এ দেশ আমার অহংকার

প্রতিটি সূচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ

আজাদী ডেস্ক | শুক্রবার , ২৬ মার্চ, ২০২১ at ৭:২৪ পূর্বাহ্ণ

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দিয়েছিল একটি ভূখণ্ড, যার নাম বাংলাদেশ। সবুজ জমিনে রক্তিম সূর্যখচিত মানচিত্রের এ দেশটির আজ স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ আর্থসামাজিক প্রতিটি সূচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ। শোষণ-বঞ্চনার পথ পেরিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত যে দেশ ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র তকমা নিয়ে শুরু করেছিল যাত্রা; সে দেশ এখন বিশ্বের অনেক দেশের কাছেই উন্নয়নের রোল মডেল। এ দেশ সারা বিশ্বের কাছেই আজ বিস্ময়। এ দেশ আমার অহংকার।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এদিনটি বাংলাদেশের স্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর বছরও। এবার তাই উদযাপনেও যোগ হয়েছে ভিন্ন মাত্রা। এদিকে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে বাংলাদেশের প্রস্তুতির মধ্যেই উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়ার সুখবরটি আসে। এই মাহেন্দ্রক্ষণে জাতিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা ভারত ছাড়লেও মুক্তি মেলেনি বাংলার মানুষের। জীবন ছিল পাকিস্তানি শেকলে বাঁধা। সেই শেকল ভাঙার মন্ত্র দিয়ে বাঙালিকে জাগিয়ে তোলেন শেখ মুজিব। বাংলার মানুষ যাঁকে ভালবেসে নাম দেয় বঙ্গবন্ধু। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর বজ্রবাণীর পর ২৫ মার্চ রাতে যে বিভীষিকা নামিয়ে এনেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী; তা একটি প্রতিরোধ যুদ্ধের মুখোমুখি করে দেয় বাঙালিদের। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বেতারবার্তায় যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, সেই মুহূর্তে ঘোর অন্ধকার, হানাদারের গুলি আর বেয়নেটে ক্ষতবিক্ষত দেশ। এরপর চলে নয় মাসের তীব্র লড়াই। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত, অসংখ্য নারীর সম্‌ভ্রমের বিনিময়ে আসে সেই স্বাধীনতা। তারপর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি মুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বদেশে ফেরার মধ্য দিয়ে পূর্ণতা আসে স্বাধীনতার; পরম শ্রদ্ধায় তাঁকে জাতির পিতা হিসেবে বরণ করে নেয় নতুন দেশ। স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মধ্যে ষড়যন্ত্রের জালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ঘটে। এরপর বাংলাদেশের উল্টোযাত্রা শুরু হলেও কয়েক দশক বাদে ক্ষমতায় ফিরে বাংলাদেশকে পথে ফেরানোর দায়িত্ব নেয় স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ। নানা সূচকে অগ্রগতির পর বাংলাদেশের লক্ষ্য এখন উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশের কাতারে পৌঁছানো।
জাতিকে সেই লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ার প্রত্যয় জানিয়ে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আসুন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এ মাহেন্দ্রক্ষণে আমরা শপথ নিই- মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ধারণ করে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরতামুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব।’
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা পাওয়া বাঙালির গত ৫০ বছরের চলার পথ মসৃণ ছিল না। শত বাধা অতিক্রম করেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আর এই এগিয়ে যাওয়ার অফুরন্ত প্রাণশক্তি এ দেশের কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, প্রবাসী কর্মীরা। খেটে খাওয়া মানুষের শ্রমে-ঘামে গড়ে উঠছে অর্থনীতির ভিত। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার তথ্য বলছে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এই মাহেন্দ্রক্ষণে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ৪১তম অর্থনীতির দেশ। ২০৩২ সালে বিশ্বের বড় ২৫টি অর্থনীতির দেশের তালিকাতেও ঢুকবে বাংলাদেশ। সামাজিক বিভিন্ন সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশকেই ছাড়িয়ে গেছে এ দেশ। ১৯৭১ সালে যে দেশটির প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যপীড়িত ছিল, স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে সেই দেশটিতে দারিদ্র্যের হার নেমে এসেছে ২০ শতাংশের ঘরে।
প্রভাবশালী মার্কিন পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও ভিয়েতনামের উন্নয়নের বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের মিল আছে। তার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এই দেশগুলোও রপ্তানিভিত্তিক উন্নয়নের পথে হেঁটে আজ এত দূর গিয়েছে। আধুনিক ইতিহাসে দেখা গেছে, রপ্তানিমুখী উন্নয়নের বদৌলতে অতি নিম্ন আয়ের দেশও মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হতে পারে। বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার সফল অর্থনীতি হিসেবেও আখ্যা দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
অনেক প্রাপ্তি নিয়েও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়নন্তী এবার উদযাপিত হবে অন্যরকম ভাবে। এমন একটি সময়ে উদযাপন হবে, যখন বাংলাদেশসহ চারদিকে বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) থাবা। এর মধ্যেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌্যাপন উপলক্ষে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে দশদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি। গত ১৭ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে এ অনুষ্ঠান। বিদ্যমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে আয়োজিত এসব অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশী অতিথিরা অংশগ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন আজ চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআলো নিভিয়ে ভয়াল কালরাত্রি স্মরণ
পরবর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে ইউছুপ আলী জামে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন