এ রায় আইনের শাসনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ

| শনিবার , ১১ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

এক অভূতপূর্ব রায়ের সঙ্গে এদেশের জনগণের পরিচয় ঘটলো। দুই বছর আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত; পাঁচজনকে দেওয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এ মামলায় অভিযুক্ত ২৫ আসামির সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর কামরুজ্জামান গত বুধবার এ রায় ঘোষণা করেন। আসামিদের সবাই বুয়েটের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের কর্মী। এ রায়কে এদেশের বেশিরভাগ মানুষ ইতিবাচক হিসেবে দেখেছে এবং বলেছে, তারা এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। আবরারের বাবা, এ মামলার বাদী বরকত উল্লাহ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এই রায়ে তিনি সন্তুষ্ট। এখন দ্রুত এই রায় কার্যকর হবে, এটাই তার প্রত্যাশা। অন্যদিকে আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, ‘এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট না। আমরা উচ্চ আদালতে যাব। মাস্টারমাইন্ড ও বড় ভাইদের নাম জাজমেন্টে আসা উচিত ছিল।’
রায় ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এ রায় আইনের শাসনের উৎকৃষ্ট এক উদাহরণ হয়ে থাকবে। আমার বিশ্বাস, এ রায় থেকে সকলে আইন নিজের হাতে কখনো তুলে না নেওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করবে। আসলে, সমাজে আইনের শাসনের খুব প্রয়োজন। আর এর বিকল্প নেই। একে সবার উপরে রাখতে হবে। আমরা সকলেই যেন আইন মানি এবং কেউ যেন নিজের হাতে তা তুলে না নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে গণরুম সিস্টেম, রাজনৈতিক প্রভাবে গেস্টরুম নির্যাতন ও মারধরের ব্যাপারে তিনি বলেন, যারা এরকম অপরাধ ঘটায় তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ সমস্যা সমাধানে কাজ করতে হবে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেছেন, আমরা আশা করছি আবরার হত্যা মামলার রায় যেন দ্রুত সময়ে কার্যকর হয়। আমার মনে হয়, বিচার বিভাগ সঠিকভাবে কাজ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আবরার হত্যা মামলার দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত রায় আমরা পেলাম। আবরার হত্যাকাণ্ডের বিচার সুষ্ঠুভাবে হয়েছে এবং অল্প সময়ের মধ্যে হয়েছে। ২৫ জন আসামির মধ্যে ২০ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এখন আমরা আশা রাখি যেন রায়টি দ্রুত সময়ে কার্যকর হয়। আমার মনে হয়, বিচার বিভাগ সঠিকভাবে কাজ করেছেন। তাদের উপর আমাদের আস্থা রাখতে হবে।’ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘যদি কেউ ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়, তাহলে এ শাস্তি ভোগ করতে হবে। আবরার হত্যা এবং ২৫ জন মেধাবী শিক্ষার্থীর সম্ভাবনাময় জীবন ঝরে যাওয়ার পেছনে প্রতিষ্ঠানের দায় কতটুকু সে বিষয়ে ভিসি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের দায় আছে কিনা, সেটি বিচার বিভাগ দেখবে। আর আমাদের কোনো গাফলতি ছিলো কিনা, তাও আমরা খতিয়ে দেখছি ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি।’
বেশিরভাগ মানুষ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এ ঘটনার পর থেকে এমন একটি রায়ের জন্য আমরা অপেক্ষায় ছিলাম। এই রায়ে বিচার বিভাগের ওপর আমরা সন্তুষ্ট। আবরার হত্যার পর পুরো বাংলাদেশ যেভাবে থমকে গেছে তাতে এই রায় খুব দরকার ছিল। ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর না ঘটে আমরা সেই দাবি জানাই। আমরা চাই রায় দ্রুত সময়ে রায় কার্যকর হোক। আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে কোনো আসামি যেন পার না পেয়ে যায়।’
অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খুবই তৎপর। তাঁরা নানা চাপে থাকা সত্ত্বেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে এমন একটি যুগান্তকারী রায় তাদেরকে প্রাণিত করবে। সাথে সাথে জনগণ আশ্বস্ত হচ্ছে এই ভেবে যে রাজনৈতিক পরিচয়ে বাস করলেও অপরাধ করলে কেউ পার পাবে না। অপরাধের বিচারে শিথিলতা হলে, কিংবা ন্যায় বিচার পাওয়া না গেলে দেশে অপরাধ আরও বাড়বে- তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই এই রায়কে দেশের সাধারণ মানুষ স্বাগত জানিয়েছে এবং দ্রুত সময়ে রায় কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে