ঈদের অনাবিল আনন্দে ভরে উঠুক প্রতিটি মানুষের জীবন

| মঙ্গলবার , ৯ এপ্রিল, ২০২৪ at ৫:০৩ পূর্বাহ্ণ

ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম রোজা। এক মাস সিয়াম সাধনা, ইবাদতবন্দেগি আর কঠোর ত্যাগ ও ধৈর্যের পরীক্ষা দেয়ার পর রোজাদারদের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এক শ্রেষ্ঠ উপহার পবিত্র ঈদুল ফিতর। এদিন ধনী গরীব সবার জন্য খুশির দিন। যে যার সাধ্য মতো এদিনটিকে উপভোগ করে মুসলিম জাহান। ঈদুল ফিতর সাম্য, মৈত্রী, ঐক্য এবং ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধ শিক্ষা দেয়।

মহান আল্লাহর অনুকম্পা, ক্ষমা, অনুগ্রহ ও নৈকট্য লাভের লক্ষ্যে ঈদুল ফিতর বিশ্ব মুসলিমের জন্য এক অনন্য উৎসব। বলা হয়ে থাকে, এটি মুসলিম জাহানের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। ঈদ শুধু আনন্দ উৎসবই নয়; এটি আমাদের শান্তি, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও ত্যাগের শিক্ষা দেয়। পরস্পরের মধ্যে আনন্দ ও দুঃখ ভাগাভাগি করার মাধ্যমে আমরা মৈত্রী ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হই।

হিংসাবিদ্বেষ ও হানাহানি ভুলে মানুষ একে অপরের ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ঈদ ধনীগরিব নির্বিশেষে সবার জীবনে আনন্দের বার্তা বয়ে নিয়ে আসে। ঈদের আনন্দ আমাদের সবার।

ঈদ’ মানে খুশি। আর ‘ফিতর’ মানে ভঙ্গ করা। দীর্ঘ একটি মাস কঠোর সিয়াম সাধনা ও দিনের বেলায় পানাহার ও যাবতীয় মানবীয় রিফু থেকে বিরত থেকে মানুষ এ দিনটিতে পূর্বের নিয়মে ফেরার মাধ্যমে মহাআনন্দে পালন করে মুসলিম উম্মাাহ। সম্প্রীতির এ দেশে কেবল মুসলিম নয় সহঅবস্থানরত সকল ধর্মের মানুষদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এ খুশির আমেজ।

ঈদ’ আরবি আওদশব্দমূল থেকে উদ্ভূত। এর আভিধানিক অর্থ হল ফিরে আসা, প্রত্যাবর্তন করা, বার বার আসা। মুসলমানদের জীবনে চান্দ্র বৎসরের নির্দিষ্ট তারিখে প্রতি বছরই দুটি উৎসবের দিন ফিরে আসে। তাই দিন দুটিকে ঈদ বলা হয়। ফিতর শব্দের অর্থ হলো ভেঙে ফেলা, বিদীর্ণ করা। মুসলমানরা রমজানের চাঁদ দেখার সাথে সাথে রোজা রাখা আরম্ভ করে এবং শাওয়ালের চাঁদ দেখার সাথে সাথে রোজা ভেঙে দেয় তথা রোজা রাখা ছেড়ে দেয়। সে কারণে এটিকে ঈদুল ফিতর তথা রোজা ভাঙার আনন্দ বলা হয়। ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, ঈদ এমন এক নির্মল আনন্দের আয়োজন, যেখানে মানুষ আত্মশুদ্ধির আনন্দে পরস্পরের মেলবন্ধনে ঐক্যবদ্ধ হয় এবং আনন্দ সমভাগাভাগি করে। মাহে রমজানের রোজার মাধ্যমে নিজেদের অতীত জীবনের সব পাপপঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হওয়ার অনুভূতি ধারণ করেই পরিপূর্ণতা লাভ করে ঈদের খুশি। ঈদুল ফিতর বা রোজা ভাঙার আনন্দউৎসব এমনই এক পরিচ্ছন্ন আনন্দ অনুভূতি জাগ্রত করে, যা মানবিক মূল্যবোধ সমুন্নত করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের পথপরিক্রমায় চলতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উদ্বুদ্ধ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) সানন্দে ঘোষণা করেন, ‘প্রতিটি জাতিরই আনন্দউৎসব রয়েছে, আমাদের আনন্দউৎসব হচ্ছে এই ঈদ।‘ (বুখারি ও মুসলিম)

ইসলামী চিন্তাবিদরা বলেন, ঈদ মানে ফিরে আসা বা প্রত্যাবর্তিত হওয়া। তাই ঈদের মাধ্যমে খুশির উৎসব ও প্রত্যাবর্তনের বার্তা লিপিবদ্ধ রয়েছে। ঈদ উপলক্ষ্যে খুশির হাওয়া বইতে থাকে, সর্বত্র উৎসবের আমেজ বিরাজ করে, মানুষের পুনর্মিলনী বা সম্মিলন ঘটে, তাই প্রাণের এ উৎসবকে আমরা ঈদ বলে থাকি। আবার মহাকালের ঘূর্ণাবর্তে প্রতি বছরই ঈদ আমাদের মাঝে ফিরে ফিরে আসে, মানবচিত্তে আনন্দউল্লাসের দোলা দিয়ে যায়, সমাজমানসে নিখুঁত শিল্পীর অদৃশ্য তুলি দিয়ে প্রত্যাবর্তনের চিত্রাঙ্কন করে বেড়ায় এবং এ প্রত্যাবর্তনের গল্পে থাকে তাৎপর্যময় ও জীবনজগতের জন্য পরম শিক্ষা। তাই আমাদের উচিত, ঈদ পালনের ভেতর দিয়ে শুধু উৎসবের সাগরে অবগাহন না করে প্রকৃত অর্থে এই প্রত্যাবর্তনের বার্তা, তাৎপর্য ও শিক্ষাকে গ্রহণ করা; তবেই আমাদের ঈদ উদযাপন সার্থক হয়ে উঠবে।

ঈদ সমাজে বিভেদ ও বৈষম্য দূর করার মাধ্যমে একতার শিক্ষা দেয়। বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতিত্বের ঐক্যের এ দিনে আজ বিশ্বের সবখানে মুসলমান লাঞ্ছিত, নিপীড়িত, নির্যাতিত। ইসলামের মূল শিক্ষা ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হওয়ার কারণে আজকে মুসলিমদের এ করুণ দশা। বিশ্বব্যাপী খুশির প্লাবনেও আজ ফিলিস্তিনি মুসলিম ভাইদের মাঝে আনন্দের রেশমাত্র নেই। তাদের মাঝে রোজা ছিলো ইফতার ছিলো না, তারাবি ছিলো সাহরি ছিলো না। খাদ্যের অভাবে মানুষ পশুর খাদ্য ঘাস, লতা পাতা খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। প্রতিনিয়তই মরছে মানুষ। নেই খাদ্য চিকিৎসা, বাসস্থান। ভুখা, নির্ঘুম রক্তাক্ত শরীর নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিনাতিপাত করছে। যাপন করছে মানবেতর জীবন।

আমরা চাই বিশ্বের সকল মানুষ সুখী হোক। সবার জীবন সভ্য, সুন্দর ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হোক! হাসিখুশি ও ঈদের অনাবিল আনন্দে প্রতিটি মানুষের জীবন পূর্ণতায় ভরে উঠুক!

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে