একটু অসতর্কতার জন্য সব শেষ

শ্মশানে গিয়ে কাঁদছে স্বজন

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | রবিবার , ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়ায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে এক পরিবারের ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় তাদের স্বজনদের আহাজারি থামছে না। মৃতদেহগুলো সৎকারের পরদিনও শ্মশানে গিয়ে কাঁদতে দেখা গেছে স্বজনদের। উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহাজন পাড়ায় উত্তর পারুয়া সিবিএস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন শ্মশানে তাদের সৎকার করা হয়। কাছেই ছিলেন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত কাঙ্গাল বসাকের দুই মেয়ে অঞ্জনা শীল ও রীণা দেব। এ সময় তাদের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে মহাজন পাড়ায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৫ জন হলেন টেক্সিচালক খোকন বসাকের বাবা কাঙ্গাল বসাক (৭০), মা ললিতা বসাক (৬০), স্ত্রী লাকি বসাক (৩২), ছেলে সৌরভ বসাক (১২) ও মেয়ে সায়ন্তী বসাক (৬)। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে নিহত ৫ জনকে একই চিতায় পোড়ানো হয়। গতকাল ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয়। সেখানে যোগ দেন খোকন বশাকের ভগ্নিপতি এবং ভাগ্নে। এদিকে দগ্ধ খোকন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অবস্থার উন্নতি হয়েছে বলে জানা গেছে।

খোকন বসাকের বোন অঞ্জনা শীল ও রীণা দেব জানান, ঘটনার সময় তারা শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন। খবর পেয়ে সকালে ছুটে আসেন। স্বজনদের সৎকারের পর রাতে প্রতিবেশীর ঘরে ছিলেন।

তারা জানান, শনিবার ছিল তাদের ভাতিজি সায়ন্তী বসাকের জন্মদিন। বেঁচে থাকলে সে সাত বছরে পা দিত। জন্মদিন উপলক্ষে শুক্রবারের মধ্যে তাদের আসার জন্য বাবা তাগাদা দিয়েছিলেন। তারা দুপুরের দিকে আসবেন বলে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু এর আগেই চিরদিনের জন্য চলে গেল সবাই।

এ সময় দেখা যায়, আগুনে পুড়ে যাওয়া খোকন বসাকের তিন কক্ষের সেমিপাকা ঘরটি দেখতে আসছেন সাধারণ মানুষ। ঘরের সরঞ্জামসহ সবকিছু পুড়ে এখন ধ্বংসসূ্তপ। পরিবারের আয়ের অন্যতম উৎস সিএনজি টেক্সিও পোড়া।

স্থানীয় ইউপি সদস্য পিএম হৃদয় বলেন, একটু অসতর্কতার জন্য, ছোট্ট একটি ভুলের জন্য সব শেষ হয়ে গেল। পুরো পরিবারটি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। তিনি বলেন, চুলার আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছিল। বসতঘর লাগোয়া রান্নাঘরে অনেক লাকড়ি মজুত ছিল। এ কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তিন কক্ষের ঘরটিতে একটিই দরজা ছিল। সেখানে রাখা ছিল তার সিএনজি টেঙি। আগুন ছড়িয়ে পড়ার পর টেঙির গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে আগুনের তীব্রতা বেড়ে যায়। এ সময় কোনোরকমে প্রাণ বাঁচিয়ে খোকন বসাক বের হয়ে যান। পাড়ার সবার সাথে তিনি নিজেও আগুন নিভানোর চেষ্টা করেছিলেন। ভেতর থেকে তার পিতা-মাতা, স্ত্রী-সন্তানরাও বাঁচার জন্য আর্তচিৎকার করেছিল। কিন্তু তাদের বাঁচানো গেল না।

তিনি জানান, খোকন বসাকের বাবা ছিলেন সবজি ব্যবসায়ী। খোকন আগে ভ্যান চালাতেন। অভাব জয় করে সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করেছেন। একটি সিএনজি টেঙি কিনেছেন। বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী, দুই সন্তান নিয়ে সুখের স্বপ্ন বুনছিলেন। কিন্তু এখন সব শেষ হয়ে গেল।

চিকিৎসাধীন খোকন বসাকের চিকিৎসার ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান একতেহার হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন খোকন বসাকের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তার সাথে তার এক চাচাতো ভাই রয়েছেন। আশা করি তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমেয়ের মৃত্যুর খবরে শাশুড়ির লাশ রেখে ছুটে আসেন চিনু
পরবর্তী নিবন্ধনতুন শিক্ষাক্রমের ভুল ও অস্বস্তি জানাতে বললেন শিক্ষামন্ত্রী