ইজারাদারকে সোয়া কোটি টাকা ছাড়!

সাগরিকা গরুর বাজারের টেন্ডারে শর্ত ও নিয়ম লঙ্ঘন

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৫ জুন, ২০২২ at ৮:২০ পূর্বাহ্ণ

সাগরিকা গরুর বাজার ইজারা প্রক্রিয়ায় টেন্ডারের শর্ত এবং প্রচলিত নিয়ম লঙ্ঘন করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এক ইজারাদারকে সোয়া ১ কোটি টাকা ছাড় দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী অন্যরা এই ছাড়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, এরূপ অনৈতিক ছাড় দেয়া হবে জানলে তারাও টেন্ডারে সর্বোচ্চ দরদাতা হওয়ার মতো দর উল্লেখ করতেন।
সূত্রে জানা যায়, প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী চসিকের নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন হাট এবং ঘাট পহেলা বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র সময়ের জন্য ইজারা দেয়া হয়। প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ থেকে যাতে ঠিকাদার কার্যক্রম শুরু করতে পারেন সেভাবে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। কিন্তু চলতি বছর বিভিন্ন বাজার ইজারা প্রদানে বিলম্ব করা হয়। এর মধ্যে সাগরিকা গরু-ছাগলের বাজার ইজারা নিয়ে শুরু থেকে নানা অনিয়মের আশ্রয় নেয়ার অভিযোগ ওঠে।
নির্দিষ্ট সময়ের ৪২ দিন পর গত ১০ মে ৩টি হাটবাজারসহ মোট ১৪টি বাজার, ফেরিঘাট ও গণশৌচাগার ইজারা দেয়ার টেন্ডার আহ্বান করা হয়। টেন্ডারে ‘১৪২৯ সনের অবশিষ্ট সময়ের জন্য’ উল্লেখ করা হয়। বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৩২৩ দিনের জন্য আহূত এ টেন্ডার প্রক্রিয়া ২৫ মে সম্পন্ন করা হয়। এই টেন্ডারে সাগরিকা গরু বাজার ইজারা নেয়ার জন্য ৫টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এর মধ্যে আবদুল সাত্তার ৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, মনসুর আলম ৬ কোটি টাকা, এস এ কর্পোরেশন ৭ কোটি ১১ লাখ টাকা, এটিএম মঞ্জুরুল ইসলাম ৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা ও মোহাম্মদ ফজলে আলম চৌধুরী আরমান ৮ কোটি ১১ লাখ ৭৮৬ টাকা দর উল্লেখ করে টেন্ডার দাখিল করেন। টেন্ডারমূল্যের সাথে ভ্যাট ও ট্যাক্স মিলে মোট ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকা চসিককে প্রদান করে ৩২৩ দিন সাগরিকা গরু বাজারের হাসিল আদায়ের কথা।
কিন্তু ইজারাদারকে কার্যাদেশ দেয়ার ক্ষেত্রেও অহেতুক বিলম্ব করা হয়। এতে প্রতিদিন ২ লাখ টাকারও বেশি অর্থ ছাড় দিতে হয় ইজারাদারকে। কিন্তু গত ৬ জুন ইজারাদার মোহাম্মদ ফজলে আলম চৌধুরী আরমানকে দরপত্রে উল্লেখিত টাকা থেকে ১ কোটি ৩৫ লাখ ৫৩ হাজার ৮২৯.৭৩ টাকা বাদ দিয়ে কার্যাদেশ দেয়া হয়। এই টাকা সাত কার্যদিবসের মধ্যে কর্পোরেশনে জমা দেয়ার কথাও বলা হয়।
সাগরিকা গরু বাজারের ইজারাদারকে ৬১ দিনের অর্থ ছাড় দিয়ে টেন্ডার দেয়ার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। টেন্ডার ও সিডিউলে স্পষ্টভাবে ‘১৪২৯ সনের অবশিষ্ট সময়ের জন্য’ উল্লেখ থাকার পরও কী করে পহেলা বৈশাখ থেকে হিসেব করে ৬১ দিনের অর্থ ছাড় দেয়া হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুরো টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, যদি এভাবে ৬১ দিন বাদ দিয়ে হিসাব করার কথা বলা হতো তাহলে তারা আরো বেশি দর উল্লেখ করতেন। বিষয়টি নিয়ে টেন্ডারে অংশ নেয়া চারটি প্রতিষ্ঠানই ক্ষোভ প্রকাশ করে পুনঃটেন্ডারের দাবি জানিয়েছে।
তারা বলেছে, ৪২ দিন পর বছরের অবশিষ্ট সময়ের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। এতে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে যে ক’দিন লেগেছে সেই দিনগুলোর প্রতিদিনের জন্য ২ লাখ ২২ হাজার ১৯৩ টাকা করে (ভ্যাট ট্যাঙ ছাড়া) বাদ দিয়ে ইজারামূল্য গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু তা না করে টেন্ডারের আগের ৪২ দিনের ৯৩ লাখ ৩২ হাজার ১০৬ টাকা রহস্যজনকভাবে বাদ দেয়া হয়েছে। এর সাথে ভ্যাট ও ট্যাঙ মিলে আরো ২৩ লাখ ৩৩ হাজার ২৬ টাকা প্রদানের কথা। কিন্তু প্রচলিত নিয়মকানুন এবং টেন্ডারের শর্ত ও আইন লংঘন করে ৪২ দিনের ইজারামূল্য এবং ভ্যাট ট্যাঙ মিলে ১ কোটি ১৬ লাখ ৬৫ হাজার ১৩২ টাকা ছাড় দেয়া হয়েছে। টেন্ডারে অংশ নেয়া একাধিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, সংঘবদ্ধ একটি চক্র এই টাকার ভাগবাটোয়ারা করেছে।
অপরদিকে ওয়ার্ক অর্ডার দেয়ার সাত কার্যদিবসের মধ্যে ইজারামূল্য পুরোপুরি পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা করা হয়নি বলে কর্পোরেশন সূত্র জানিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল চসিকের রাজস্ব কর্মকর্তা এবং এস্টেট অফিসারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তাদের ব্যক্তিগত ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তারা রিসিভ করেননি। তবে চসিকের এস্টেট বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, কোরবানির বাজার শুরু হচ্ছে ১ জুলাই থেকে। তাই কোরবানির বাজার শুরু হওয়ার আগে সাগরিকা গরু বাজার ইজারা প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা, সুইপারের ২০ বছরের কারাদণ্ড
পরবর্তী নিবন্ধশেষ পরীক্ষাটি দেওয়ার আগেই গোলমালে বন্ধ চুয়েট