ইসলামি ধারার ব্যাংককে ধার দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক

| মঙ্গলবার , ৬ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

শরীয়াহভিত্তিক ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা নিতে পারবে। এজন্য নতুন একটি ব্যবস্থা চালু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যেটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইসলামিক ব্যাংকস লিক্যুইডিটি ফ্যাসিলিটি (আইবিএলএফ)।’ গতকাল সোমবার থেকেই বিশেষ এ সুবিধা চালুর কথা এক সার্কুলারে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। খবর বিডিনিউজের। এর মাধ্যমে সাধারণ ব্যাংকগুলোর রেপো বা বিশেষ রেপোর আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ধার নেওয়ার মতো সুবিধা ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর জন্যও চালু করা হলো। সার্কুলারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইবিএলএফের জন্য একটি নীতিমালাও ঠিক করে দিয়েছে।

এর আওতায় শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো নির্দিষ্ট মেয়াদে টাকা নিতে পারবে। এই তারল্য সহায়তার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকসমূহের সুষ্ঠু তারল্য ব্যবস্থাপনার স্বার্থে এবং ইসলামিক আর্থিক ব্যবস্থাকে অধিকতর শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ১৪ দিন মেয়াদী তারল্য সুবিধা প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সপ্তাহের যে কোনো কার্যদিবসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ নিতে আবেদন করতে পারবে এসব ব্যাংক। এর মুনাফা হবে ব্যাংকগুলোর তিন মাসের ‘মুদারাবা মেয়াদী আমানতের’ বিপরীতে ঘোষিত মুনাফা।

আইবিএলএফের মুনাফার হার হবে সাময়িক। বছর শেষে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ঘোষিত চূড়ান্ত মুনাফা অনুযায়ী তারল্য সুবিধার মুনাফা সমন্বয় করা হবে। সেক্ষেত্রে চূড়ান্ত মুনাফা কম বা বেশি হলে তাও মেনে নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যেসব ব্যাংকের ‘বাংলাদেশ সরকারের ইসলামিক সুকুক বন্ডে (বিজিআইএস)’ বিনিয়োগ রয়েছে সেগুলোই তারল্য সুবিধাটি নিতে পারবে। আর এ সুকুক বন্ডকে জামানত হিসেবে রাখতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। কমপক্ষে এক কোটি টাকা নেওয়ার জন্য এ আবেদন করতে পারবে ব্যাংকগুলো।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, আইবিএলএফের মাধ্যমে তারল্য সুবিধা নিতে প্রতিটি লেনদেনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে ব্যাংকগুলোকে। এতদিন শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রচলিত ব্যাংকগুলো টাকা ধার নিতে পারত। রেপো, বিশেষ রেপো ও লিক্যুইডিটি সাপোর্ট ফ্যাসিলিটিজ সুবিধার (এলএসএফ) আওতায় ব্যাংকগুলো এ তারল্য সুবিধা পেত। দেশে বর্তমানে ১০টি পূর্ণাঙ্গ শরীয়াহ ধারার ব্যাংক রয়েছে। সবশেষ এ ধারায় যুক্ত হয়েছে স্ট্যান্ডার্ড ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। এছাড়া প্রচলিত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামিক ব্যাংকিং শাখা পরিচালনা করছে ৯টি ও ইসলামিক উইন্ডো পরিচালনা করছে ১৪টি ব্যাংক।

ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোকে তারল্য সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা এমন সময়ে এল যখন এ ধারার কয়েকটি ব্যাংকের অনিয়ম করে বড় ধরনের ঋণ বিতরণের খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে। হাই কোর্টও এ বিষয়ে তদন্ত করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছে। তারল্য সহায়তার এ বিশেষ ব্যবস্থা চালু করতে এবং নীতিমালা তৈরির আগে বাংলাদেশ ব্যাংক এ নিয়ে আলোচনা করেছিল ইসলামী ধারার ব্যাংক ও শরীয়াহ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে। ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো ও ইসলামিক উইন্ডো বা সেবা রয়েছে এমন ব্যাংকগুলোর শরীয়াহ সদস্যদের সংগঠন সেন্ট্রাল শরীয়াহ বোর্ড ফর ইসলামিক ব্যাংকস অব বাংলাদেশ (সিএসবিআইবি) এর সঙ্গেও গত মাসে বৈঠক করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, গত জুন পর্যন্ত ইসলামিক ব্যাংকিং (ইসলামিক উইন্ডো ও শাখাসহ) এ আমানতের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ১২ হাজার ৩১৪ কোটি, যা দেশের ব্যাংক খাতের মোট আমানতের ২৬ দশমিক ১৯ শতাংশ। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বা ঋণ দিয়েছে ৩ লাখ ৮১ হাজার ৮২৯ কোটি, যা দেশের ব্যাংকিং খাতের ঋণ স্থিতির ২৮ দশমিক ৫২ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে অতিরিক্ত তারল্য ছিল ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩৬ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। অপরদিকে ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা মোট রেমিটেন্সের মধ্যে ৩১ দশমিক ৫৭ শতাংশ আসছে ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপলোগ্রাউন্ডের জনসভায় ছালেহ আহমদের নেতৃত্বে জনসভায় যোগদান
পরবর্তী নিবন্ধউন্নয়নের পাশাপাশি নাগরিক সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখতে হবে