রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় এবং মিয়ানমারের উপর চাপ অব্যাহত রাখতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোর। তিনি বলেন, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে মিয়ানমারে পরিস্থিতি পরিবর্তন আনতে এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপদে মর্যাদার সঙ্গে তাদের দেশে প্রত্যাবাসনের জন্য কাজ করছি আমরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবির পরিদর্শন ও শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। এসময় রোহিঙ্গাদের টানা ছয় বছর আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ও কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রশংসা করেন তিনি।
কক্সবাজারের শরনার্থী শিবিরকে বিশ্বের বৃহত্তম শিবির উল্লেখ করে ইমন গিলমোর বলেন, ছয় বছর ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশকে সহায়তা করে যাচ্ছে। এই সহায়তা সামনের দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে। সবশেষ চারবছর বিশ্বের মানুষ নতুন নতুন সংকটের মুখোমুখি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ইইউয়ের এই বিশেষ প্রতিনিধি।
তিনি বলেন, চার বছরে আমরা অনেক সংকট দেখেছি। আফগানিস্তান–আফ্রিকা সংকট এবং ইউক্রেন পরিস্থিতি তার মধ্যে অন্যতম। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সব সংকট নিয়েই কাজ করে। তবে এর মধ্যেও রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে এবং মিয়ানমারের পরিস্থিতি উন্নত করতে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজারে পৌঁছে ইইউর মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোরের নেতৃত্বে ৫ সদস্যদের প্রতিনিধি দল।
সেখান থেকে তারা উখিয়ার ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান। এসময় রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কেন্দ্র, শিশু শিক্ষা ও খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন দলটির সদস্যরা। এরপর প্রতিনিধি দলটি ডব্লিউএফপি পরিচালিত খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে এবং ১১ নম্বর ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নাগরিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে অংশ নেওয়া আয়েশা জানান, প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রোহিঙ্গাদের কাছে সার্বিক বিষয় সম্পর্কে জানতে চান। জবাবে তারা খাদ্য সহায়তা বাবদ পাওয়া অর্থের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বলেছেন, তারা বিষয়টি দেখবেন।
অন্য রোহিঙ্গারাও প্রতিনিধি দলের কাছে তাদের দ্রুত নিজের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে অনুরোধ জানিয়েছেন।
একই দাবিতে প্রতিনিধি দলের প্রধান ইমন গিলমোরের সঙ্গে দেখা করে চিঠি দেন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন, ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের রাজনৈতিক উপদেষ্টা ভিক্টর ভেলেক, ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ দূত চার্লস হোয়াইটলি ও ফার্স্ট সেক্রেটারি (রাজনৈতিক) সেবাস্টিয়ান রিগার–ব্রাউন এবং ইইউ বাংলাদেশের হেড আনা অরল্যান্ডিনি।
এর আগে গত ১২ জুন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে আসা প্রতিনিধি দলের কাছেও প্রত্যাবাসনের জোর দাবি জানিয়েছিল রোহিঙ্গারা।