কঠোর অবস্থান নেয়ার ইঙ্গিত আওয়ামী নেতাদের

ভাস্কর্য বিতর্ক

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ২৯ নভেম্বর, ২০২০ at ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ

হেফাজত ইসলামীর আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর ভাস্কর্য-বিরোধী বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। এই ইস্যুতে এতদিন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা সরাসরি কোনো মন্তব্য না করলেও গতকাল শনিবার দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ভাস্কর্য-বিরোধী বক্তব্যের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করেন। শিক্ষা উপ-মন্ত্রী ও চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও একটি চক্র বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে মন্তব্য বলেছেন, তাদের এই ফাঁদে পা দিয়ে বাংলাদেশকে আফগানিস্তান পাকিস্তানের মতো হতে দেওয়া হবে না।
বিবিসিবাংলা, বিডিনিউজসহ বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার খবরে বলা হয়েছে, প্রায় দুই মাস ধরে ঢাকার ধোলাইপাড় চত্বরে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য তৈরির পরিকল্পনার বিরোধিতা করে আসছিল অনেকগুলো ইসলামপন্থী দল। তবে হেফাজতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা গত শুক্রবার প্রথমবারের মত কড়া ভাষায় নিজের ভাস্কর্য-বিরোধী অবস্থান পরিষ্কার করেন। হাটহাজারীতে এক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘যে কোনো ভাস্কর্য তৈরি করা হলে তা টেনে-হিঁচড়ে নামিয়ে ফেলা হবে’। এর প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য টেনে-হিঁচড়ে নামিয়ে ফেলবে বলে কোনো কোনো ধর্মীয় নেতা ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিচ্ছেন। ভাস্কর্য নিয়ে একটি ধর্মীয় সামপ্রদায়িক গোষ্ঠীর অনভিপ্রেত ও উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্য মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, এদেশের আবহমানকালের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের প্রতি চ্যালেঞ্জ বলে আমরা মনে করি। তিনি বলেন, তারা ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মপ্রিয় মানুষের মধ্যে বিদ্বেষ তৈরির চেষ্টা করছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ জুনায়েদ বাবুনগরীর বক্তব্যকে ‘উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ ছড়ানোর অপচেষ্টা’ হিসেবে বিবৃত করেছেন। তিনি বলেন, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, পাকিস্তানসহ বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশেই ভাস্কর্য রয়েছে। সেখানে বাংলাদেশে ভাস্কর্য হতে পারবে না কেন?
হানিফ বলেন, এই ধরনের উগ্রবাদী, জঙ্গিবাদী কথাবার্তা বলে তারা ইসলামের মত শান্তির ধর্মকে মানুষের কাছে বিতর্কিত করে তুলছে এবং মুর্খের মত উন্মাদনা ছড়ানোর চেষ্টা করছে। সরকার বা জনগণ কেউই এটি বরদাস্ত করবে না। তবে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা এ বিষয়ে মন্তব্য করলেও দলটি বা এর কোনো অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ভাস্কর্য তৈরির বিরোধিতা নিয়ে চলতে থাকা দ্বন্দ্বের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিতে দেখা যায়নি।
উল্লেখ্য, ঢাকার ধোলাইপাড় চত্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে অক্টোবর মাসের শুরু থেকেই ইসলামপন্থী কয়েকটি দল প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। তবে বিষয়টি আলোচনায় আসে ১৩ নভেম্বর, ঢাকায় একটি সম্মেলনে খেলাফত মজলিশের শীর্ষ নেতার বক্তব্যের পর। সেসময় তিনি সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, ভাস্কর্য নির্মাণ পরিকল্পনা থেকে সরে না দাঁড়ালে তিনি আরেকটি শাপলা চত্বরের ঘটনা ঘটাবেন এবং ওই ভাস্কর্য ছুঁড়ে ফেলবেন। তার ওই বক্তব্য সরকারি দল আওয়ামী লীগে অস্বস্তি তৈরি করে। এরপর আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখালেও দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে শুরু করে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভারত-বাংলাদেশ থেকে ছড়িয়েছে করোনা!
পরবর্তী নিবন্ধজুনেই ভিড়বে জাহাজ