একজন শিক্ষকের গল্প

সুমি ভট্টাচার্য | শুক্রবার , ২৮ জুলাই, ২০২৩ at ৬:০১ পূর্বাহ্ণ

পৃথিবীতে অনেক কিছুই গেছে বদলে, বলতে গেলে সবকিছুই। কাপড়চোপরআচারআচরণআসবাবপত্র সবকিছুই কিন্তু মানুষটা বদলায়নি একটুও। প্রতিদিন সকালে ঠিকমত স্কুলে যান আর রোজ বিকেলে ফিরেন বাড়ি, সারেন দুএকটি টিউশনি। লোকটা যেন আগের মতই হুবহু রয়ে গেছেন একদম সোজাসুজি। কোনো প্যাচপাচ নেই, যে যা বলবে তাই শুনেন। লোকটার কর্মক্ষেত্র একটি স্কুল। অনেক দিনের পুরোনো শিক্ষক, ভালই পড়ান বেচারা। তবুও সমাজ তাঁকে দিতে চায়নি কিছুই, দেয়নি উপযুক্ত পদমর্যাদা। লোকটাও হয়তো চাননি। তিনি জানেন, তিনি একজন শিক্ষক এই ব্যাস। অনেকে আবার প্রাইভেট পড়ে কয়েকমাসের টাকা না দিয়ে হয় গায়েব লোকটা খুঁজেনও না। কারণ তিনি জানেন, তিনি একজন শিক্ষক। সংসারে অভাব নিয়ত ছেলে মেয়েদের খাওয়া পড়া, মাসে সামান্য কয়টি টাকা। নেই কোনো আড়ম্বর

জীবন যাত্রায় বুড়িয়ে যাচ্ছেন লোকটা। তবুও তাঁকে বাঁচতে হবে ছেলেমেয়েদের গড়তে হবে। তাই লোকটা এখনো রোজ সকালে স্কুলে যান আর ফিরেন সেই বিকেলে। শিক্ষা ব্যবস্থায় গলদ ছাত্রছাত্রীদের নকল প্রবণতাএসবের শুভঙ্করী ফাঁকে তিনি দেননি ধরা কখনোবা অবৈধভাবে একটাকা কামাই করেননি কখনো। ক্লাস ফাঁকি দিতে জানেন না তাই পুরো ৪৫ মিনিট বকবক করেই পড়ান। ছাত্র পড়ানোর নামে একগাদা ছেলেপিলে নিয়ে তিনি কখনো খুলেননি– “শেয়ালপন্ডিতের পাঠশালা। আসলে লোকটা বড়ই সরল সোজাসুজি। অনেকে তাঁকে বলেন – “যুগের সাথে তাল মিলান।লোকটা শুনেন আর মৃদু হাসেন আসলে লোকটা কি যুগের যোগ্য নহে! আসে অসৎ প্রলোভন হরেক কিন্তু তার ফাঁদে পা দেননি কখনো লোকটা। কারণ তিনি জানেন, তিনি একজন শিক্ষক।

সমাজ লোকটাকে দেয়নি প্রতিপত্তি, দেয়নি মর্যাদা উপযুক্ত। প্রতিপদে আসে বাঁধা কিন্তু সব বাঁধা ডিঙ্গিয়ে এগিয়ে চলেন লোকটা তাঁর স্বকীয় ভঙ্গিতে। অভাববঞ্চনাগঞ্জনা, লোকটাকে পারেনা টলাতে তার নিজস্ব পথ থেকে। কারণ তিনি বন্দি তাঁর বিবেকের কাছে, কারণ তিনি একজন শিক্ষক।কিছু মানুষ বদলায় না পৃথিবীতে তার মধ্যে আমার দেখা শিক্ষকটিও একজন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা প্রসঙ্গে
পরবর্তী নিবন্ধআত্মপ্রেম