কখন হবে সেই বইমেলা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৪ নভেম্বর, ২০২১ at ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ

করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় পূর্ব নির্ধারিত তারিখ পিছিয়ে ‘নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বর মাসের বিজয় মেলার পূর্ব পর্যন্ত’ সময়ে নগরে অভিন্ন বইমেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। গত ২৭ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। ওই ঘোষণা অনুযায়ী, চলতি মাসেই শুরু হওয়ার কথা ছিল বইমেলার। অথচ আজ নভেম্বর মাসের চৌদ্দ দিন পার হতে চললেও বইমেলা আয়োজনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি চসিক। এ অবস্থায় চট্টগ্রামের পাঠক-লেখকদের প্রশ্ন, শেষ পর্যন্ত চলতি বছর কি বইমেলা হবে না? পর পর দুই বছর বড় পরিসরে বইমেলা আয়োজনের যে অর্জন ছিল তা এবার ম্লান হবে? পূর্বের চেয়ে সমৃদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকার পরও এবার বইমেলা আয়োজন না করায় হতাশ তারা।
এ প্রসঙ্গে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, আমাদের শিক্ষা স্ট্যান্ডিং কমিটি কয়েক দিন আগে বসেছিল। তারা আলাপ-আলোচনাও করেছে। কিন্তু বিজয় দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি নাকি স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বইমেলা করবে সেটার সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তবে প্রকাশকসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বসে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
তিনি বলেন, বইমেলা অবশ্যই আয়োজন করব। যদি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে তাহলে বড় পরিসরে আয়োজন করব। যদি পরিস্থিতি ভালো না থাকে তাহলে ছোট পরিসরে হলেও করব। এতে অন্তত ধারাবাহিকতা থাকবে। নগরের এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে বড় পরিসরে ২০১৯ ও ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বইমেলা আয়োজন করে চমক সৃষ্টি করেছিল চসিক। কুড়িয়েছিল প্রশংসাও। তাই চলতি বছরও লেখক এবং প্রকাশকের প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল বইমেলাকে ঘিরে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ফেব্রুয়ারি মাসে বইমেলা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে ২ মার্চ বইমেলাকে ঘিরে আন্দরকিল্লা নগর ভবনে সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ, সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্য শিল্প-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। ২৩ মার্চ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বইমেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয় ওইদিন। পরে ২০ মার্চ জেলা প্রশাসন চসিককে জানায়, ২৭ ও ২৮ মার্চ জিমনেশিয়াম মাঠে উন্নয়ন মেলা করবে। এর প্রেক্ষিতে ২১ মার্চ বইমেলা বাস্তবায়ন কমিটির জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল ২৯ মার্চ মেলা শুরু হবে।
তবে উদ্বোধনের দুদিন আগে ২৭ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করেন সিটি মেয়র। সেদিন উপস্থিত প্রকাশক ও লেখকদের সঙ্গে আলোচনা করে করোনা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় বইমেলার তারিখ পেছানোর ঘোষণা দেন মেয়র। সবার সাথে আলোচনা শেষে মেয়র ওইদিন বলেন, আমি মেলা বন্ধ করার পক্ষপাতি নই। পরিস্থিতি বিবেচনায় তারিখ পিছিয়ে দেয়া যায়। মেলা নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে বিজয় মেলার পূর্ব পর্যন্ত সময়ে আয়োজন করা হবে।
এদিকে নভেম্বর মাসে মেলা আয়োজনের কোনো উদ্যোগ না নেয়া প্রসঙ্গে শিশু সাহিত্যিক বিপুল বড়ুয়া আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রামে বইমেলা বেশ জমে উঠেছিল। মুসলিম হল থেকে জিমনেশিয়াম মাঠে স্থানান্তর করার পর আরো বৃহৎ পরিসরে এ মেলা আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে চট্টগ্রামের প্রকাশনা সংস্থা তো ছিলই, সাথে ঢাকার অনেক নামী-দামি প্রকাশনাও অংশ নেয়। কিন্তু হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়াতে চট্টগ্রামের পাঠকরা অসুবিধায় পড়েছেন। কারণ, চট্টগ্রামের পাঠকদের পক্ষে সবসময় ঢাকায় যাওয়া সম্ভব নয়।
এ গল্পকার বলেন, সিটি কর্পোরেশন ও প্রশাসন যথেষ্ট পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছিল বইমেলায়। সেক্ষেত্রে আমরা আশা করেছিলাম, এ বইমেলা আরো সমৃদ্ধ হবে। কিন্তু করোনার কারণে হয়নি। চট্টগ্রামের সবাই খুব চেয়েছিল বইমেলা হোক। তাই নভেম্বর মাসে করার একটা কথা ছিল। এখন তাও হচ্ছে না। এখন সবার প্রশ্ন, বইমেলা কখন হবে? আদৌ হবে? তবে আমরা চাইব, ডিসেম্বর মাসে বিজয় দিবসের কাছাকাছি সময়ে বইমেলার আয়োজন করা হোক। যদি কাছাকাছি সময়ে প্রস্তুতির কারণে আয়োজন করা সম্ভব না হয়, ফেব্রুয়ারি মাসে যেন অবশ্যই আয়োজন করে। এ বইমেলাকে ঘিরে আমাদের অনেক আশা। এটা আরো সমৃদ্ধ হোক।
চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বলাকা প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী জামাল উদ্দিন আজাদীকে বলেন, নভেম্বর মাসে বইমেলা করার কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি কেন্দ্রীয় এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ বছর আর না করে একেবারে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে করার জন্য। চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদও এতে একমত। সেই হিসেবে আমরা ফেব্রুয়ারি মাসে বইমেলা আয়োজনের টার্গেট নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছি।
নভেম্বর মাসে না করার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে অমর একুশে বইমেলা হবে। নভেম্বর মাসে মেলা করার পর মাঝখানে ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি দুই মাস থাকবে। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে বা এত কাছাকাছি সময়ে দুটি বইমেলা আয়োজন করা সম্ভব না। ফেব্রুয়ারি মাসে করোনা পরিস্থিতি এখনকার মতো স্বাভাবিক থাকলে বইমেলা প্রত্যাশা অনুযায়ী জমজমাট হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বইমেলা পরিচালনা কমিটির আহবায়ক ও চসিক কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু আজাদীকে বলেন, এখনো তো করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি ভালো হয়নি। বইমেলা হলে তো অনেক গেদারিং হবে। সেখানে ঝুঁকি থাকবে। তবে সামনে ঢাকার সাথে মিল রেখে বইমেলা শুরু করব।
তিনি বলেন, আগামীবার আমরা ম্যানুয়ালি এবং অনলাইন দুইভাবেই মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি নেব। করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে অনলাইনে মেলা হবে। কোনো অবস্থাতেই মেলা বন্ধ করব না।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ ও ২০২০ সালে সিটি কর্পোরেশন আয়োজন করলেও চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্য শিল্প-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরা সম্মিলিতভাবে বইমেলা বাস্তবায়ন করে। এতে সত্যিকারের বইমেলা উপহার পায় পাঠক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগণপরিবহনে লাল-সবুজ স্টিকার লাগানো শুরু
পরবর্তী নিবন্ধভিন্ন আঙ্গিকে আজ শুরু এসএসসি পরীক্ষা