চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বাস্তবায়নাধীন নগরীর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৫৪ ফুট প্রস্থের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ৫৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম নগরীর যানজট নিরসনে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। অনুমোদনের দেড় বছর পর ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজের উদ্বোধন করেন।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেছেন, আগামী ৫০ বছর পর চট্টগ্রাম শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা কেমন হবে, তা চিন্তা ভাবনা করে এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। পুরো প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মুরাদপুর থেকে ২০ মিনিটে বিমানবন্দর পৌঁছানো যাবে। বুয়েট, চুয়েটের বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে এটি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৫৫ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, বিদ্যমান পাহাড়গুলোর যেন ক্ষতি না হয়, সেজন্য লালখান বাজার থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত অংশে চার লেন থেকে কমিয়ে দুই লাইনের এক্সপ্রেসওয়ে করা হবে।
প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, ইতিমধ্যে প্রায় সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মধ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশে নির্মাণকাজ হয়েছে। প্রকল্পের ৩৭৯টি পিলারের মধ্যে প্রায় আড়াইশ পিলার বসেছে এবং চার শতাধিক গার্ডারও বসানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, পাহাড় কাটা নিয়ে ফৌজদারহাট বায়েজিদ লিংক রোডে যথেষ্ট সংকট তৈরি হয়েছে। প্রায় সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকা খরচ করেও রাস্তাটি পুরোদমে চালু করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নগরীর যান চলাচলে ব্যাপক গতিশীলতা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সন্নিকটস্থ টানেল রোড পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রতিদিনই চারটি থেকে আটটি পর্যন্ত গার্ডার স্থাপন করা হচ্ছে। পতেঙ্গা অংশ থেকেই এই গার্ডার স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রতিটি একশ’ থেকে একশ বিশ টন ওজনের এক একটি গার্ডার স্থাপন করতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। ৩৫ মিটার থেকে ৪৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা এক একটি গার্ডার। ৫৪ ফুট প্রস্থ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে প্রতিটি স্প্যানে (এক পিলার থেকে অপর পিলারের দূরত্ব) আটটি করে গার্ডার স্থাপন করা হচ্ছে।
লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত বলা হলেও মূলত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি বহদ্দারহাট থেকে শুরু হয়ে বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছে। বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার থেকে নেমে মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার ফ্লাইওভার পর্যন্ত আসার পর এখান থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত টানা চলে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে এই এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে। আবার নগরীর লালখান বাজার থেকে চট্টগ্রাম বন্দর ঘেঁষে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রতিটি জংশনে অর্থাৎ টাইগারপাস, আগ্রাবাদ, বারিক বিল্ডিং, নিমতলা, চট্টগ্রাম কাস্টম, চট্টগ্রাম ইপিজেড, কর্ণফুলী ইপিজেড, কাটগড়, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত মোড়সহ বিভিন্ন জংশনে যানবাহন উঠানামার জন্য ১৮টি র্যামের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এছাড়া টাইগারপাস, আগ্রাবাদ, কাস্টম, ইপিজেড এবং কাটগড়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ জংশনসমূহে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে বাস-বে নির্মাণেরও সুবিধা থাকছে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা গেছে।
২০১৭ সালের ১১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেয়া হয় এ প্রকল্পটি। চারটি পৃথকভাবে ভাগ করে এর কাজ চলছে। এর মধ্যে সী বিচ এলাকার টানেলের কাছ থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ে, সিমেন্ট ক্রসিং থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্যায়ে, সল্টগোলা ক্রসিং থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত তৃতীয় পর্যায়ে এবং চতুর্থ অংশে বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।
সিডিএ সূত্র জানায়, যে গতিতে কাজ এগিয়ে চলেছে তাতে ২০২৩ সালের মধ্যেই চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
লেখক : সিনিয়র রিপোর্টার, দৈনিক আজাদী