উন্নয়নের পাশাপাশি নাগরিক সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখতে হবে

| মঙ্গলবার , ৬ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নাগরিক সমস্যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়।
শনিবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে যেসব বিষয় উঠে আসে, তার মধ্যে রয়েছে বেকারত্ব বড় সমস্যা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাপ, নারীর অংশগ্রহণ দৃশ্যমান হলেও নারী ও শিশু নির্যাতন বৃদ্ধি, শিক্ষার হার বাড়লেও প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার অভাব, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ডিজিটাল মাধ্যম, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিরূপ প্রভাব এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়।

অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, ১৫ বছর ধরে একই ধরনের নাগরিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা হলেও সমাধান হচ্ছে না। তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, শিক্ষার হার বাড়ছে, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চলা নাগরিক সমস্যাগুলোর সমাধান হচ্ছে না। এর মানে পুরো সিস্টেমেই (ব্যবস্থাপনায়) সমস্যা আছে। তিনি আরও বলেন, দেশে গত কয়েক বছরে উন্নয়ন হয়েছে-এটি অস্বীকার করা যাবে না। তবে পাহাড় ও সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, দলিত, হিজড়া, চা-বাগানের শ্রমিকদের সমস্যাগুলো অনেক বছর ধরে আলোচনা হচ্ছে, সবই চিহ্নিত সমস্যা।

স্থানীয় মাস্তান, ক্ষমতাশালীরা কেন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জনগণের জমি দখল করবে? এসব সমস্যার সমাধান তো প্রয়োজন। এটি বদলাতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রয়োজন। সেখানে প্রার্থীদের নির্বাচন করতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে না। পেশিশক্তির ব্যবহার করতে হবে না। সাধারণ প্রার্থীরা নির্বাচিত হতে পারবেন। একই অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামও প্রায় একই বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, সরকার ধারাবাহিকভাবে কাজ করছে বলেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ করছে। এখনো নানা ক্ষেত্রেই সমস্যা আছে, তা স্বীকার করতেই হবে। দুর্নীতিমুক্ত, সুশাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে-এমনটা বলা যাবে না। সমালোচনার জায়গা থাকলেও উন্নয়ন হয়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
আসলে বক্তাদের বক্তব্য থেকে এটাই বোঝা যায় যে, উন্নয়নের পাশাপাশি নানা খাতে সমস্যা আছে, এটি বাস্তবতা। সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে যেসব সমস্যার কথা বলা হয়েছে, সেগুলো তো নাগরিকের অধিকার। এগুলো তাদের প্রাপ্য।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, নাগরিক সমাজের প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও স্বাধীনতার বহিঃপ্রকাশ, যা তাদের পরিচয়ের মধ্যেই গ্রথিত রয়েছে। এসব সংগঠন কোনো একক ও স্বতন্ত্র সত্তার প্রতিনিধিত্ব করে না; বরং তা অনেক কণ্ঠের সমাবেশ, যা মতানৈক্যের সময় অভিন্ন প্রশ্নে সবাইকে এক জায়গায় মিলিত করে জাতিগত, ভাষাগত, ধর্মীয় এমনকি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পরিবর্তনের পক্ষে মত দেয়। নাগরিক সমাজ জনগণের ভাবনার ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করে, যেখানে লোকজন বিভিন্ন মত, আলোচনা ও সংস্কারের কথা বলে, যা হতে পারে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সৃজনশীলতা ও সমাধানের উৎস।

একজন নাগরিককে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদে পরিণত করতে সামাজিক কিছু দায়িত্ব আছে আমাদের প্রত্যেকেরই। জীবনমুখী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রেরণা জোগানো। যেখানে নিজের পাশাপাশি অন্যের কর্মসংস্থান সৃষ্টিও যেন সম্ভব হয়। চাপ প্রয়োগ না করে বাস্তবজীবনে প্রযুক্তির ব্যবহার করার মাধ্যমে নাগরিককে তার সৃজনশীল ক্ষমতার প্রকাশে সর্বাত্মক সাহায্য করতে হবে। এসব সামাজিক কাজ করার মাধ্যমে সুনাগরিক গড়া সম্ভব।

এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বঞ্চিত হচ্ছে বেশি। উন্নয়ন সুষমভাবে সবার কাছে পৌঁছাতে হবে। আগামী দিনের যে নির্বাচনী পরিস্থিতি সামনে আসছে, তা নিয়ে মানুষের মনে শঙ্কা আছে। উন্নয়ন, জীবন-জীবিকা যেন বিঘ্নিত না হয়, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যেন বিঘ্নিত না হয়। জনগণের মনে শঙ্কা ও আশাবাদ-দুটিই রয়েছে।

অভিজ্ঞমহল বলেন, জবাবদিহির অভাবে উন্নয়নের নানা ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। তাঁরা বলেন, অর্থনৈতিক, আঞ্চলিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক–চার পর্যায়ের প্রান্তিকতায় আটকে আছি আমরা। সব পর্যায়ের প্রান্তিকতা দূর করতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে অনেক অনিয়ম হয়। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় দায়িত্বশীল নাগরিকদের ভূমিকা রাখতে হবে, দরকার সামাজিক প্রতিরোধ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইসলামি ধারার ব্যাংককে ধার দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক
পরবর্তী নিবন্ধহোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন গণতান্ত্রিক দেশ গড়ার রূপকার