এক যে ছিলো রাক্ষস

আজহার মাহমুদ | বুধবার , ২৩ নভেম্বর, ২০২২ at ১০:২০ পূর্বাহ্ণ

প্রতিদিন ঘুমানোর আগে দাদুর কাছ থেকে গল্প শুনতে হয় জীবনের। গল্প শুনতে শুনতেই জীবন ঘুমিয়ে পড়ে। গল্প বলতে বলতে দাদু নিজেও অনেক সময় ঘুমিয়ে পড়তো। পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র জীবন গল্প পড়তে এবং শুনতে খুব আগ্রহী। আজকেও সে ঘুমানোর আগে দাদুকে পাগল করে তুলছে গল্প শুনানোর জন্য। জীবন তার দাদুকে বলে, দাদু আজকে একটা ভয়ংকর গল্প শোনাও। তার দাদু বলে, আচ্ছা। তবে ভয় পেলে আর বলবো না। জীবন বলে, ঠিক আছে দাদু।

জীবনের দাদু এবার গল্প বলতে শুরু করলো। এক ছিলো রাজা, আর এক রানী। তাদের সুখের রাজ্য ছিলো। প্রজারা তাদের অনুগত ছিলো। একদিন রাজার রাজ্যে এক বুড়ি এলো। থাকার জায়গা না থাকায় রাজা নিজের রাজপ্রাসাদে বুড়িকে স্থান দিলো। এভাবে দিন কয়েক যাওয়ার পর একদিন রাজা দেখতে পেল রাজার রাজপ্রাসাদের সৈন্য কমতে শুরু করছে। রাজাকে সেনাপ্রধান অভিযোগ করেন সেনারা পালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রাজা কোনো মতেই বিশ্বাস করছেন না এটা। কারণ রাজা তার সেনাদের ভালোবাসতেন। তাদের সকল চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করতেন। একদিন রাজা দেখছেন তার ৩০০ সৈন্য থেকে ২০ জন কম। রাজা মনে দুঃখ পেলেন। এরপর রাজা সৈন্যদের বেতন আরও বাড়িয়ে দিলেন।

এদিকে তবুও সৈন্য কমতে থাকে। সৈন্যরাও জানে না কীভাবে এটা হচ্ছে। রাতে সবাই ঘুমায়, সকালে উঠে দেখে কয়েকজন সৈন্য নাই। প্রতিদিন রাজার মন খারাপ দেখে বাকি সৈন্যরাও চিন্তিত। এরমধ্যে এক সৈন্য ঠিক করলো সে আজ রাত ঘুমাবে না। পাহারা দেবে রাজার সৈন্যদের। পালিয়ে যাওয়ার সময় জিজ্ঞেস করবে -কি এমন হয়েছে যে সে পালাচ্ছে। কিন্তু সেদিন রাতে সবই ঠিক ছিলো। সৈন্যটি তখন চিন্তা করল সে জেগে আছে এটা হয়তো সবাই খেয়াল করেছে। তাই পালায়নি। আজ রাতে সে ঘুমানোর ভান করে থাকবে। এবার দেখা গেল তাদের একজন সৈন্য উঠে দাঁড়িয়েছে। সে আস্তে আস্তে রাক্ষস হয়ে যাচ্ছে। তারপর একজন একজন করে সৈন্যকে গিলে গিলে খেয়ে ফেলছে। যে সৈন্যটি এসব দেখছে তার নাম কামাল।

যে রাক্ষসটা সৈন্য সেজে এসেছে তার নাম নিরব। সে রাজার সবচেয়ে বেশি পছন্দের সৈন্য। মাত্র ৫ মাস হচ্ছে এই সৈন্যটা এসেছে। প্রচন্ড সাহস তার। কিন্তু তার যোগদানের পর থেকেই একের পর এক সৈন্য গায়েব হয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধের ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছে বলে একটা গুজবও রটিয়ে দিলো রাজার কানে। তবে নিয়মিত এভাবে সৈন্য গায়েব হয়ে যাওয়ায় এটা নিয়ে সবাই চিন্তিত। এবার কামাল ধরে ফেললো এটা যে আসলে পালিয়ে যাওয়া নয়, রাক্ষসের পেটে যাওয়া।

কামাল কোনো ভাবেই রাজাকে এটা বলতে পারছে না। সে জানে এটা বললেই রাক্ষসটা তাকে খেয়ে ফেলবে। কামাল তার একজন সৈন্য বন্ধুকে সবকিছু খুলে বলে। এরপর তারা পরিকল্পনা করে রাত জাগতে শুরু করে। তখন থেকে আর কেউই গায়েব হচ্ছে না। এটা রাজাকে তার ওই সৈন্য বন্ধু বললো। রাজা তখন রাতে পাহারার আয়োজন করলো। অর্ধেক সৈন্য রাতে জাগবে অর্ধেক দিনে। যে সৈন্যটা রাজাকে রাতে জেগে পাহারা দেওয়ার পরামর্শ দিলো রাক্ষসটা তাকেও খেয়ে ফেললো।

কামাল বুঝে গেছে সৈন্যরা রাক্ষসের কথা জেনে গেলে তাদেরও বিপদ আছে। কামাল নিজেও তাই এসব কিছু না জানার ভান করে থাকে। রাত জেগে পাহারা দিলেও কীভাবে যেন একজন একজন সৈন্য গায়েব হয়ে যায়। কামাল তখন চিন্তা করলো এভাবে আর চলবে না। রাজাকে সত্য বলে দিতেই হবে।

প্রতিদিনের মতো আজও রাজা সৈন্যদের সাথে কথা বলতে এসেছে। তখন রাজাকে চিৎকার করে কামাল বলে, এখানে রাক্ষস আছে মহারাজ। সে সবাইকে খেয়ে ফেলছে। রাজা এটা বিশ্বাস করতে চায় না। রাজা বলেন, আমার রাজ্যে রাক্ষস! হা হা হা! এটা কী করে হয়! তখন কামাল রাজাকে বলে আমাকে অনুমতি দিলে আমি আপনাকে এখনই বের করে দিতে পারি কে এই রাক্ষস।

রাজা কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলে, ঠিক আছে তবে তুমি যদি প্রমাণ করতে না পারো তাহলে তোমার মৃত্যুদন্ড। কামাল এটা মেনে নিয়ে একজন সৈন্যকে আয়না নিয়ে আসতে বলে। বিশাল একটা আয়না নিয়ে সৈন্যটি হাজির হলো। এরপর একে একে কামাল সব সৈন্যদের আয়নার সামনে দাঁড় করালো। সবাইকে আয়নায় দেখা গিয়েছে। এবার নিরব নামের ওই সৈন্যোর পালা। সে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই ভয়ানক একটা চেহারা দেখা গেলো। সবাই ভয়ে পেছনে ছুটে গেলো। রাজাও ভয় পেয়ে গেছে।

এবার রাক্ষসটা কামালের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে গেলো। তার আসল চেহারায় সে ফিরে এসেছে। কামালকে গলা চেপে ধরেছে। আর বলে, আমি আজ তোদের সবাইকে খাবো।

গল্পটা বলার সময় বাদল ভয় পেয়ে গেলো। তার দাদু তাকে জিজ্ঞেস করছে, দাদু ভয় পেয়ে গেলে নাকি?
বাদল বললো, না দাদু। তারপর কি হয়েছে বলো।
বাদল ভয় পেলেও বেশ রোমাঞ্চ নিয়ে শুনছে। দাদু আবারও বলতে লাগলো গল্প…
রাক্ষসটা কামালকে খাবে এমন সময় রাজা বললো, থামো। তুমি কি চাও?
রাক্ষসটা বলে, আমি মানুষ চাই। আমি মানুষ খাবো।

রাজা বললো, ঠিক আছে। আমি তোমাকে একসাথে অনেকগুলো মানুষ দেব। তুমি কামালকে ছেড়ে দাও। নইলে তুমি একজনকেই শুধু খেতে পারবে।
রাক্ষসটা বলে, আমি বিশ্বাস করি না।

রাজা বলেন, আমি তোমাকে আমার রাজ্যের সমস্ত প্রজাদের দিয়ে দেব। বিশ্বাস না হলে এখনই তোমাকে কয়েকজন প্রজা দিচ্ছি।

রাক্ষসটা তখন খুশি হয়ে কামালকে ছেড়ে দিলো। রাজা তখন একটা ড্রাম নিয়ে এলো। বললো এই ড্রামে অনেকগুলো মানুষ রেখেছি। তুমি ড্রামে ঢুকে খাও। রাক্ষসটা যেই না ড্রামে ঢুকলো রাজা ডাকনা মেরে দিলো। এরপর থেকে রাক্ষসটা সেই ড্রামেই বন্দী আছে। সব সৈন্য এবং প্রজারা বেঁচে যায় রাক্ষসটার হাত থেকে। রাজা কামালের বুদ্ধির জন্য তাকে সেনাপতি করে দেয়। আর সবাই রাজার নামে জয়ধ্বনি দিচ্ছে। কারণ রাজার বুদ্ধিতেই রাজ্যের সবাই বেঁচে গেছে।

এদিকে গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়লো জীবন। এভাবেই রোজ রাতে দাদুর কাছ থেকে রাক্ষসের গল্প শোনে জীবন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅনাবাদি জমি আবাদের আওতায় আনতে সহযোগিতা দেওয়া হবে
পরবর্তী নিবন্ধশীতের ভয়