ঊনসত্তরে মিছিলরত বেঁচে থাকা শিশুটি মর্যাদা পাক

জোনাকী দত্ত | বুধবার , ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:২১ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ড সৃষ্টির পেছনে কত নেপথ্যে থাকা বীর এখনো বাংলাদেশের আনাচেকানাচে অবহেলায় জীবনযাপন করছে তা অনেকেই হয়তো জানে না। ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক মুক্তি সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯৬৯ এর ২৪ জানুয়ারি হরতালের মধ্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আইয়ুব খান সরকার বিরোধী আন্দোলন রূপ নেয় তীব্র এক গণঅভ্যুত্থানে। সেই মিছিলে কয়েকজন কিশোরের সাথে সম্মুখ সারিতে ছিল এক ১০ বছরের পথশিশু। খালি পায়ে, হাফপ্যান্ট পরা, গেঞ্জি কোমরে বেঁধে, মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে স্লোগান দিয়েছিল সেই ছোট্ট শিশু। সেই প্রতিবাদী ছবি ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন আলোকচিত্রী দৈনিক সংবাদ এর রশিদ তালুকদার। ইতিহাসের অংশ হয়ে উঠে এই ছবি।

গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী তার ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজে শিশুটির পরিচয় তুলে ধরেছিলেন। তার তথ্য মতে জানা যায় সেই প্রতিবাদী শিশুটির নাম মোহাম্মদ হোসেন আলী। সেই সূত্র ধরে শিশুটির খোঁজ পাওয়া যায়। ৬৪ বছর বয়সী শেখ হোসেন আলীর মুখ থেকে জানা যায় বঙ্গবন্ধু তাকে পালোয়ান বলে ডাকতেন। ১৯৬৯ এ ২৪ জানুয়ারি জগন্নাথ কলেজের দিক থেকে ছাত্রলীগের একটা মিছিল ‘জেলের তালা ভাঙবো, মুজিব ভাইকে আনবো’ বলে স্লোগান দিয়ে আসছিল। তখন সেই মিছিলে উনিও যোগ দেন। উনি তখন ফুলবাড়িয়া স্টেশনে থাকতেন। ‘জয় বাংলা’ বলে হোসেন আলী তখন স্লোগান দিচ্ছিলেন। মিছিলে তখন গুলির আওয়াজ শোনার পর তিনি দৌড়ে গিয়ে রেসকোর্স ময়দানে ঢুকে গেলেন।

হোসেন আলীকে কাঙালি হিসেবে জিন্নাহ আ্যাভিনিউর অনেকে চিনতো। ১৯৭২ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান ফেয়ারে রশীদ তালুকদারের তোলা ’৬৯ এর পথ শিশুর ছবি ও বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের ছবি স্টলের প্রবেশ মুখে প্রদর্শন করা হয়েছিল। এই ছবি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ২০১০ সালে প্রথম বাংলাদেশি ফটোসাংবাদিক হিসেবে রশীদ তালুকদার পাইওনিয়ার ফটোগ্রাফার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। হোসেন আলীর গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার চান্দের কান্দিতে। বাবা মফিজ উদ্দিন ও মা ফাতেমা বেগমের একমাত্র সন্তান তিনি। ফুলবাড়িয়া টার্মিনালে পথশিশু হিসেবে শৈশব কাটে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি আওয়ামীলীগের অফিসের নিচে থাকতেন। ১৯৭৭ সালে ২২ বঙ্গবন্ধু আ্যাভিনিউতে টোকানো কাগজের ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৮৮ সালের বন্যায় দোকান তলিয়ে গেলে আবার নিঃস্ব হয়ে পড়েন। অনেকদিন রিঙা চালানোর পর এখন নৈশ প্রহরীর কাজ করেন। উনার তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে মান্ডার কদমতলী এলাকার ঝিলপাড়ে বেকার ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করেন। কিছুদিন ধরে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হয় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মিছিলরত সম্মুখ সারিতে যে শিশুটি হাত উঁচিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন তিনি বেঁচে আছেন। আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে কত নাম জানা অজানা বীর নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংগ্রামে নেমেছেন তারা অনেকে বেঁচে থেকেও সবার অন্তরালে রয়েছেন। তাই আমরা সচেতন বাঙালি হিসেবে চাই ওই বেঁচে থাকা শিশুটি মর্যাদা পাক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএকুশের চেতনা জাগরুক থাকুক
পরবর্তী নিবন্ধস্মরণ: জননেতা মোছলেম উদ্দিন আহমদ