কঠোর কর্মসূচির দিকে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা

বেঁধে দেয়া সময়ে শুধু দুজন গ্রেপ্তারে অসন্তোষ, আজ বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত ।। চমেক হাসপাতাল

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৬ মে, ২০২১ at ৫:০১ পূর্বাহ্ণ

চিকিৎসকদের উপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে আল্টিমেটাম দিয়ে কর্মবিরতি তিনদিনের জন্য স্থগিত করেছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তিনদিনের মধ্যে আশানুরুপ ব্যবস্থা দৃশ্যমান না হলে ফের কর্মবিরতিসহ কঠোর কর্মসূচি পালনেরও ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা। গতকাল বুধবার তাদের বেঁধে দেয়া ‘তিনদিন’ শেষ হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে তাদের দায়েরকৃত মামলায় দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কিন্তু এ দুজন আসামির গ্রেপ্তারে সন্তুষ্ট নন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তাদের দাবি- যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা মামলার ১০/১২ নম্বর আসামি। অথচ মামলায় চবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সুজন, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজসহ নাম উল্লেখ করা ১৩ জন আসামি রয়েছে। কিন্তু ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি বা হচ্ছে না। তাদের গ্রেপ্তার করা না হলে পুনরায় কর্মবিরতিসহ আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়ার কথা জানিয়েছেন চমেক হাসপাতাল ইন্টার্ন ডক্টর এসোসিয়েশনের (আইডিএ) সদস্য সচিব ডা. তাজওয়ার রহমান খান।
তিনি গতকাল আজাদীকে বলেন, আমরা তিনদিনের সময় দিয়ে কর্মবিরতি স্থগিত করেছিলাম। আমাদের দাবি ছিল- এই সময়ের মধ্যে মূল অভিযুক্তদের (মামলায় নাম উল্লেখ করা আসামিদের) গ্রেপ্তার এবং আমাদের বিরুদ্ধে যে মিথ্যে মামলা দায়ের করা হয়েছে তা প্রত্যাহার করা। অথচ মাত্র দুজন আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। যারা মামলার ১০/১২ নম্বর আসামি। কিন্তু মূল আসামিদের গ্রেপ্তারে কোনো তৎপরতা আমরা দেখছি না। যার কারণে প্রশাসনের গৃহীত ব্যবস্থায় আমরা সন্তুষ্ট নই। দাবি পূরণ না হলে পুনরায় কর্মবিরতিসহ কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার কথা বলছেন আইডিএর এই সদস্য সচিব। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শুধু চমেক হাসপাতালে নয়; এবার ঢাকা-ময়মনসিংহসহ সারাদেশের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে একযোগে কর্মবিরতি পালনের চিন্তা রয়েছে তাদের। ইতোমধ্যে ঢামেকসহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সাথে এ বিষয়ে কথাও বলেছেন তারা। তবে বৃহস্পতিবার (আজ) সকালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার পরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান আইডিএর সদস্য সচিব ডা. তাজওয়ার রহমান খান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির আজাদীকে বলেন, তাদের (ইন্টার্নদের) দাবি অনুযায়ী পুলিশ কিন্তু দুজনকে এরইমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে। অর্থাৎ পদক্ষেপ কিন্তু দৃশ্যমান হয়েছে। তারা ভেবে-চিন্তেই সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আমি আশা রাখি।
গত ২৭ এপ্রিল চমেক ক্যাম্পাসে সংঘটিত দুই গ্রুপের সংঘর্ষের জের ধরে পরদিন (২৮ এপ্রিল) সকাল থেকেই ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন শুরু করেন। চিকিৎসকদের উপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে টানা ৫ দিন এ কর্মবিরতি পালন করেন তারা। পরে তিনদিন সময় বেঁধে দিয়ে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।
প্রসঙ্গত, কথা কাটাকাটির জের ধরে ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যার পর থেকে চমেক ক্যাম্পাসে ও ছাত্রাবাসে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে দুজন চিকিৎসকসহ বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হন। সংঘর্ষে জড়িত দুই গ্রুপের একটি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী এবং অপর পক্ষ সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এই দুই নেতার অনুসারীদের মাঝে সামপ্রতিক সময়ে আরো বেশ কয়বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবারের রাতের ঘটনায় বুধবার দুপুরে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসে চমেক হাসপাতাল ও কলেজ কর্তৃপক্ষ। বৈঠকে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনসহ আরো কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষের এসব সিদ্ধান্তের পরও কর্মবিরতি অব্যাহত রাখেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। দায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা না নেয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তারা। সংঘর্ষের ঘটনায় ২৯ এপ্রিল পাঁচলাইশ থানায় উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করে।
একটি মামলা করেন চমেক ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান, যিনি সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এ মামলায় ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ৭০/৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
নাম উল্লেখ করা ১৩ জনের মধ্যে রবিউল হাসান রাজু (২৫) ও মো. হানিফ (৩০) নামে দুজন আসামিকে গত রোববার পুলিশ গ্রেপ্তার করে। হাবিবুর রহমানের দায়েরকৃত মামলায় নাম উল্লেখ থাকা অন্য আসামিরা হলেন- অভিজিৎ দাশ, মুশফিকুর ইসলাম আরাফ, মো. রিয়াজুল ইসলাম জয়, তৌফিকুর রহমান, সৌমিক বড়ুয়া, আতাউল্লাহ বুখারী, চবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সুজন, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজ, সাদ্দাম হোসেন ইভান, ইয়াসিন আওরাজ ভূঁইয়া, রওনক প্রকাশ ভূঁইয়া রনক ও জিয়াউদ্দিন আরমান। অন্যদিকে, অপর মামলাটি করেন চমেক শিক্ষার্থী রিয়াজুল ইসলাম জয়। রিয়াজুল ইসলাম শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এ মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো অনেককে আসামি করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅগ্রিম কর কমালে বাড়বে নতুন বিনিয়োগ
পরবর্তী নিবন্ধগণপরিবহন চালু হচ্ছে আজ