এক সপ্তাহে রোগী বেড়েছে প্রায় ১৭ হাজার

একদিনে শনাক্ত ৬৬৭৬, হার বেড়ে ২০.৮৮% ঢাকায় ওমিক্রন, বাইরে ডেল্টার প্রাধান্য

আজাদী ডেস্ক | মঙ্গলবার , ১৮ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:২৭ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার মধ্যে বাংলাদেশে এক সপ্তাহে কোভিড রোগী বেড়েছে প্রায় ১৭ হাজার। সেই সঙ্গে বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যা। সামনে রোগী আরও বাড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে তা সামাল দিতে এখন থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার ওপর জোর দিচ্ছেন আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন।
এদিকে গত একদিনে শনাক্ত হয়েছে ৬৬৭৬ জন। হার বেড়ে হয়েছে ২০.৮৮ শতাংশ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, ঢাকায় কোভিডে আক্রান্তদের ৬৯% এখন ওমিক্রনে সংক্রমিত। আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেছেন, ঢাকার বাইরে এখনও ডেল্টার প্রভাব বেশি। খবর বিডিনিউজের।
দেশে মহামারী পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এ বছরের শুরু থেকে রোগী বাড়ছে। ডেল্টার ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে গত বছরের মাঝামাঝিতে যে বিপর্যয়কর অবস্থা হয়েছিল, তা ফিরিয়ে আনার শঙ্কা জাগাচ্ছে ওমিক্রন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গতকাল গত ১০ থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে ২৪ হাজার ১১ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হওয়ার তথ্য জানায়। এর আগের সপ্তাহে আক্রান্ত হয়েছিল ৭ হাজার ২৩৪ জন। অর্থাৎ এক সপ্তাহে সংক্রমণ বেড়েছে ২৩১ দশমিক ৯ শতাংশ।
১০ জানুয়ারি একদিনে ২ হাজার ২৩১ জন রোগী ধরা পড়ার এক সপ্তাহ পর গতকাল একদিনে তার প্রায় তিন গুণ বেশি রোগী (৬,৬৭৬) শনাক্ত হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত এক সপ্তাহে ৪২ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে। তাদের ৭৩ দশমিক ৮০ শতাংশ, অর্থাৎ ৩১ জন টিকা নেননি। যে ১১ জন করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ৯ জন সম্পূর্ণ ডোজ নিয়েছেন, ২ জন নিয়েছিলেন প্রথম ডোজ। গত এক সপ্তাহে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন, ৭৫ দশমিক ৮ শতাংশের উচ্চ রক্তচাপ ছিল।
স্বাস্থ্যবিধি না মানা এবং ওমিক্রনের কারণে সংক্রমণ এত দ্রুত বাড়ছে বলে মনে করেন ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি বলেন, ঢাকায় ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে। বড় বড় শহরের পাশাপাশি সীমান্তের জেলাগুলোয় তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পশ্চিম বাংলার সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় ঢেউ আসবে। এজন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা দরকার।
তিনি বলেন, ওমিক্রন এখনও পর্যন্ত তেমন প্রাণঘাতী না হলেও রোগী বেশি হলে তা সামাল দেওয়া কঠিন হবে। সবকিছুতেই এর প্রভাব পড়বে। এটা কম সংখ্যক লোক সিভিয়ারলি আক্রান্ত হয়। কিন্তু ১০০ জনে ২ জন সিভিয়ার হলে ১০ হাজারে কতজন হচ্ছে, এটা হিসাব করতে হবে। হাসপাতালগুলোয় যদি ভিড় বাড়বে, তখন নানা সংকট দেখা দেবে। সেখানে ননকোভিড এবং কোভিড যারা সিরিয়াস রোগী তারা হয়তো হাসপাতালে ঢুকতেই পারবে না। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাবে।
এক দিনে হার বেড়ে ২০.৮৮% : ওমিক্রনের বিস্তারের মধ্যে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আর শনাক্তের হারে বাংলাদেশ ফিরে গেল পাঁচ মাস আগের পর্যায়ে। গতকাল একদিনেই রোগী বেড়েছে প্রায় দেড় হাজার, যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি। শনাক্তের হারও ২০ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত একদিনে ৩১ হাজার ৯৮০টি নমুনা পরীক্ষা করে ৬ হাজার ৬৭৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। রোববার ২৯ হাজার ৩০৫টি নমুনা পরীক্ষা করে ৫ হাজার ২২২ রোগী শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। একদিনে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল সর্বশেষ গত বছরের ১৮ আগস্ট, সেদিন ৭ হাজার ২৪৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল।
গতকাল নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশে, গত বছরের যা ১৩ আগস্টের পর সর্বোচ্চ। সেদিন শনাক্তের হার ছিল ২৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
গত একদিনে আরও ১০ জনের মৃত্যু হওয়ায় মহামারীতে দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৮ হাজার ১৫৪ জনে দাঁড়াল। সরকারি হিসাবে গত এক দিনে দেশে সেরে উঠেছেন ৪২৭ জন।
ঢাকায় ওমিক্রন, বাইরে ডেল্টার প্রাধান্য : ঢাকায় এখন যারা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছেন, তাদের ৬৯ শতাংশই নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল সচিবালয়ে জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকায় আক্রান্তদের নমুনা পরীক্ষা করে এই তথ্য জানা গেছে।

ঢাকায় ওমিক্রনে আক্রান্তের হার বেশি হলেও ঢাকার বাইরে এখনও ডেল্টার প্রভাব বেশি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম। গতকাল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্তের সামগ্রিক তথ্য বিশ্লেষণ করে আইইডিসিআর এই তথ্য জানিয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাধারণ ঠান্ডার সঙ্গে ওমিক্রনের পার্থক্য বোঝা যাবে এক উপসর্গে
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে ৫ মাস পর শনাক্তের সংখ্যা ফের ৭০০ ছাড়াল, মৃত্যু ৩