এছলামাবাদী প্রতিষ্ঠিত বরকল এস. জেড. হাই স্কুল সম্মিলন

অভীক ওসমান | শনিবার , ২১ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৮:৩২ পূর্বাহ্ণ

. বঙ্গবন্ধু, এছলামাবাদী, সুভাষ বসু

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নেতাজী সুভাষ বসুর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন মুজিব অধ্যয়নে আমরা জানি। মাওলানা এছলামাবাদী’র সাথে নেতাজীর সংযোগ মৎ রচিত শংখ উপাখ্যান (১৯৮৯) নাটকে গণায়ন নাট্য সম্প্রদায় দৃশায়িত করেছে (২০২২)

তাঁর ইতিহাস সূত্র নিম্নরূপ:

ভারত ছাড়’ ও আজাদ হিন্দ ফৌজের আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে তিনি গোপনে নেতাজীর সঙ্গে আরাকানের এক পার্বত্য অঞ্চলে সাক্ষাৎ করেন (১৯৪৩) বলে একটি সূত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঐ সূত্রে বলা হয়েছে, সত্তর বছর বয়স্ক এছলামাবাদী বাংলাদেশে সুভাষ বসুর বিপ্লবী কমিটির তখনকার সভাপতি ছিলেন (১৯৪২৪৩)। বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার জন্যে ১৯৪৪ সালের ১৩ অক্টোবর তিনি চট্টগ্রামে গ্রেফতার হন। গ্রেফতারের সময় তাঁর বাড়িতে বহু বে আইনী বই ও প্রচার পত্র পাওয়া যায় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯৪৪৪৫ সালে তাঁকে লাহোর সেন্ট্রাল জেলে আটক রাখা হয় এবং নানাভাবে নির্যাতন করা হয়।

তাঁর উল্লেখযোগ্য সমাজ সেবামূলক কাজের মধ্যে রয়েছে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুছলমান শিক্ষা সমিতি (১৯০৩), আনজুমানে উলামায়ে বাঙ্গালা (১৯০৩), আধুনিক চিন্তাচেতনার স্বদেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী উলেমাদের উদ্যোগে আনজুমানে উলামায়ে বাঙ্গালা গঠিত হয়এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন সুশিক্ষিত মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, মওলানা আকরম খাঁ, মৌলানা মনিরুজ্জামান এছলামাবাদী, . মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, মওলানা আবদুল্লাহ হেল বাকী প্রমুখ; ইসলাম মিশোন ও ১৯৩০এ চট্টগ্রামের কদম মোবারকে প্রতিষ্ঠিত এতিমখানা, বিভিন্ন মাদ্রাসা (নিউ স্কীম), এছালামাবাদ জাতীয় বিদ্যালয়, স্বগ্রামে শামসুজ্জামান বিদ্যালয় প্রভৃতি।

তিনি যে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলেন তাতে শিক্ষার সঙ্গে কারিগরি ট্রেনিং ও হাস মুরগির খামার নির্মাণ প্রকল্পসহ বাস্তব জীবনভিত্তিক শিক্ষার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত ছিল।

. এই ত্রয়ী বাঙালি অসাম্প্রদায়িক কিন্তু জ্ঞানপ্রজ্ঞা আলোকিত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। দক্ষিণ চট্টগ্রামের বরমা বরকল হচ্ছে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭১ পর্যন্ত নিরন্তর সংগ্রামী জনপদ। যাত্রা মোহন সেন, দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেন গুপ্ত’র বরমা’র জনপদে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত করার জন্য বলে গেছেন।

তথ্যটি ১৯৮৩ সালে বরমা কলেজ প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে জানতে পাই। ১৯৮৩ সালে বরমা ত্রাহি মেনকা (টি এম) জুনিয়র, ১৯২৫ সালে হাই স্কুল রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়। অনুমান করা হচ্ছে একই সময়ে মাওলানার পুত্র সাংবাদিক শামসুজ্জামান অকাল প্রয়াত হন। মাওলানা বরকল এলাকায় মক্তব প্রতিষ্ঠা করেন, এটাকে ১৯২৪ এ বরকল প্রাইমারি স্কুল হিসেবে দেখানো হচ্ছে। ১৯৪০ সালে সুচিয়া রাম কৃষ্ণ হাই স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৯ সালে ১ জানুয়ারি বরকল এস জেড (শামসুজ্জামান) হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

. ১৯৮৩ সালে বরমা কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। আমি এই কলেজের প্রথম একাডেমিক প্রফেসর ইন চার্জ পরে প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করি। ১৯৫২ সালে বরমা শেবন্দী ভাষা সৈনিক আবুল কাসেম বাংলাদেশে প্রথম ‘বাংলা কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। চট্টগ্রামে রহমতগঞ্জে শামসুদ্দিন মোহাম্মদ ইসহাক একটি বাংলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। পরে এটা বিলুপ্ত হয়ে যায়।

. বরকলের সোনা মিঞা চৌধুরী ও তাঁর বাড়ি নিয়ে আমার মধুর স্মৃতি রয়েছে। আমার মরহুম বাপজান মরহুম ফোরক আহমদ চৌধুরী সোনা মিয়ার বড় মেয়ে হোসনে আরা, সহপাঠি অকাল প্রয়াত ফরিদুল আলম চৌধুরীকে সকালে পড়াতেন। সাথে আমাকেও নিয়ে যেতেন। সোনা মিঞা ইউপি চেয়ারম্যান পরে এমপিএ হন। আমার পিতা সুন্দর হস্তকর্মে তাঁর পত্রাদি ড্রাফট করে দিতেন।

বরকল এস জেড হাইস্কুলে অবকাঠমো নির্মাণ করেছেন মরহুম সোনা মিয়া চৌধুরী। জানা যায় অন্যান্য ভূমি দাতাগণ হচ্ছেনরফিক আহমদ, ছৈয়দ আলী, নজির আহমদ, ফরিদুল আলম চৌধুরী, শোয়েব মো. সাইদুল আলম চৌধুরী। এর প্রধান শিক্ষক হচ্ছেন গগন চন্দ্র চক্রবর্তী (৫১) আবুল কাশেম, অমরেন্দ্র শেখর চৌধুরী, নগেন্দ্র লাল হোড়, আবদুল হাই, খাইরুল বাশার চৌধুরী, মমতাজউদ্দিন আহমদ, আবু তাহের চৌধুরী, হাসেমুর রশিদ, আবুল হোসেন, মধুসুদন বিশ্বাস, নুর মোহাম্মদ, সুনিল কান্তি ভট্টাচার্য, গণেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য, ব্রজহরি চৌধুরী, আবু তাহের, জাফর আহমেদ, বর্তমানে ফরহাদ হোসেন।

গভর্নিং বডির প্রেসিডেন্ট গণ হচ্ছেন১৯৯০ ইং থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুস শহীদ মাসউদ, আজিম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী (ইউএন ও) আবু জাফর, ফরিদুল আলম চৌধুরী, এম মোতালেব, মো. আইয়ুব আলী, আবদুল মোবিন, হাবিবুর রহমান (২০১২২০১৫), মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন চৌধুরী (জসীম) (২০১৫২১, ২০১৩) মোহাম্মদ ফেরদৌস ইসলাম খান (২০২১)

১৯৯৭ সালে উপজেলা শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক, ১৯৯৯ সালে উপজেলা সেরা স্কুল, ১৯৯৬ মহামান্য রাষ্ট্রপতি স্কাউট মেডেল লাভ করেন মঈনুদ্দিন জুয়েল, ২০১৬ সালে হোসাইন কামাল চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে তৃতীয় হন।এই স্কুল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্যারেড গ্রাউন্ড হিসেবে ইতিহাস হয়ে থাকবে। ১৯৮৬ সালে দক্ষিণ জেলা আওয়ালী লীগের সম্মেলন এই স্কুল মাঠে মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ও মরহুম গাউস মোহাম্মদ এর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয়।

এই স্কুল কৃতি ছাত্রদের অসংখ্য ব্যবসায়ী, রেমিটেন্স প্রেরক, বিচারক, শিক্ষক, প্রবাসী, শিক্ষক, ব্যাংকার, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সামরিক বেসামরিক ক্ষেত্রে অবদান রেখে যাচ্ছে। এই পুনর্মিলনী আনন্দের পাশাপশি স্কুলের সমৃদ্ধির জন্য একটা মিশন ও ভিশন সমৃদ্ধ প্রজন্ম গড়ে তুলবে।

লেখক : কবি, নাট্যজন; সাবেক সচিব, চট্টগ্রাম চেম্বার

পূর্ববর্তী নিবন্ধউচ্চ শিক্ষায় বিদেশে যাওয়ার আগে জেনে নিতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধহল্যান্ড থেকে