এক বছরে ১৬ হাজার যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত চট্টগ্রামে

৬৬ শতাংশই ফুসফুসে আক্রান্ত, ১৬১ জনের মৃত্যু

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৪ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৩০ পূর্বাহ্ণ

গত এক বছরে (২০২২ সালে) সন্দেহজনক মোট ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪৮৯ জনের কফ পরীক্ষায় ১৫ হাজার ৯৯১ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে চট্টগ্রামে। এর মধ্যে শিশু রোগী শনাক্তের সংখ্যা ৬৬৬ জন। আক্রান্তদের মাঝে চিকিৎসায় সুস্থতার হার ৯৭ শতাংশ। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

 

তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্তদের মধ্যে ক্যাটাগরি১ যক্ষা রোগীর সংখ্যা ১৪ হাজার ৯৩৩ জন এবং পুনরায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৫৮ জন। শনাক্ত মোট যক্ষ্মা রোগীর মধ্যে ফুসফুসে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ৫৪৫ জন। যা মোট শনাক্তের ৬৬ শতাংশ। আর ফুসফুসবহির্ভূত রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৪৪৬

জন। আক্রান্ত রোগীদের মাঝে এক বছরে ১৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামে। যদিও যক্ষ্মার পাশাপাশি এসব রোগীর অন্যান্য জটিলতাও ছিল। যার কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন। চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেনযক্ষ্মা রোগে আক্রান্তদের এখন চিকিৎসায় সুস্থতার হার অনেক বেশি। প্রায়

৯৭ শতাংশ। অর্থাৎ প্রাথমিক ভাবে শনাক্তের মাধ্যমে যথাযথ চিকিৎসায় এ রোগ থেকে সুস্থ হওয়া সম্ভব। আগে ‘ যক্ষ্মা হলে রক্ষা নাই’ এমন একধরণের কথা প্রচলন ছিল। যা গুজব ছাড়া আর কিছুই নয়। বর্তমানে বলা হয়ে থাকেযক্ষ্মা হলে যক্ষ্মা মেলে।

টিউবারকুলোসিস (টিবি) বা যক্ষ্মা শুধু ফুসফুসের ব্যাধি নয় উল্লেখ করে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, এটি বায়ুবাহিত ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক ব্যাধি, যেটা মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস জীবাণুর সংক্রমণে হয়ে থাকে। সরকারের আন্তরিকতার কারণে

দেশের হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে যক্ষ্মা রোগীরা বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে যক্ষ্মা রোগের পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসা সামগ্রীও রয়েছে। এ ব্যাপারে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। পরিবারে যক্ষ্মা রোগী থাকলে শিশুসহ অন্য সবাইকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সমন্বিত উদ্যোগের ফলে যক্ষ্মা নির্মূল সম্ভব।

ডা. সেখ ফজলে রাব্বির মতেমস্তিস্ক থেকে শুরু করে ত্বক, অন্ত্র, লিভার, কিডনি ও হাড়সহ শরীরের যেকোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গে যক্ষ্মার সংক্রমণ হতে পারে। যক্ষ্মা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে। ফুসফুসে যক্ষ্মার জীবাণু সংক্রমিত হলে টানা কয়েক সপ্তাহ কাশি ও কফের সাথে রক্ত যায়। এমন কোন অঙ্গ নেই যেখানে যক্ষ্মা হয় না।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার একটি অংশ জন্মগতভাবে যক্ষ্মা রোগের জীবাণু বহন করে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের এ রোগের ঝুঁকি বেশি। পরিবেশ দূষণ, দরিদ্রতা, মাদকের আসক্তি ও অপুষ্টি যক্ষ্মার হার বাড়ার অন্যতম কারণ। এ রোগের লক্ষণ দেখা দিলে ভয় না করে সঠিক সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তাহলে নির্দিষ্ট সময়ে এ রোগ পুরোপুরি সেরে যাবে। এখন যক্ষ্মা হলে যক্ষ্মা মেলে। নিয়মিত, ক্রমাগত সঠিক মাত্রায় ও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ওষুধ সেবন করলে যক্ষ্মা ভালো হয় জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, কোভিডকালীন সময়ে যক্ষ্মা কার্যক্রম সাময়িক ব্যাহত হলেও ২০২২ সালে সে অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত রেখে ২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতেগত এক বছরে যক্ষ্মায় আক্রান্তদের মাঝে ওষুধ প্রতিরোধী রোগী শনাক্ত হয়েছে ১১৯ জন। অর্থাৎ যক্ষ্মার সাধারণ বেশকয়টি ওষুধ আর এসব রোগীর চিকিৎসায় কাজ করে না। এ ধরণের ওষুধ প্রতিরোধী রোগীদের চিকিৎসা শুরু করতে হয় ফৌজদারহাটের বক্ষব্যাধি হাসপাতালে। সেখানে তাদের নতুন ওষুধ দেয়া হয়। গত ১১ বছরে (২০১১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত) এমন ওষুধ প্রতিরোধী রোগী শনাক্তের সংখ্যা ১ হাজার ৬০ জন।

যক্ষ্মা রোগীদের মধ্যে গত এক বছরে মোট ৬ হাজার ৩৯৬ জনের এইচআইভি পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন রোগীর এইচআইভি পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে নিশ্চিত করে জেলা সার্ভিলেন্স মেডিকেল অফিসার (ডিএসএমও) ডা. আবদুল্লাহহিররাফিঅঝোর আজাদীকে বলেন, গত বছরের শেষ দিকে পরীক্ষায় ওই পুরুষ রোগীর এইচআইভি শনাক্ত হয়। সীতাকুণ্ড এলাকার ওই রোগী বর্তমানে চমেক হাসপাতালের এআরটি’র তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন।

গতবছরের তুলনায় যক্ষ্মার পরিসংখ্যানে এবার সব সূচকই কম বলে জানিয়েছেন যক্ষ্মা রোগ সংক্রান্ত তথ্যউপাত্ত সংরক্ষণ ও তদারকির দায়িত্বে থাকা এ চিকিৎসক। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম জেলায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যার পাশাপাশি যক্ষ্মার সব সূচকই গতবারের তুলনায় এবার কমেছে।

এদিকে, ‘হ্যাঁ! আমরা যক্ষ্মা নির্মূল করতে পারি!’- প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ (২৪ মার্চ) পালিত হচ্ছে বিশ্ব যক্ষা দিবস। তবে ছুটির দিন হওয়ায় একদিন আগেই (গতকাল) দিবসটি উদযাপন করেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের রেসপরিটরি মেডিসিন বিভাগের উদ্যোগে গতকাল দিবসটি পালন করা হয়েছে। বর্ণাঢ্য র‌্যালি ছাড়াও যক্ষ্মা দিবস নিয়ে আলোচনার সভা ও সেমিনারের আয়োজন করে এসব হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভরণ-পোষণ দিচ্ছে না ছেলে, বাবার মামলা
পরবর্তী নিবন্ধবিএনপির মধ্যেই সংকট : তথ্যমন্ত্রী