‘ওরা প্রাণ দিয়েছে ভাষার জন্য/ মাতৃভাষার জন্য/ বাংলার জন্য’– স্বাধীনতার জন্য পৃথিবীর প্রায় দেশই কমবেশি রক্ত দিয়েছে। কিন্তু মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য আত্মদান পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এই বিরল দৃষ্টান্ত শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আমরা বাঙালি এখনও বাংলা ভাষার মর্যাদা দিতে বা এর শুদ্ধচর্চা করতে পারছি না। না রাষ্ট্রীয় জীবনে, না ব্যক্তিগত জীবনে! ফেব্রুয়ারি মাস এলে চট্টগ্রাম শহরে বাংলা ভাষার সম্মানে ইংরেজি
ভাষায় লেখা ‘নামফলক/সাইনবোর্ড / বিলবোর্ড অপসারণ অভিযান’ চলে। যা নিতান্তই দুঃখজনক। আমরা এখনও প্রমিত বাংলার ব্যবহার করি না। আমাদের মধ্যে অধিকাংশই প্রমিত বাংলা জানি না বা জানার প্রয়োজনবোধ করি না। উল্টো কথায় কথায় দু‘চারটে ভুলশুদ্ধ ইংরেজি শব্দ বলতে পারলে নিজেদেরকে
ইংরেজি ভাষাভাষীদের কাতারে শামিল করে নিই। মাতৃভাষা বাংলাকে পাশ কাটিয়ে শুরু থেকেই সন্তানকে মাম্মি, ড্যাডি, ক্যাট, ডগ, ফিশ শেখানোতে গর্ববোধ করি। মাইকেল মধুসূদনকে চিনি না, অথচ শেক্সপিয়রকে নিয়ে দু‘বাক্য বলার সুযোগ খুঁজি। কারণ, আমরা তো মায়ের কদরই বুঝি না!’ দুগ্ধ স্রোতরূপী তুমি
জন্মভূমি স্তনে’–মাতৃভাষার এমন কদর বুঝবো কী করে? ভিক্ষার চাল কাঁড়া আর আকাঁড়া–এমন অবস্থা যেনো! কিন্তু ‘মোদের গরব মোদের আশা/আ মরি বাংলা ভাষা ’–এ তো কারো ভিক্ষা বা দয়ার দান নয়! আসুন সর্বস্তরে বাংলাভাষার শুদ্ধচর্চা করি। ইংরেজির ফাঁকে ফাঁকে বাংলা নয়, বরং রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত জীবনে বাংলার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজিকে রাখি।