উপজেলা নির্বাচনেও কোনো অনিয়ম হলে কঠোর সিদ্ধান্ত

চট্টগ্রামে মতবিনিময় সভায় ইসি আনিছুর রহমান

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ at ৭:৩২ পূর্বাহ্ণ

নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনিছুর রহমান বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারের ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হলে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে কুন্ঠাবোধ করা হবে না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদে যে নির্বাচন করেছি সেই নির্বাচনের চেয়ে নিচে নামার কোনো সুযোগ নেই। আমাদেরকে ওই সময় যেমন দেশের মানুষ দেখেছে, আন্তর্জাতিক মহল যেমন দেখেছে, এখনও কিন্তু দেখবে। এই নির্বাচনকেও দেখবে। নতুন সরকারের আওতায় কিভাবে নির্বাচন হচ্ছে সেটি সবাই দেখবে।

গতকাল বুধবার সকালে নগরীর পিটিআই মিলনায়তনে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলার রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, আইন শৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মন্ত্রীএমপিদের আত্মীয়স্বজনদের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর যে নির্দেশ আওয়ামী লীগ দিয়েছে, তা ‘আইনের মধ্যে পড়ে না’ বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান। তিনি বলেন, নির্বাচন করার অধিকার সবারই আছে। যার বয়স, ১৮ বছরের বেশি, যিনি ভোটার হয়েছেন, এরকম প্রত্যেকেরই নির্বাচন করার অধিকার আছে।

তিনি বলেন, একটা বড় দল যারা এখন শাসক দল হিসেবে পরিচিত, তাদের দলীয় প্রধান, তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং ওই দলের সাধারণ সম্পাদক তিনিও বলেছেন, এমপিমন্ত্রীদের অবস্থান বিষয়ে বা তাদের আত্মীয়স্বজনের প্রার্থিতা বিষয়ে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। যদিও এটা আইনের মধ্যে পড়ে না। এটা তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আমরা কিন্তু এটা বলিনি। কারণ এটা বলতে পারি না।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলামের সভাপতিত্বে ও জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি নুরেআলম মিনা, বিজিবি রিজিয়ন কমান্ডার মো. আজিজুর রহমান, ডিজিএফআই শাখা অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার, আনসার ও ভিডিপি উপমহাপরিচালক মো. সাইফুল্লাহ রাসেল, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, জেলা পুলিশ সুপার এস.এম শফিউল্লাহ, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী, সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা, সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সকল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ও জেলা পর্যায়ের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ সভায় উপস্থিত ছিলেন।

ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ইসি মো. আনিছুর রহমান বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মত এ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী থাকছে না এবং দলীয় প্রতীক দেওয়া হচ্ছে না। কাজেই নির্বাচন প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ হবে। আশা করছি ভোটারের সংখ্যাও বাড়বে। এ নির্বাচনে কোনো ধরনের অনিয়ম গ্রহণযোগ্য হবে না। কোনো কেন্দ্রে যদি ভোট কারচুপি বা অনিয়ম হয় তবে সে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসার সাথে সাথে ভোট বন্ধ করে দিতে পারবে। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আইনের স্বপক্ষে থেকে যে কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃক্সখলা বাহিনী সর্বদা আপনাদের পাশে থাকবে।

তিনি বলেন, গত নির্বাচন একই দিনে সম্পন্ন হলেও এবারের নির্বাচনে ব্যবস্থাপনার সুবিধা ও কৃচ্ছ্রতাসাধনের লক্ষ্যে চার ভাগে নির্বাচন শেষ করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ৮ মে ১৫০টি উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাকি জেলাগুলোতে ২১ মে, ২৯ মে ও ৫ জুন নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। তবে বান্দরবান জেলার তিনটি উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়েছে। দুর্গম, পাহাড়ি ও দ্বীপ এলাকাগুলোতে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ভোটের আগের দিন নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছে দেয়া হবে এবং বাকি জেলাগুলোতে ভোটের দিন সকাল ৮টার আগে ব্যালট পেপার পৌঁছে দেয়া হবে এবং বিকাল ৪টায় ভোট গ্রহণ শেষ হবে। আসন্ন উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচনে ৯টি জেলার প্রতিটি উপজেলায় ইভিএম’র মাধ্যমে এবং বাকি জেলাগুলোর উপজেলা পরিষদে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে নির্বাচন সম্পন্ন হবে।

ইসি আনিছুর রহমান নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের একটাই চাওয়ানির্বাচনকে সুন্দর করতে হবে। যেখানেই কোনো অনিয়ম হবে, কারচুপি বা অন্যায় কার্যক্রম হবে সেখানে প্রিজাইডিং অফিসার ব্যবস্থা নিতে পারবেন। কারণ প্রিজাইডিং অফিসার কেন্দ্রের সব দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি ইচ্ছে করলে নির্বাচন বন্ধ করতে পারবেন। আপনারা ভোটের দিন যে যেখানে থাকবেন, সর্বময় ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন। তবে তা আইনের স্বপক্ষে। এতে যদি কোনো রকমের বিপদগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, আমরা আপনাদের পাশে আছি। সরকার প্রধান থেকে শুরু করে কেউ চায় না নির্বাচন খারাপ হোক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বক্তব্যে বিষয়টি উল্লেখও করেছেন। ভোট সুন্দর ও সুষ্ঠু করার জন্য যা যা দরকার সব করবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধথানচিতে গাড়িতে ফের গুলি ছুড়েছে কেএনএফ
পরবর্তী নিবন্ধএকদিনে তিন দুর্ঘটনার মুখোমুখি ৩টি ট্রেন