উচ্ছেদের পর আবার দখল

আমতল মোড়ের দিকে যেতে রাইফেল ক্লাব সংলগ্ন জায়গা ফুটপাত রুদ্ধ, ব্যস্ত সড়কেই চলাচল শিক্ষার্থী, পথচারীদের

হাবীবুর রহমান | বৃহস্পতিবার , ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৮:০৬ পূর্বাহ্ণ

নগরীর আমতল মোড়ের দিকে যেতে রাইফেসল ক্লাব সংলগ্ন ফুটপাতের জায়গা আবার দখল হয়ে গেছে। সেখানে তৈরি করা হয়েছে নতুন করে ১০টি দোকান। টিনের তৈরি এসব দোকানে মূলত ইলেকট্রিক মেকানিকের কাজ করা হয়। গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, থিয়েটার ইনস্টিটিউট থেকে আমতল মোড়ের দিকে যেতে রাস্তা সংলগ্ন ফুটপাতের পাশেই চট্টগ্রাম রাইফেল ক্লাবের অবস্থান। ক্লাবের সীমানা দেয়াল এবং ফুটপাত ঘেঁষে ফের দোকান নির্মিত হওয়ায় পথচারীদের চলাচলের পথ রুদ্ধই থেকে গেছে। ব্যস্ত সড়ক এড়িয়ে ফুটপাতটি ধরে শিক্ষার্থী ও পথচারীরা চলাচল করবেন সেই সুযোগ নেই বললেই চলে।

পথচারীরা বলছেন, ফুটপাত দিয়ে গন্তব্যে যাওয়া সম্ভব না। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে কাস্টমাররা। তাই ব্যস্ত সড়ক মাড়িয়েই তারা পথ চলেন। জানা গেছে, যখন উচ্ছেদ করা হয়েছিল এর কিছুদিন পরই ফের বর্তমানের দৃশ্যমান স্থাপনাগুলো গড়ে তোলা হয়েছে। গত বছরের ২১ মে এই জায়গা থেকে ১১টি দোকান গুঁড়িয়ে দিয়ে দখলদার উচ্ছেদ করেছিল জেলা প্রশাসন।

বাকলিয়া সার্কেলের এসিল্যান্ড ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জামিউল হিকমাহ অভিযানটি পরিচালনা করেন। তখন বলা হয়েছিল রাইফেলস ক্লাবের পশ্চিমাংশের সীমানা দেয়াল ভেঙে ফুটপাত ঘেসে দোকানপাটগুলো তৈরি করা হয়েছিল। অবৈধভাবে সেটি করা হয়। যার কারণে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে দোকানগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। উদ্ধার হওয়া জায়গা এবং ক্লাবের অভ্যন্তরে থাকা অন্যান্য জায়গা ঘিরে ১০ তলার শুটিং কমপ্লেঙ গড়ে তোলাসহ নানা পরিকল্পনার কথাও তখন জানিয়েছিল জেলা প্রশাসন।

উচ্ছেদের পর আবার দখল করে ১০টি দোকান গড়ে তোলার বিষয়ে কথা হয় ফয়সাল নামের এক ব্যক্তির সাথে। তিনি বলেন, আমার বাবা শাহজাহান এক সময় সরকারি কর্মচারী ছিলেন। তিনি সরকার থেকে সাড়ে ৩ গণ্ডা জায়গা ৯৯ বছরের জন্য লিজ নেন। লিজের মেয়াদ এখনো রয়েছে। অথচ নানা সময় আমাদেরকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। বর্তমানে আমি আর আমার ভাই মো. হারুন মিয়া লিজ মূলে সামান্য কিছু জায়গার দখলে আছি। সাড়ে ৩ গণ্ডা জায়গার দখল পেতে আমরা মামলা করেছি। উচ্চ আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। স্থগিতাদেশ রয়েছে। এরপরও গত বছরের ২১ মে ফের আমাদেরকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এরপর আমরা উচ্চ আদালতে গিয়েছি। কেন এমন উচ্ছেদকে অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আমরা ফের সেখানে স্থাপনা গড়ে তুলেছি। পেট বাঁচাতে আমরা সেটি করেছি। আমাদের আর কিছু করার ছিল না। জেলা প্রশাসন যেহেতু উচ্ছেদ করেছে সেহেতু জেলা প্রশাসনের কারো সাথে ফের স্থাপনা নির্মাণ বিষয়ে কথা হয়েছে কী না এমন প্রশ্নের জবাবে ফয়সাল বলেন, আমাদের জায়গায় আমরা স্থাপনা করেছি। কারো সাথে কথা হয়নি। জেলা প্রশাসন অবৈধভাবে আমাদের উচ্ছেদ করেছিল।

মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় কিভাবে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সে প্রশ্ন রেখে তিনি আরো বলেন, রাইফেলস ক্লাবের জায়গায় বা ফুটপাতে আমরা দোকান করিনি। আমরা ক্লাবের সীমানার বাইরে আমাদের জায়গায় দোকান করেছি।

গত বছরের ২১ মে পরিচালিত অভিযানের পর বাকলিয়া সার্কেলের এসিল্যান্ড ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জামিউল হিকমাহ আজাদীকে বলেছিলেন, রাইফেলস ক্লাব একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এর সীমানার মধ্যে ব্যাংক রয়েছে। নিচে জেনারেটর রয়েছে। এসব কিছুর নিরাপত্তা প্রয়োজন। যেখানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল অবৈধ স্থাপনাগুলো। যেগুলো ক্লাবের সীমানা দেয়াল ভেঙে রাতের আঁধারে গড়ে তোলা হয়।

অবৈধভাবে গড়ে তোলা ১১টি দোকান গুঁড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে ৫ কোটি টাকার সম্পদ উদ্ধার হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, রাইফেলস ক্লাবের সম্পদ দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ভোগ করে আসছিল দখলদাররা। তারা এক সময় ফুটপাতে ছিল। সেখান থেকে ধীরে ধীরে তারা ক্লাবের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েন। ক্লাবের সীমানা দেয়াল ভেঙে গড়ে তোলা হয় দোকানপাট। ক্লাবের পক্ষ থেকে বাধা দেয়া হলেও উপেক্ষা করা হয়। ক্লাবের নিরাপত্তার স্বার্থে সীমানা দেয়াল পুনঃনির্মাণ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে কাউকে ক্লাবের অভ্যন্তরে অসৎ উদ্দেশ্যে অনুপ্রবেশ করতে দেয়া হবে না বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। ক্লাব ঘিরে নানা পরিকল্পনার কথা জানিয়ে ক্লাবটির সভাপতি জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেছিলেন, ক্লাবের পশ্চিম সীমানার দেয়াল ভেঙে গড়ে তোলা দোকানগুলো আমাদের জন্য হুমকিস্বরূপ ছিল। এক সময় ক্লাবের রাইফেল লুটের ঘটনাও ঘটেছে। প্রকৃত দখলদার দাবি করলেও দখলদারদের কাগজপত্র ঠিক নেই উল্লেখ করে তিনি আরো বলেছিলেন, ক্লাবের মূল ভবনের পাশে শ্যুটিং কমপ্লেঙ গড়ে তোলা হবে।

উচ্ছেদের পর আবার দখল বিষয়ে গতকাল জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান আজাদীকে বলেন, উচ্ছেদকৃত জায়গা ফের দখল হয়েছে এমন তথ্য আমাকে কেউ জানায়নি। এখন জানতে পেরেছি। বিষয়টি আমি দেখব এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআ. লীগের ৭ সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে, বাড়তে পারে আরও
পরবর্তী নিবন্ধচলন্ত ট্রেনের ১৪টি বগি বিচ্ছিন্ন ইঞ্জিন চলে গেল এক কিমি