এটিএম শামসুজ্জামানের চিরবিদায়

| রবিবার , ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৭:২২ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের প্রবীণ অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান আর নেই। সেই ১৯৬০ এর দশক থেকে চার শতাধিক চলচ্চিত্রে বহু খল ও কমেডি চরিত্রকে অমর করে যাওয়া এই অভিনেতার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। গতকাল শনিবার সকালে সূত্রাপুরের বাসায় এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যু হয় বলে তার ছোট ভাই সালেহ জামান জানান। এটিএম শামসুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে গত বুধবারও তাকে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল। শুক্রবার বিকালে সেখান থেকে বাসায় ফিরেছিলেন তিনি। সকালে পরিবারের সদস্যরা নাস্তার জন্য ডাকতে গিয়ে বুঝতে পারেন, তার ঘুম আর ভাঙবে না। সালেহ জামান জানান, আছরের পর নামাজে জানাজা শেষে তার ভাইকে জুরাইন কবরস্থানে তার বড় ছেলে কামরুজ্জামান কবীরের পাশে সমাহিত করা হয়। খবর বিডিনিউজের।
দীর্ঘ ছয় দশকের ক্যারিয়ারে অভিনয়ের জোরেই নিজের নামটিকে একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে পেরেছিলেন এটিএম শামসুজ্জামান। তবে তিনি ছিলেন একাধারে পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, সংলাপকার ও গল্পকার। তার লেখা চিত্রনাট্যের সংখ্যা শতাধিক। অভিনয়ের জন্য আজীবন সম্মাননার পাশাপাশি পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এটিএম শামসুজ্জামান ২০১৫ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।
তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এক বিবৃতিতে বলেছেন, এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যু দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। বাংলাদেশে অসামপ্রদায়িক চেতনার বিকাশে তার অবদান মানুষ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার শোকবার্তায় বলেছেন, জনপ্রিয় এই শিল্পী তার অসাধারণ অভিনয়ের মধ্য দিয়ে দেশবাসীর হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।
শিল্পীর অভিযাত্রা : এটিএম শামসুজ্জামানের জন্ম ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে; বেড়ে উঠেছেন পুরান ঢাকায় দেবেন্দ্রনাথ দাস লেইনে। ঢাকার পগোজ স্কুলে তার বন্ধু ছিলেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের আরেক জনপ্রিয় অভিনেতা প্রবীর মিত্র। ম্যাট্রিক শেষে এটিএম শামসুজ্জামান ভর্তি হয়েছিলেন তখনকার জগন্নাথ কলেজে।
বাবা নুরুজ্জামান ছিলেন নামকরা আইনজীবী। তিনি চাইতেন ছেলেও তার মত আইন পেশায় আসুক। কিন্তু শেষে এটিএম শামসুজ্জামান চেয়েছিলেন লেখক হতে। সাংবাদিক রণেশ দাশগুপ্তকে লেখালেখিতে গুরু মানতেন, দৈনিক সংবাদে নিয়মিত তার লেখাও বের হত।
এক সাক্ষাৎকারে এটিএম শামসুজ্জামান জানান, শৈশব থেকেই মায়ের সঙ্গে সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখতে দেখতে হয়ে উঠেছিলেন সিনেমার পোকা। তখন থেকেই চলচ্চিত্রের প্রতি দুর্বলতা তৈরি হচ্ছিল। সেই তাড়না থেকেই তার অভিনয়ে আসা। অভিনয় শুরুর পর বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন বাবা। শুরুর দিকে ছিলেন নাটকের প্রমোটার। ১৯৬১ সালে উদয়ন চৌধুরীর বিষকন্যা সিনেমায় সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজের সুযোগ মিলে যায়। পরে নারায়ণ ঘোষ মিতার জলছবি সিনেমার জন্য লেখেন চিত্রনাট্য। সেই সিনেমাতেই অভিষেক ঘটে নায়ক ফারুকের।
সিনেমার পর্দায় এটিএম শামসুজ্জামানের অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৬৫ সালের দিকে। শুরুর দিকে মূলত কমেডি চরিত্রেই তাকে দেখা যেত। ১৯৭৬ সালে আমজাদ হোসেনের নয়নমণিতে খল চরিত্রে অভিনয় করে তিনি বোদ্ধাদের নজর কাড়েন। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি।
ওরা ১১ জন, স্লোগান, সংগ্রাম, সূর্য দীঘল বাড়ি, ছুটির ঘণ্টা, রামের সুমতি, রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত, পদ্মা মেঘনা যমুনা এবং গেরিলার মত সিনেমাতে এটিএম শামসুজ্জামান অভিনয় করেছেন নানা ভূমিকায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচলতি সপ্তাহে বিমানের বহরে যোগ হচ্ছে নতুন প্লেন
পরবর্তী নিবন্ধসরকার পতনের ভাবনা বিএনপির আকাশ কুসুম কল্পনা : কাদের