উন্মোচিত হোক নতুন দিগন্ত, পূরণ হোক ট্রেনে কক্সবাজার যাওয়ার স্বপ্ন

| বুধবার , ২৫ মে, ২০২২ at ৬:৪৮ পূর্বাহ্ণ

ট্রেনে করে কক্সবাজারে যাওয়ার স্বপ্ন অনেক দিনের। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন দিনদিন উন্নত হচ্ছে, তেমনি চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে রেললাইন নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও শত বছরের পুরোনো হলেও তা অগ্রসর হচ্ছে। জানা যায়, ৯০ বছর আগে রেললাইন নির্মাণ করা হলেও তা দোহাজারীতে গিয়ে থেমে যায়। বর্তমান দোহাজারী-কক্সবাজার ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য, পর্যটননগরী কক্সবাজারে যাতায়াত সহজ করা। পাশাপাশি মিয়ানমারসহ ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে বাংলাদেশকে যুক্ত করা। এখন সেই স্বপ্ন অল্প কিছু দিনের মধ্যে বাস্তবায়িত হচ্ছে। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, আগামী বছরের (২০২৩ সাল) জুন মাসেই ঢাকা থেকে সাগরকন্যা কক্সবাজারে যাত্রীরা ট্রেনে করে যেতে পারবেন। গত রোববার রেল ভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতুতে সিগন্যালিং ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার চুক্তিসই অনুষ্ঠানে তিনি এ তথ্য জানান। মন্ত্রী বলেন, আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন যে, ২০২৩ সালের জুন মাসেই ট্রেনে ঢাকা থেকে সাগরকন্যা কক্সবাজারে যেতে পারবেন।

পত্রিকান্তরে ইতোমধ্যে প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়, বর্তমান সরকার কক্সবাজারকে পরিপূর্ণ পর্যটন নগরী হিসাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েই কাজ করছে। এরই অংশ হিসাবে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ডাবল লাইনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। আগামী ডিসেম্বরে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রেলপথ মন্ত্রণালয়। গত মার্চ পর্যন্ত দোহাজারী-কক্সবাজার ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে ৬৯ শতাংশ। ফলে ডিসেম্বরের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আগামী বছরের জুনে ট্রেন চালুর লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধিরও প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্পটি সরকারের অগ্রাধিকার (ফাস্ট ট্র্যাক) প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। এই পথে রেললাইন চালুর প্রাথমিক লক্ষ্য পর্যটক। তাই পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারে নির্মিত হচ্ছে দেশের আইকনিক রেলস্টেশন। কক্সবাজারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে স্টেশনটি হচ্ছে ‘ঝিনুকের’ আকৃতিতে। পর্যটকেরা চাইলে নিজেদের লাগেজ স্টেশনের লকারে রেখে সমুদ্রস্নানে চলে যেতে পারবেন। এতে হোটেল ভাড়া না করে রাতের ট্রেনে ফিরে আসার সুযোগ পাবেন পর্যটকেরা।

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকান্তরে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত প্রায় ৪৫ কিলোমিটার রেলপথ সিঙ্গেল লাইন রয়েছে। এ অংশটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংস্কার করে চলমান প্রকল্পের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। যাতে সরাসরি ঢাকা-কক্সবাজার পর্যটন ট্রেন পরিচালনায় কোথাও বিঘ্ন না ঘটে বা গতি কমাতে না হয়। সরাসরি এ ট্রেনটি ঢাকা-কক্সবাজার চলাচলে সাড়ে ৪ ঘণ্টার মতো সময় লাগবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

ট্রেনে করে চড়ে কক্সবাজার ভ্রমণ, এটি কল্পনারও অতীত ছিল। এখন রেলপথ ও স্টেশন নির্মাণ কাজ দেখে লোকজন অবাক হওয়ার পালা। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সবসময় যানজটে পড়তে হতো। যাত্রীরা বিরক্ত হতেন। ট্রেন চালু হলে তাঁরা স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারবেন।

কক্সবাজারকে নিয়ে বর্তমান সরকার বড় রকমের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতি সম্প্রতি বলেছেন, তার সরকার ইতোমধ্যে কক্সবাজারে অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এরমধ্যে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, শাহপরীর দ্বীপ, সেন্ট মার্টিনসহ বিভিন্ন দ্বীপাঞ্চলের উন্নয়ন উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন, আজকে মহেশখালীতে গভীর সমুদ্র বন্দর যেমন তৈরি হচ্ছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে ওঠায় বিনিয়োগ হচ্ছে। একে একটি ‘ডিজিটাল আইল্যান্ড’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এই মহেশখালীর উন্নয়ন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিস্ময়ের সৃষ্টি করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। পাশাপাশি টেকনাফে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে এর সমুদ্র সৈকতও যাতে আন্তর্জাতিক মানের হয় সে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
ঢাকা-কক্সবাজার- নতুন এই রেলপথ নির্মিত হলে ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজারে দ্রুতগতির ট্রেন চলতে পারবে। রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, ঢাকা-কক্সবাজার রুটে সরাসরি ট্রেন চালুর প্রতিশ্রুতি রয়েছে বর্তমান সরকারের। এটি সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশাও। সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প। তাই বলা যায়, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশ নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে