এ.বি.এম আবুল কাশেম এমপি

স্মরণ :

সেলিনা আক্তার নিলু | সোমবার , ২৩ নভেম্বর, ২০২০ at ৪:৪২ পূর্বাহ্ণ

আগামীকাল ২৪ নভেম্বর আমার বাবা এ.বি.এম আবুল কাশেমের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৫ সালের এ দিনে ইহকালে ছেড়ে পরকালে চলে যান। যিনি ছিলেন একাধারে সীতাকুণ্ড আওয়ামী লীগের আজীবন সভাপতি। উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পাঁচবার নমিনেশন প্রাপ্ত হয়ে দুইবার ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে নির্বাচিত সংসদ সদস্য, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাপতি, প্যানেল স্পিকার, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাহক, মানুষ গড়ার কারিগর এবং কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয়সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহকর্মী হয়ে দেশের উন্নয়নের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখেন। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটি আন্দোলনে যিনি ছিলেন সক্রিয়।
বাবার রাজনীতির সংগ্রামী জীবনটা ছিল অন্যদের চেয়ে আলাদা, তাঁর ব্যক্তিত্ব এমনছিল যে, দলমত নির্বিশেষে তিনি সকলের শ্রদ্ধার পাত্র। দেশের লাইফলাইন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড হওয়াতে যে কোন আন্দোলন সংগ্রামের কর্মসূচির অগ্রণী ভূমিকা এ এলাকায় বেশি। ২০১৩ সালে অগ্নিসন্ত্রাসের জন্য সীতাকুণ্ডকে টার্গেট করে আমার বাবাকে নেতাকর্মীসহ ষড়যন্ত্রের জালে আবদ্ধ করায় বাবাকে খুব বেশি ব্যথিত করেছে। ২০০১ সালে বি.এন.পি জামাত জোটের যৌথবাহিনী কর্তৃক নিপীড়নের শিকার হয়ে এলাকা না ছেড়ে নির্যাতিত নেতাকর্মীদের এলাকার বাইরে থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থা করা এবং যারা জেল হাজতে ছিল তাদেরকে দেখাশুনা করা ও কোর্ট থেকে জামিন নেয়া বাবার প্রতিদিনের রুটিন হয়ে গিয়েছিল। ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় বাবা ছিলেন নেত্রীর সভার কাছাকাছি। সাবেক সাধারণ সম্পাদক জনাব আব্দুল জলিলের বাসায় সকাল ১০ টায় প্রস্তুতি সভায় যোগ দিয়ে বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া করে মূল মির্টিংয়ের কাছাকাছি যাওয়ার সাথে সাথে গ্রেনেড হামলা শুরু হয়। সেদিন ঢাকায় আমরাও ছিলাম। খুব কাছ থেকে নেতা কর্মীদের আর্তনাদ দেখেছি, কোন হসপিটালে ভর্তি নিচ্ছিল না বলে ঢাকার রাস্তা নেতাকর্মীদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যৌথবাহিনী কর্তৃক সমস্ত বাড়ি তল্লাশি করা এবং তাদের নজরবন্দি থাকার সত্ত্বেও সাবেক মেয়র চাচা এ.বি.এম মহিউদ্দীন চৌধুরীকে নিয়ে যে কূটকৌশল চলছিল এবং চট্টগ্রাম জেল থেকে রাতের আঁধারে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। আমার বাবা নেতাকর্মী এবং সীতাকুণ্ডবাসীকে সাথে নিয়ে রাস্তায় পাহারা বসিয়ে বাধা সৃষ্টি করে আন্দোলনকে বেগবান করেন। বাবার জীবনে প্রতিমুহূর্ত ছিল সংগ্রামের বীরত্বগাঁথা। সীতাকুন্ডবাসীর আবেগ, অনুভূতি দেখে পিতৃতুল্য মন্ত্রী মহোদয় ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন সাহেব গর্ব করে বলেছিলেন, “এই কাশেম মাস্টারকে অনেক উচ্চ পদে নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তিনি সীতাকুণ্ড ছাড়া কিছু বুঝেন না”।
বাবার স্মরণশক্তি ছিল প্রখর। তিনি যাকে একবার দেখতেন, যার নাম একবার শুনতেন আর কখনো ভুলতেন না। ছোট বড় সবাইকে নাম অনুযায়ী চিনে যেতেন। তাঁর আর একটি গুণ ছিল, তিনি একস্থানে বসে অন্যস্থানে নেতাকর্মীরা কী করতেন বলতে পারতেন এবং ঐখান থেকে নেতাকর্মীকে সতর্ক করতেন। সীতাকুণ্ডের প্রতিটি ঘরে তার পায়ের চিহ্ন রয়েছে। মানবসেবায় হল তাঁর ধর্ম। উপকূলীয় এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা বিশুদ্ধপানি, বেড়ি বাঁধ ইত্যাদি উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে গেছেন। পরিকল্পনা ছিল সীতাকুণ্ডে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার। সীতাকুন্ডবাসীর সেবার পদক হিসেবে একটি স্বর্ণের চাবি দিয়ে যে সম্মান জানানো হয়েছিল তা ছিল আমার বাবার কাছে জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্মান।
বাবার অসমাপ্ত সীতাকুণ্ডের উন্নয়নের বাকি কাজ আমার ভাই এস এম আল মামুন সমাপ্ত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সে সীতাকুণ্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি, সীতাকুণ্ড উপজেলার চেয়ারম্যান ও রাজনীতি ব্যক্তিত্ব হিসাবে দায়বদ্ধ হয়ে চালু রেখেছেন। পারিবারিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমেও বিভিন্ন কার্যক্রম করে যাচ্ছেন।
বাবার মৃত্যুবার্ষিকীতে আমার একটি অনুরোধ হলো এই প্রযুক্তির যুগে একাডেমিক শিক্ষার সাথে কারিগরি শিক্ষা ও ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলকভাবে এক প্ল্যাটফর্মে এনে অবিভাবকদেরকে একমুখী করার। তাহলে দক্ষ জনশক্তির তৈরির সাথে সাথে ধর্মীয় উগ্রতা কর্মে কার্যকরী ধর্ম নিরপেক্ষতা সৃষ্টি হবে। মহান রাব্বুল আলামিন বাবাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুক।
লেখক : মরহুমের বড় মেয়ে

পূর্ববর্তী নিবন্ধমনের আঁধার দূর করুন, আলোকিত মানুষ হোন
পরবর্তী নিবন্ধসাম্প্রতিক চট্টগ্রাম ও দৈনন্দিন টুকিটাকি