ইমরান আর প্রধানমন্ত্রী নন

বিজ্ঞপ্তি জারি পাক ক্যাবিনেট সচিবালয়ের।। দিনভর নাটকীয়তা, পার্লামেন্ট ভেঙে দিলেন প্রেসিডেন্ট

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ৪ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

ইমরান খানকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে অপসারণের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করল পাকিস্তানের ক্যাবিনেট সচিবালয়। এর আগে পার্লামেন্টে আনা অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল হয়ে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের আহ্বানে আইনসভা ভেঙে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। সংবাদ সংস্থা জিও নিউজের প্রতিবেদনে অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট আলভি পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভেঙে দেওয়ার পরে ইমরান খান আর প্রধানমন্ত্রীর পদে বহাল রইলেন না। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধীরা অনাস্থাভোটের দাবি তুলেছিলেন। সেই ভোটাভুটির কথা ছিল রোববার। কিন্তু সেই অনাস্থা-প্রস্তাব বাতিল করেন ডেপুটি স্পিকার। এর পরেই প্রেসিডেন্টের কাছে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভেঙে ভোট করানোর আহ্বান জানান ইমরান। তাঁর প্রস্তাব মতো অ্যাসেম্বলি ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট। ফলে মেয়াদ শেষ করতে পারলেন না ইমরানও। অনাস্থা-প্রস্তাব
বাতিল করা প্রসঙ্গে পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বিলাবল ভুট্টো জারদারি বলেন, সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট দিতে দেয়নি। ঐক্যবদ্ধ বিরোধী দল সংসদ ছাড়ছে না। আমাদের আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছেন।
ভোটের পথে পাকিস্তান : সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ায় এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হবে, তারাই ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী নির্বাচন করবে। এর আগে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে ইমরান জানিয়েছিলেন, তিনি পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেছেন।
অথচ এদিন ইমরানের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোট হওয়ার কথা ছিল। ভোটে যে ইমরান হারছেন, তার লক্ষণও ছিল স্পষ্ট। বিরোধীদের ভাষ্য ছিল, ইমরান যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় বসেছিলেন, তার বেশিরভাগই রাখতে পারেননি।
ইমরানের সরকার বলছিল অন্য কথা। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, সরকার পতনে বিদেশি এক রাষ্ট্রের মদদ আছে। তারা কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে, হুমকি দিয়ে চিঠি দিয়ে আইনপ্রণেতাদের ভোট কিনে অনাস্থা প্রস্তাবে জয়ী হতে চেষ্টা করছে। এক রাষ্ট্রদূতকে বৈঠকে ডেকে নিয়ে ইমরান সরকারর বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব পাস না হলে ইসলামাবাদের পথ কঠিন হয়ে যাবে, এমন হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ইমরান।
বিরোধীরা এই অভিযোগ উড়িয়ে দিলেও ইমরানের নিজের দল ও জোটসঙ্গী অনেক আইনপ্রণেতা অবস্থান বদলে বিরোধীদের সঙ্গে হাত মেলালে সরকার পতন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এই প্রেক্ষিতে ইমরান রোববার ভোটের দিন সমর্থকদের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতে ডাক দেন; দলের এমপিদের বলেন পার্লামেন্টে গিয়ে অনাস্থা প্রস্তাবের বিপক্ষে জোরাল বক্তব্য দিতে। এর আগে ইমরান আস্থাভোটের দিন পার্লামেন্টে না যেতে দলীয় এমপিদের চিঠি দিয়েছিলেন।
শনিবার তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী জানান, ইমরান মত বদলেছেন। এখন পার্লামেন্টে উপস্থিত হয়ে তিনিই পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফ দলের আইনপ্রণেতাদের নেতৃত্ব দেবেন।
পিটিআইয়ের এসব ঘোষণায় গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে, ইমরান আইনপ্রণেতাদের পার্লামেন্টে সশরীরে উপস্থিত হতে বাধা দিতে কিংবা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে লম্বা আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চাইছেন। এসব চাল ভণ্ডুলে বিরোধীরা প্রস্তুত বলে নেতারা জানিয়েছিলেনও।
কিন্তু পাকিস্তানকে ১৯৯২ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক রোববার হাজির হন ‘গুগলি’ নিয়ে। এদিন পার্লামেন্টের কার্যক্রম শুরুর আগেই বিরোধীরা স্পিকার আসাদ কাইজারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব তোলেন। তারপর ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি অধিবেশন পরিচালনা করেন। আলোচনার শুরুর দিকেই তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী সংবিধানের ৫ নম্বর ধারায় থাকা ‘রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক দায়িত্ব’ উল্লেখ করে ‘বিদেশিদের চক্রান্তে’ সরকার পরিবর্তনে এই অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে বলে অভিযোগ পুনর্ব্যক্ত করেন এবং এই ধরনের প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া উচিত কিনা সেই প্রশ্ন তুলে স্পিকারকে সংবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলেন। ডেপুটি স্পিকার পরে তার বক্তব্যকে ‘যৌক্তিক’ অ্যাখ্যা দিয়ে প্রস্তাবটি বাতিল করে দেন। বিরোধীরা এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার ঘোষণা দেয়।
এদিকে অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল হয়ে যাওয়ার পরপরই ইমরান জাতির উদ্দেশে ভাষণ নিয়ে হাজির হন। জানান, তিনি প্রেসিডেন্টকে পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে বলেছেন। গণতন্ত্রীদের জনগণের কাছে যাওয়া উচিত এবং নির্বাচন হওয়া উচিত; জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে তারা কাকে ক্ষমতায় চায়।
নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে সমর্থকদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো দুর্নীতিবাজ শক্তি দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার রাখে না। পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পরপরই নতুন নির্বাচন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে।
ইমরানের ওই ভাষণের কিছুক্ষণ পরেই আরিফ আলভির কার্যালয় থেকে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার কথা জানানো হয়।
পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্ট ভেঙে দিলে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দিতে হয়। নির্বাচন হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে আলোচনা করে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন। প্রেসিডেন্টের ঘোষণার পর পিটিআইয়ের নেতারাও আগামী ৯০ দিনে মধ্যে নতুন নির্বাচন হতে যাচ্ছে বলে টুইটে জানিয়েছেন।
যদিও নাটকের এখনই শেষ নয় বলেও অনেকে মনে করছেন। বিরোধীরা সুপ্রিম কোর্টে গেলে সেখানকার সিদ্ধান্তও অনেক কিছু বদলে দিতে পারে। অনেক আইনজীবী বলছেন, সংবিধানের ‘মনগড়া’ ব্যাখ্যা দিয়ে ডেপুটি স্পিকার অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব বাতিল করতে পারেন না। তিনি যা করেছেন সেটিই সংবিধানের লংঘন। ফের একবার পার্লামেন্টের ভবিষ্যৎ ঠিক করতে যাচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট, বলেছেন আইনজীবী আসাদ রহিম খান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকোন দিকে এগোচ্ছে পাকিস্তান, আবার ভোট নাকি অন্যকিছু
পরবর্তী নিবন্ধইউনিয়ন ও উপজেলায় মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখার নির্দেশ