কঠোর শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে

| রবিবার , ২৭ নভেম্বর, ২০২২ at ৮:০৬ পূর্বাহ্ণ

সমাজে দিন দিন বেড়েই চলেছে সীমাহীন অস্থিরতা। বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈষম্য, অসম প্রতিযোগিতা, বস্তুবাদী মনোভাব, নীতিহীনতা ইত্যাদি দিন দিন উসকে দিচ্ছে অস্থিরতার পারদ। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারছে না। ধৈর্য ও সহ্যশক্তি হ্রাস পাচ্ছে ক্রমশ। সমাজে নানান অসহিষ্ণুতার বিষবৃক্ষ জন্ম হচ্ছে এবং অনিষ্ট জেঁকে বসছে। বিপদে কিছুটা অস্থির হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু অস্থিরতা যখন সিনড্রোম আকারে প্রকাশিত হয় তখন এ রোগ সমাজকে কুরে কুরে ধ্বংস করে ফেলে।

আজাদীতে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, চট্টগ্রাম ইপিজেড থানাধীন বন্দরটিলা এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়ার ১০ দিন পর ৫ বছরের শিশু আয়াতের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পিবিআই। মুক্তিপণের জন্য অপহরণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় আয়াতকে। পরে ওই শিশুকে ছয় টুকরো করে কাট্টলী সাগরপাড়ে ফেলে দেয়া হয়। পিবিআই চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বলেন, প্রায় ছয় মাস ধরে শিশুটির পরিবারের ভাড়াটিয়া আবির ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে আয়াতকে অপহরণ করে। অপহরণের পর পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা এবং মরদেহটি ৬ টুকরো করে। হত্যার পর মরদেহ বাজারের ব্যাগে নিয়ে যাওয়ার একটি সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশের হাতে এলে সে সূত্র ধরে ঘটনার অনুসন্ধান শুরু করে পিবিআই। সে ফুটেজের সূত্রে ওই শিশুর মরদেহের সন্ধানে একই বাড়ির ভাড়াটিয়া আবির ও তার বন্ধু হাসিবকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।

২৫ নভেম্বরের আজাদীতে প্রকাশিত হয় আরেকটি ঘটনা। এতে বলা হয়, দ্বিতীয় বিয়ের পর স্বামী ভরণপোষণ বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রথম স্ত্রী খাদিজা বেগম কম্বল চাপা দিয়ে হত্যা করেছে স্বামী আব্দুল মান্নানকে (৫৮)। গত বুধবার (২৩ নভেম্বর) রাত ৩টার দিকে নগরীর পাঁচলাইশ থানার নাজিরপাড়া নিজাম কলোনিতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আব্দুল মান্নান ইসলামিক ফাউন্ডেশন ফটিকছড়ি শাখায় কেয়ারটেকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলার দৌলতপুরে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ খাদিজাকে গ্রেপ্তার করেছে। পারিবারিক বিরোধের জেরে খাদিজা বেগম স্বামী মান্নানকে হত্যা করেছে বলে পুলিশকে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।

এই সব ঘটনা আমাদের সমাজকে অস্থির করে তুলছে। সামপ্রতিক সময়ে এই ধরনের খুনের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় সকলের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এসব খুনের বেশির ভাগই ঘটেছে সামাজিক ও পারিবারিক কারণে। সাধারণত পারিবারিক কলহ, অর্থ লেনদেন, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব বা এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হচ্ছে। আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে পারিবারিক হত্যাকাণ্ড। বিশিষ্টজনরা বলছেন, সামাজিক অস্থিরতা, মূল্যবোধের অবক্ষয়, বিচারহীনতা ও প্রযুক্তির প্রসারের কারণে ঘটছে এ ধরনের ঘটনা। এ ধরনের ঘটনা রোধে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের যেমন আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে, তেমনি পারিবারিক সচেতনতাও বৃদ্ধি করতে হবে। একই সঙ্গে সামাজিক অনুশাসনের প্রতি জোর দেয়ারও তাগিদ দিয়েছেন তাঁরা।

অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলেন, সামাজিক কারণে আমাদের দেশে এ ধরনের নৃশংস ঘটনা নতুন কিছু নয়। বর্তমানে গণমাধ্যমের কল্যাণে তা সবাই হয়তো প্রত্যক্ষ করতে পারছে। শিশুহত্যার মতো যে ধরনের ঘটনা ঘটছে, তা সামাজিক কারণেই ঘটছে। যার বেশির ভাগ শিকার নিম্ন বা নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পরিবারের শিশু। তাঁরা বলেন, আমাদের সমাজব্যবস্থার যে কাঠামো তাতে দেখা যায় যে, অপরাধীরা সাধারণত শক্তিশালী ও প্রভাবশালী হয়ে থাকে। ফলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অপরাধের ঘটনার ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয় না। এছাড়া পৃথিবীর অনেক দেশেই অপরাধ কমানোর জন্য সামাজিক অনুশাসনের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এ ধরনের উদ্যোগ খুব একটা নেই। শিক্ষার অভাবও এর জন্য দায়ী। তবে তাঁরা আশাবাদী যে এ বিষয়ে জনমত তৈরি হবে। শিশুহত্যার মতো নৃশংস ঘটনাও কমে আসবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি, সামাজিক অনাস্থা ও অসন্তোষ থেকে জনমনে বিশৃঙ্খলা ও বিক্ষোভের জন্ম হয়, অসন্তোষকে উসকে দেয়। অনেক সময় নজিরবিহীন বৈষম্য জনমনে সরকার, প্রশাসন ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। তখন সরকারের কোনো উদ্যোগেই আর জনগণের আস্থা থাকে না। ফলে সমাজব্যবস্থা খাদের কিনারা থেকে ধ্বংসের গহ্বরে পতিত হয়।’ এ বিষয়ে সরকারসহ আমাদের সবাইকে নতুন করে ভাবতে হবে। এ নিয়ে আরও কাজ করতে হবে। সর্বোপরি বিচারের মাধ্যমে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।.৩

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে