ইমানদারের অন্তরে আল্লাহু আকবারের প্রভাব

ফখরুল ইসলাম নোমানী | শুক্রবার , ১১ মার্চ, ২০২২ at ৭:৫৩ পূর্বাহ্ণ

যাবতীয় প্রশংসা কেবলই আল্লাহ তা’আলার যিনি সমগ্র জগতের মালিক ও রব। আর সালাত ও সালাম নাযিল হোক আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর, যিনি সমস্ত নবীগণের সরদার ও সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী। আরও নাযিল হোক তার পরিবার-পরিজন ও সমগ্র সাথী-সঙ্গীদের ওপর।
মহান আল্লাহর বড়ত্ব ও মহিমা বর্ণনার সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম শব্দ আল্লাহু আকবার। এই শব্দ উচ্চারণের মাধ্যমে মুমিন বান্দা তার প্রভুর প্রতি বিশ্বাসের প্রকাশ ঘটান এবং রবের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলেন। যে মুমিনের অন্তরে তাকবিরের মাহাত্ম ও গুরুত্ব যত বেশি হবে, তার ঈমানের প্রভাব তত বেশি প্রতিফলিত হবে। তাই ইসলামী শরিয়তে আজান ও নামাজের পাশাপাশি বছরের বিভিন্ন সময় ও জীবন-ঘনিষ্ঠ নানা অনুষঙ্গে তাকবির পাঠের বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে।
‘আল্লাহু আকবর’ শব্দটি মুমিনের ঈমানের দৃঢ়তা বৃদ্ধি করে। মনের ভেতর থেকে ভয়-ভীতি দূর করে। মুমিনের জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ‘আল্লাহু আকবর’-এর প্রভাব তাকে আলোকিত করে রাখে। ‘আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মুমিন সাক্ষ্য দেয় যে তারা সমগ্র জাহানের একমাত্র মালিক প্রবল পরাক্রমশালী মহান আল্লাহর বড়ত্ব মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে।
আগুন নেভাতে আল্লাহু আকবার সাহায্য করে: নবীজি (সা.) বলেছেন,‘যখন তোমরা কোনো জায়গায় আগুন লেগে গেছে দেখো, তখন আল্লাহ আকবার বলতে থাকো। কেননা তাকবির আগুন নেভাতে সহায়ক’। আরেক বর্ণনায় এসেছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, তোমরা আগুন নেভাতে তাকবিরের সাহায্য নাও। (মাকাসিদুল হাসানা, হাদিস : ৬৩)
আল্লাহু আকবার বলার কারণে শয়তান দূর হয়: তাকবির তথা আল্লাহু আকবার হলো এমন একটি বাক্য, যা কাফির এবং তাদের নেতৃবৃন্দ ও ইবলিসের মনে প্রচণ্ড কম্পন সৃষ্টি করে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, শয়তান যখন সালাতের আজান তথা (আল্লাহু আকবারের আওয়াজ) শুনতে পায়, তখন বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পালাতে থাকে, যেন আজানের শব্দ তার কানে পৌঁছতে না পারে। মুয়াজ্জিন যখন আজান শেষ করে তখন সে ফিরে এসে (সালাত-আদায়কারীর) সংশয়-সন্দেহ সৃষ্টি করতে থাকে। সে পুনরায় যখন ইকামাত শুনতে পায়, আবার চলে যায় যেন এর শব্দ তার কানে না যেতে পারে। যখন ইকামাত শেষ হয় তখন সে ফিরে এসে (সালাত আদায়কারীদের অন্তরে) সংশয়-সন্দেহ সৃষ্টি করতে থাকে। (মুসলিম, হাদিস :৭৪২)
আল্লাহু আকবার বলার মাধ্যমে অহংকার দূর হয়: মানুষের জীবন ধ্বংসকারী মারাত্মক একটি স্বভাব হলো অহংকার। এই স্বভাবের লোকেরা দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠান, সমাজ, সংগঠন, রাষ্ট্র, এমনকি নিজ পরিবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ কোরো না। কেননা তুমি তো কখনোই পদভারে পৃথিবী বিদীর্ণ করতে পারবে না। আর উচ্চতায় কখনো পর্বত সমান হতে পারবে না। ’(সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত :৩৭)
এই স্বভাব থেকে বাঁচতে প্রয়োজন খুব বেশি পরিমাণে তাকবির বা আল্লাহু আকবার পাঠ করা। কারণ, মুমিনের অন্তরে যখন আল্লাহ সবচেয়ে বড় এ বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে স্থাপন হবে, তখন সব অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ থেকে অন্তর পবিত্রতা লাভ করবে। আর এটিই আল্লাহু আকবারের সবচেয়ে বড় প্রভাব।
আল্লাহু আকবার হজ্বের সময়: মুসলমানদের পবিত্র তীর্থস্থান বায়তুল্লাহ হজ্ব। সেই পবিত্র ঘর জিয়ারতকালে উচ্চৈ:স্বরে তাকবির বলতে হয়। কঙ্কর নিক্ষেপ করার সময়, আরোহণ করা, নিচে অবতরণ করা, তাওয়াফ করাসহ এ ধরনের সব জায়গাতেই আল্লাহু আকবার বলতে হয়। রাসুল (সা.) বলেন, জিলহজ্বের এই ১০ দিন আল্লাহর কাছে তাকবিরের চেয়ে আর বড় কোনো আমল নেই। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬১৫৪)
আল্লাহু আকবার তাকবিরের খোলে আসমানের দুয়ার : একবার রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে নামাজ আদায়কালে এক ব্যক্তি বলে উঠল, ‘আল্লাহু আকবার কাবিরা ওয়াল হামদুলিল্লাহ কাসিরা ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতান ওয়া আসিলা’ (অর্থ : আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, সবচেয়ে বড়। সব প্রশংসা আল্লাহর। আর সকাল ও সন্ধ্যায় তারই পবিত্রতা বর্ণনা করতে হবে)। নামাজ শেষে রাসুল (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, এ কথাগুলো কে বলল? সবার মধ্যে থেকে জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি ওই কথাগুলো বলেছি। তখন রাসুল (সা.) বললেন, কথাগুলো আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হয়েছে। কারণ কথাগুলোর জন্য আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছিল। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১২৪৫), আর আল্লাহু আকবার ‘শাআইরে ইসলাম’ এর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যে ব্যক্তি এর মর্যাদা রক্ষা করবে সে সব ধরনের গুনাহ থেকে বাঁচতে পারবে।
আল্লাহু আকবার নামাজে তাকবির: আজানের মধ্যে তাকবির বলতে হয়। ঈমানের পর সবচেয়ে যে হুকুম নামাজ। সেই নামাজ শুরু হয় তাকবির তথা আল্লাহু আকবর দিয়ে। তেমনি নবজাতকের কানে তাকবির বলা। মৃত ব্যক্তির জন্য জানাজায় তাকবির বলা ইসলামের বিধান।
আল্লাহু আকবার সফরে তাকবির বলা: রাসুল (সা.) যখন বাহনে আরোহণ করতেন, তখন তিনি আল্লাহু আকবার বলতেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) কোথাও সফরের উদ্দেশে তাঁর উটে আরোহণের সময় তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ (আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ) বলতেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩১৬৬)
প্রিয়নবী (সা.)-এর পছন্দীয় যে কয়টি বাক্য ছিল, তার মধ্যে ‘আল্লাহু আকবার’ অন্যতম। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সুবহানাল্লাহ, ওয়াল-হামদু লিল্লাহ, ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’ (আল্লাহ অতীব পবিত্র, সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ) বলা আমার কাছে যেসব জিনিসের ওপর সূর্য উদিত হয় তা থেকে বেশি পছন্দনীয়’। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৯৭)
প্রিয়নবী (সা.)-বলেছেন, জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশকে তোমরা বেশি বেশি তাকবির (আল্লাহু আকবার), তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ) বলবে’। (মুসনাদে আহমাদ)
পরিশেষে : আল্লাহতাআলার কাছে এই প্রার্থনা করি, হে দয়াময় সৃষ্টিকর্তা! তুমি আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ-নবীর উম্মত হবার কল্যাণে আমাদের দোষত্রুটি ক্ষমা করে তোমার রহমতের বারিধারায় আমাদেরকে সিক্ত করো। সকলকে প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি বেশি বেশি দরুদ ও সালাম পাঠানোর তৌফিক দিন। সকলেই পড়ি, ‘আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা সাইয়েদিনা মুহাম্মদ, ওয়ালা আলেহি ওয়া আসহাবিহি ওয়া সাল্লাম। মহান আল্লাহ আমাদের বেশি বেশি আল্লাহু আকবার তথা তাঁর মাহাত্ম্য ও বড়ত্ব বর্ণনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন !
লেখক : হেড অব ফাইন্যান্স এন্ড একাউন্টস,
এপিক হেলথ কেয়ার লিমিটেড

পূর্ববর্তী নিবন্ধতারুণ্যে এগিয়ে যাওয়ার অপর নাম হল উৎসাহ
পরবর্তী নিবন্ধজুম্‌’আর খুতবা