কক্সবাজারে এক মাসে ৩০ ধর্ষণ, গণধর্ষণ ৩টি

কক্সবাজার প্রতিনিধি | শনিবার , ৬ আগস্ট, ২০২২ at ৪:০৮ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। গত জুলাই মাসে জেলার বিভিন্ন থানায় ধর্ষণের অভিযোগে ৩০টি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩টি গণধর্ষণের এবং একটি শিশু বলাৎকারের ঘটনাও রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এই ধরনের অপরাধ বাড়ার পেছনে সমাজের নারী-পুরুষ বৈষম্য ও বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে দায়ী করছেন।
জেলা পুলিশের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত জুলাই মাসে কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় জোরপূর্বক ৯টি, প্রেমের ফাঁদে ফেলে ৮টি ও বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগে ১০টি মামলা রেকর্ড করা হয়। এর মধ্যে গত পক্ষকালে ১৭টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে পুলিশের মাসিক অপরাধ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, কক্সবাজারে সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে চকরিয়া ও উখিয়া উপজেলায়। এই দুই উপজেলায় গত মাসে ৮টি করে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া কক্সবাজার সদর উপজেলা ও মহেশখালীতে ৩টি করে, টেকনাফে ২টি, রামুতে ১টি, পেকুয়ায় ১টি এবং নবগঠিত ঈদগাঁও থানায় ১টি ধর্ষণের অভিযোগ রেকর্ড করা হয়। তবে দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় গত মাসে কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। উখিয়ায় ৮টি ধর্ষণের মধ্যে একটি শিশু বলাৎকারের ঘটনাও রয়েছে। বনরূপা আবাসন প্রকল্প রহমানিয়া হেফজ ও এতিমখানায় এক মাদ্রাসা শিক্ষকের হাতে এই শিশু বলাৎকারের ঘটনাটি ঘটে বলে জানানো হয়। গত মাসে কক্সবাজারে গণধর্ষণের অভিযোগে ৩টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে সদরে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে এক নারীকে গণধর্ষণ করা হয়। এই ঘটনায় অভিযুক্ত ২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া মহেশখালী ও টেকনাফ উপজেলায় আরো দুটি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনোলজি সোসাইটির পরিচালকমন্ডলীর সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. জিয়াউর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের সমাজে নারীরা এখনও পুরুষের সমকক্ষতা অর্জন করেনি। ধর্ষণের বিচারের ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা জটিলতা। রয়েছে সামাজিক অবক্ষয়। এক্ষেত্রে পর্ণোগ্রাফি রাখছে বিশাল ভূমিকা। তিনি মনে করেন, সুস্থ বিনোদনের অভাবে সমাজে পর্ণোগ্রাফি ছড়িয়ে পড়ায় ধর্ষণের মতো ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার নিশ্চিত করা গেলে ধর্ষণের ঘটনা বাড়তো না।
একই কথা বলেন কক্সবাজারের প্রবীণ আইনজীবী ও বহু আইন গ্রন্থ প্রণেতা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। তিনি দৈনিক আজাদীকে বলেন, এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে দ্রুত সময়ে তদন্ত করে অপরাধী শনাক্ত করা, গ্রেপ্তার করা এবং শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে অপরাধ প্রবণতা কমানো যেতো।
তবে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম দাবি করেন, প্রতিটি ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে। এসব ঘটনায় ইতোমধ্যে ২৮ জন আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪ জন সন্দেহভাজন আসামিও রয়েছে। যেসব ঘটনায় এখনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি সেখানেও পুলিশ তৎপর রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশেখ কামাল বহুমাত্রিক গুণে গুণান্বিত অনির্বাণ বাতিশিখা
পরবর্তী নিবন্ধবিরূপ আবহাওয়ায় ঝুঁকিতে বিশ্ব চালের বাজার