ওদের স্বপ্ন অনেক, সুযোগ কম

সবকিছু ঢাকা কেন্দ্রিক, গড়ে উঠেনি আঞ্চলিক কাঠামো ।। বেরিয়ে আসছে না নতুন ক্রিকেটার

ক্রীড়া প্রতিবেদক | মঙ্গলবার , ৩০ নভেম্বর, ২০২১ at ৭:৪১ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের ক্রিকেট এগিয়েছে না পিছিয়েছে তা নিয়ে বিতর্ক চলছেই। কারো মতে এগিয়েছে আবার কারো মতে পিছিয়েছে। পারফরম্যান্সের পারদ প্রায়শই উঠানামা করে। তবে বরাবরই সবচাইতে বড় যে অভিযোগটা উঠে তা হচ্ছে বাংলাদেশের পাইপলাইনে ক্রিকেটার নেই। কিন্তু কেন? সেই প্রশ্নের উত্তর মেলে না কখনো। নানা সময় নানা পরিকল্পনা নেওয়া হলেও সেটা বাস্তাবায়ন হয় না বলেই বাংলাদেশের পাইপলাইনে ক্রিকেটার পাওয়া যায় না। যার প্রভাবটা পড়ে জাতীয় দলে। ক্রিকেটকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সব সময়ই গ্রহণ করে। কিন্তু তা কখনো বাস্তবায়ন হয় না। ফলে জেলা শহরগুলো থেকে প্রত্যাশিত মানের ক্রিকেটার বের হয়ে আসে না। বিসিবির আঞ্চলিক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া এখনো আলোর মুখ দেখেনি। ফলে সবকিছু হয়ে আছে ঢাকা কেন্দ্রিক। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এখন বিশ্বের অন্যতম ধনী ক্রিকেট বোর্ড। কিন্তু এই বোর্ডের নেই কোনো নিজস্ব মাঠ। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এবং বিসিবির মধ্যে রশি টানাটানি চলে মাঠ নিয়ে। তাই এখন সবচাইতে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, নিজস্ব অবকাঠামোই যদি গড়তে না পারে তাহলে ধনী ক্রিকেট বোর্ড হয়ে লাভ কী?
ক্রিকেটারদের আধুনিক যত সুযোগ সুবিধা সবকিছু ঢাকার মিরপুর স্টেডিয়ামেই। দেশের অন্য কোনো জেলায় এখনো গড়ে উঠেনি একাডেমি। এমনকি ক্রিকেটারদের যে বিষয়টি সবচাইতে বেশি দরকার সেই ফিটনেস সেন্টার নেই দেশের কোথাও। তাই ক্রিকেটারদের ছুটতে হয় মিরপুরে। আর সেখানে কতজনই বা যেতে পারে। কেবল জাতীয় দলে বা জাতীয় দলের আশে পাশে যারা থাকে তারাই হয়তো সেখানে অনুশীলনের সুযোগ পায়। বাকিদের ঘুরতে হয় বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের যেসব কোচ রয়েছে তারাও খুব একটা যায় না ঢাকার বাইরে। ফলে পরখ করা যায় না উঠতি ক্রিকেটারদের। সেজন্য অতি প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাবে মুকুলেই ঝরে যায় প্রতিভাবান অনেক ক্রিকেটার।
এক সময়ের ক্রিকেট ঐতিহ্যের ধারক বাহক চট্টগ্রাম এখন হারাতে বসেছে তার ক্রিকেট ঐতিহ্য। জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব হাতে গোনা মাত্র কয়জন। কিন্তু কেন? এই প্রশ্নের উত্তর মেলে না সহজে। অথচ অনেক একাডেমি, অনেক ক্রিকেটার এই চট্টগ্রামে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তারা কি আদতেই সঠিক প্রশিক্ষণ কিংবা যথাযথ সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। উত্তরটা আসবে, না। কারণ চট্টগ্রামে যে ক্রিকেট বোর্ডের তেমন কোন কার্যক্রমই নেই।
চট্টগ্রামে একটি মাত্র আন্তর্জাতিক ভেন্যু জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম ব্যস্ত থাকে আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় আসর আয়োজনে। স্টেডিয়াম সংলগ্ন মহিলা কমপ্লেঙ মাঠটি প্রায়শই থাকে অবহেলিত। গত দুই বছরেও ভেঙে ফেলা ইনডোরটি নির্মিত হয়নি। একটি একাডেমি ভবন নির্মাণের ঘোষণাটা এখনো ঘোষণার মধ্যেই রয়ে গেছে। নেই ক্রিকেট বোর্ডের কোনো মান সম্পন্ন জিম। যেখানে ক্রিকেটাররা তাদের ফিটনেস ধরে রাখার কাজটা করতে পারে। অথচ বরাবরই ক্রিকেট বোর্ডে থাকে চট্টগ্রামের একাধিক পরিচালক।
চট্টগ্রামে একটি ক্রিকেট একাডেমি গড়ার ঘোষণা দিয়েছিল বিসিবি অনেক আগেই। সেটা আলোর মুখ দেখেনি এখনো। কবে যে দেখবে তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। ফলে এভাবে সবকিছু ঢাকা কেন্দ্রিক হলে দেশের ক্রিকেট যে ক্রমশ পিছিয়ে যাবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। যেটা এরই মধ্যে প্রতীয়মান হচ্ছে। অথচ চট্টগ্রামে প্রতিভাবান ক্রিকেটারের কোন অভাব নেই। অভাব কেবল তাদের পরিচর্যার। এ ব্যাপারে দৈনিক আজাদীর সাথে কথা বলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার চট্টগ্রামের শহীদুর রহমান এবং আফতাব আহমেদ চৌধুরী।
শহীদুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামের ক্রিকেটাররা সাবেক ক্রিকেটারদের সাপোর্ট পাচ্ছে না। অনূর্ধ্ব-১৭, ১৮, ১৯ ক্রিকেটারদের টেনে তোলার দায়িত্ব পালন করছেন না তাদের পূর্বসূরীরা। ফলে তারা পিছিয়ে যাচ্ছে। একজন খেলোয়াড়ের চেষ্টা থাকবে, আবার তাকে পথ দেখানোর মানুষও লাগবে; তাহলে তার মনোনিবেশটা ধরে রাখা যাবে। এই ব্যাকআপটা না থাকাতে চট্টগ্রামের থেকে ক্রিকেটার উঠে আসার হার হ্রাস পাচ্ছে।
আফতাব আহমেদ বলেন, চট্টগ্রামে লিগ নিয়মিত নয়। লিগ হলেও এমন কোটা পদ্ধতি করা হয় যাতে করে চট্টগ্রামের অনেক ক্রিকেটার খেলতে পারেন না। এতে করে চট্টগ্রামের ক্রিকেটারদের বিকাশের পথ রুদ্ধ হচ্ছে। আমাদের সময় অনেক সুযোগ-সুবিধা না থাকলেও আমরা প্রচুর খেলার সুযোগ পেয়েছি। বর্তমানে ছেলেরা সে সুযোগ পাচ্ছে না। আমাদের সময় অনেক মাঠ ছিল। যেখানে খেলে আমরা জাতীয় দলে গিয়েছি। চট্টগ্রামে সেই মাঠগুলো এখন নেই। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে জাতীয় পর্যায়ে অনূর্ধ্ব-১৭ দলের ২৭ জন ক্রিকেটারের সাথে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে দেখা হয়। তাদের জিজ্ঞেস করে জানতে পারি সেখানে একজনও চট্টগ্রামের ক্রিকেটার নেই। এটা আমাদের জন্য খুব হতাশাজনক। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে চট্টগ্রামের অনেকেই আছেন। তাদেরই উচিত চট্টগ্রামের বিষয়টা নিয়ে ভাবা। সুযোগ-সুবিধা বাড়ালে চট্টগ্রাম থেকে মানসম্মত ক্রিকেটার উঠে আসার একটা প্রক্রিয়া থাকতো।
চট্টগ্রামের ক্রিকেট সংগঠক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সভাপতি আলহাজ্ব আলী আব্বাস দৈনিক আজাদীকে বলেন, স্কুল ও কলেজগুলো কম ক্রিকেট খেলছে। চট্টগ্রামে মাঠ সমস্যাও প্রকট। যেগুলো আছে সেগুলোও নানা কাজে কর্মে ব্যবহার হয় ফলে সেখানে খেলার সুযোগ আর থাকে না। এছাড়া এখানে সংগঠক সমস্যাও রয়েছে। আগে ক্লাব এবং সংগঠকরা যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তো তেমনটা এখন হচ্ছে না। খেলোয়াড়দেরও চাহিদা বেড়েছে, খেলার সরঞ্জামের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব কিছু মিলে চট্টগ্রামের ক্রিকেট চর্চা মুখ থুবড়ে পড়েছে। এখানে ক্লাবগুলোর অনুশীলনের কোন ব্যবস্থা নেই। একাডেমিগুলোরও সুযোগ-সুবিধা সীমিত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধওমিক্রন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, বিশ্বকে প্রস্তুত থাকতে হবে : হু
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা