করছে কোভিড, কোয়ারেনটাইন, আইসোলেশন। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের একটি বইয়ের নাম রয়েছে, ‘ক্যানসারের সাথে বসবাস’। জানিনা কেও এখন পর্যন্ত ‘করোনার সাথে বসবাস’ নামের কোনো বই লিখছেন কিনা। না লিখলে লেখা প্রয়োজন। আমরা প্রবীণরা আমাদের সন্তানদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের কথা শোনাই। নবীনরা তাদের সন্তানদের কাছে শোনাবে করোনা যুদ্ধের কথা। আমরা বলে থাকি ‘আনলাকি থার্টিন’। কিছুদিন পর মানুষ কোভিড-১৯ এর কারণে বলবে ‘আনলাকি নাইনটিন’। বিজ্ঞানীরা বলছেন এখন করোনার ২য় ঢেউ চলছে। আমি মনে করি করোনারও জোয়ার-ভাটা রয়েছে। এখন চলছে করোনার জোয়ার। ভাটাও আসবে। অদূর ভবিষ্যতে আমরা দেখবো করোনা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। বাজারে এদের চাহিদা বেশী থাকবে। করোনা ভাইরাস নিয়ে অনেকেই পি.এইচ.ডি ডিগ্রী লাভ করবে। অতি নিকটবর্তী ভবিষ্যতেই আমরা বিয়ে, জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকীতে মাস্ক ও হ্যান্ড সেনিটাইজার উপহার দেবো। এটা সামাজিক রীতিতে পরিণত হবে। বিয়ের পাত্র-পাত্রী পছন্দের সময় দু’পক্ষই চাইবে করোনা রিপোর্ট। চাকরির আবেদন পত্রে সংযুক্ত থাকবে করোনা রিপোর্ট। আমরা হ্যান্ডশেক, কোলাকুলি করাটা ভুলেই যাবো। বিয়ের আসরে বর-কনেকে মাস্ক মুখে বসে থাকতে দেখবো। আমরা সবাই বিয়ের অনুষ্ঠান উপভোগ করবো তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে। এক সময় করোনা চলে যাবে। কিন্তু চলে যাবেনা করোনাকালীন অভ্যাস। মানুষ অভ্যাসের দাস বলেই এমন হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅবিলম্বে নিয়মিত আদালত চালুর দাবি
পরবর্তী নিবন্ধভ্যারিয়েন্ট