ঋষি মেধসের আশ্রম

শারমিন সাজেদা | বুধবার , ১৬ মার্চ, ২০২২ at ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ

আধুনিক দুর্গাপূজার সূচনা করেছিলেন রাজশাহীর বাগমারা অঞ্চলের রাজা কংস নারায়ণ। ইতিহাসে অসম সাহসী যোদ্ধা এবং শাসক কংস নারায়ণ মোগল শাসনামলে নিজ দায়িত্ব থেকে অবসর নিয়ে ধর্ম-কর্মে মনোযোগ দেন। তখন থেকেই তিনি দুর্গাপূজাকে একটি আড়ম্বরপূর্ণ উৎসবের রূপ দেন। কিন্তু প্রাচীন পুরাণ বিশেষত মার্কন্ডেয় পুরাণ ও দেবীভাগবত পুরাণ অনুযায়ী দেবী দুর্গার আবির্ভাব হয় চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার কড়লডাঙ্গা গ্রামের দুর্গম পাহাড়ে অবস্থিত ঋষি মেধসের আশ্রমে। ঋষি মেধস বা মেধস মুনি রাজা সুরথ ও বৈশ্য সমাধিকে প্রথম দুর্গোৎসবের পাঠ দিয়েছিলেন। রাজা সুরথ ও বৈশ্য সমাধি নিজেদের দুর্ভাগ্য থেকে মুক্তি লাভের আশায় গুরু মেধসের পরামর্শে চট্টগ্রামের মেধসের এই আশ্রমে মাটি দিয়ে দুর্গা প্রতিমা নির্মাণ করেন এবং পৃথিবীতে প্রথম দুর্গাপুজোর সূচনা করেন। কিন্তু দীর্ঘকাল এই স্থানটি কালের অন্ধকারে লুকিয়ে ছিল। এটি সম্পর্কে কেউ অবগত ছিল না। সর্বপ্রথম বরিশালের সাধক চন্দ্রশেখর তথা শীতলচন্দ্র, সবশেষে ‘বেদানন্দ স্বামী’ হিসেবে পরিচিতি প্রাপ্ত একজন পণ্ডিত চন্দ্রনাথ পাহাড়ে অবস্থানকালে এই গুপ্ত স্থানটি সম্পর্কে অবগত হন। তাঁর মতে, তিনি স্বপ্নে শিব কর্তৃক আদিষ্ট হন। তারপর তিনি বহুদূর, বহু পাহাড়-পর্বত, নদী-খাল-বিল পেরিয়ে এই স্থানে পদার্পণ করেন এবং আশ্রমটি প্রতিষ্ঠিত করে একে জনসমক্ষে তুলে ধরেন। এটি হিন্দু বাঙালিদের অন্যতম বৃহৎ তীর্থস্থান। অনুমান করা হয়, এই স্থান থেকেই সমগ্র বাংলায় বাঙালিদের মধ্যে ও পরে সমগ্র ভারতে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে দুর্গাপূজো জনপ্রিয়তা লাভ করে।
আশ্রমের বিভিন্ন পাহাড়চূড়ায় এবং মাঝখানে চণ্ডী মন্দির, শিব মন্দির, সীতা মন্দির, তারা কালী মন্দিরসহ ১০টি মন্দির রয়েছে। রয়েছে সীতার পুকুর নামে পরিচিত একটি পুকুর। আশ্রমের প্রধান ফটক দিয়ে ওপরে ওঠার দীর্ঘ সিঁড়ি রয়েছে। প্রায় ১৪০টি সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠলে মেধস মুনির মন্দির চোখে পড়বে। এই মন্দিরের পরই দেবী চণ্ডীর মূল মন্দির।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রসঙ্গ চাক্তাই খাল
পরবর্তী নিবন্ধআত্মহত্যা সমাধান নয় বরং মহাপাপ