আসুন, একযোগে দেশ গড়ার কাজ করি

রাউজান সাংবাদিক পরিষদ, চট্টগ্রামের অভিষেক ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ফজলে করিম

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২০ জুলাই, ২০২৩ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশ আজ রোল মডেল। আপনাদের পাশে থাকতে চাই। ভেদাভেদ থাকবে। আসুন একযোগে দেশ গড়ার কাজ করি। তিনি গতকাল রাতে নগরের কাজীর দেউড়ির ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে রাউজান সাংবাদিক পরিষদ, চট্টগ্রামের নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখছিলেন।

তিনি বলেন, রাউজান সাংবাদিক পরিষদ, চট্টগ্রাম একটি অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। রাউজান ও চট্টগ্রামের মানুষ হিসেবে সবার কিছু দায়িত্ব আছে। এই পরিষদ যেন দীর্ঘস্থায়ী হয় সে পরিকল্পনা করতে হবে। যাতে দেশের, মানুষের ও সাংবাদিকদের নিজেদের উপকার হয়। দেশের সুনাম কিভাবে দেশে ও দেশের বাইরে তুলে ধরা যায়। সুন্দর বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছায় আমি রাজনীতি করি। এই প্লাটফর্ম থেকে যেন মানুষ সহযোগিতা পায়। ২৪৩ বর্গ কিমির রাউজান। সাড়ে ছয় লাখ মানুষ,তিনশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৬০০ রাস্তা, ৩৪ হাজার কৃষক, ১ লক্ষ ছাত্রছাত্রী সব মিলে রাউজান। প্রথম আমরাই করোনার আগে স্কুলে মিড ডে মিল চালু করি। দীর্ঘ চার বছর আমরা করেছি। করোনায় ১ লাখ মানুষকে খাবার দিয়েছি। অক্সিজেন সেবা দিয়েছি। স্বাস্থ্য সেবা নিরবচ্ছিন্ন দিয়েছি। ১৭টি ইউনিয়নে পার্টি অফিস করেছি। ১২৬ টি ওয়ার্ড অফিসের কাজ চলছে। সড়ক সমপ্রসারণ করেছি। ১৩ টি কলেজ ও ১টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। আমাদের শিক্ষার হার ৭৪%। বাসস্থানের কথা ভেবেছি। শিল্পনগর করছি। ট্রমা সেন্টার করেছি। অটিস্টিক ও বৃদ্ধাশ্রম করছি ৫০০ শয্যার। মানুষের সেবার জন্য নাজিরহাটে ডেমু ট্রেন দিয়েছি। ঢাকায় সার্কুলার ট্রেন করছি। আখাউড়া লাকসাম ডুয়েল গেজ চালু করেছি। চট্টগ্রাম থেকে কাপ্তাই রেল লাইন নিতে প্রস্তাব করেছি। বাস্তবতাও বুঝতে হবে। সাংবাদিক ভাইরা কিছু বিষয় তুলে ধরলে মানুষের চোখে পড়ে। আমার কিছু ভুল থাকলেও বলুন। আমি ইতিবাচক মানুষ।

ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, একটাই জীবন। মানুষের জন্য কি করলাম, সেটাই তো জীবন। সামনে নির্বাচন। আজ একটি নির্বাচন কেন্দ্র ভাংচুর হল কেন। চাই না একটি মানুষের কোনো ক্ষতি হোক। একসময় রাউজান সন্ত্রাসের জনপদ ছিল। আজ মানুষ শান্তিতে ঘুমায়। প্রতিদিন ভাবি কি পরিবর্তন করা যায়। মানুষের জীবনের সব ক্ষেত্র নিয়ে ভাবি। সুন্দর বাংলাদেশ দেখতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ৬ বার মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি উনার কাছে কৃতজ্ঞ। রাউজান আজ আগের রাউজান নেই। আমরা চাই চট্টগ্রাম আরো সুন্দর হোক। আমাদের কি প্রয়োজন তা সরকারকে বলতে হবে। কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইন এবছর চালু করব। কালুরঘাটে সেতু ২০২৫২৬ লেগে যাবে। এটি লম্বা সময়ের জন্য করা হবে। আমরা পরিবর্তন করতে চাই। রাউজানে ৬২ হাজার টন খাদ্য উৎপাদন হয়। ৪ হাজার টন উদ্বৃত থাকে। কোনো কৃষি জমি আমরা নষ্ট করতে দিই না। রাজনীতিতে প্রতিহিংসা যেন না থাকে, প্রতিযোগিতা থাকবে। রাউজান নিয়ে আমি গর্ব করি। সাংবাদিক ভাইদের কাছে অনুরোধ, দেশটা আগে। আমরা দেশটা কার হাতে তুলে দেব? জঙ্গীদের হাতে? আবার জ্বালাও পোড়াও করার জন্য? মানুষের জন্য যদি কিছু করতে পারি তবেই সেটা রাজনীতি। যারা দেশে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে তাদের কষ্ট লাগে না। দেশকে খাটো করে তারা কি পায়? মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের কর্মকাণ্ড আমরা দেখেছি।

তিনি বলেন, সাংবাদিকদরা পজেটিভ উদ্যোগ নেন। আপনাদের একটা ঠিকানা থাকতে হবে। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকতে হবে। সবাই মিলে ভূমিকা রাখব। আমি সেবক, শাসক নই। এটা আমার দেশ। এ মাটিতে আমি মিশে যাব। এ দেশ আমার গর্ব। যাবার আগে দেশ ও দশের জন্য কিছু করতে চাই।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, ইতিহাস, রাজনীতি, সাহিত্যসহ সকল ক্ষেত্রে এক অগ্রসর জনপদ রাউজান। অনেক ইতিহাসের সূতিকাগার রাউজান। মাস্টারদা সূর্য সেন ও কবি নবীন সেন, কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরীসহ অনেক গুণীজন এই রাউজানের সন্তান। দৈনিক আজাদী ও দৈনিক পূর্বকোণ দুটি পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতাও রাউজানের। এরমধ্যে রাউজানে অনেক বড় অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামো উন্নয়ন অভূতপূর্ব। উপজেলায় হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন। আরো হাজার কোটি টাকার প্রকল্প চলমান। আমার বাবা চট্টগ্রামের মানুষের জন্য কাগজ করেছিলেন। অনেকে বলে ঢাকা থেকে কাগজ করেন না কেন? সেটা আমার জীবদ্দশায় কখনো হবে না। চট্টগ্রামের মানুষের জন্যই আজাদী। এমপি ফজলে করিম সাহেবের কাছে আমার অনুরোধচট্টগ্রাম থেকে আশেপাশের এলাকায় ট্রেনগুলো যদি সচল করতে পারেন তাহলে শহরের ৩০% লোক প্রতিদিন নিজ বাড়ি থেকে আসা যাওয়া করে অফিস করতে পারবে। মানুষের অনেক খরচ সাশ্রয় হবে। শহরে মানুষের চাপ অনেক কমবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দৈনিক পূর্বকেণ সম্পাদক ডা. ম রমিজউদ্দিন চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকদের কাজ জনপদের চাহিদা তুলে ধরা। রাউজানের এমপির চোখে পড়লেই তিনি কাজ করবেন। উনি রাউজানের অভূতপূর্ব উন্নতি করেছেন। সাংবাদিকদের জনসাধারণের কথা বলতে হবে। মানুষের চাহিদা তুলে ধরতে হবে। রাউজানের এমপি আমার শৈশবের বন্ধু। উনি অত্যন্ত ডেডিকেটেড। নিজের কাজের প্রতি তিনি অত্যন্ত নিবেদিত। উনার আরো সাফল্য কামনা করছি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাউজান সাংবাদিক পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী খান। তিনি বলেন, আমরা রাউজানের সব বিষয় তুলে ধরতে চাই। আমাদের আয়োজনে যারা সহযোগিতা করেছেন সবাইকে ধন্যবাদ।

রাউজান উপজেলার চেয়ারম্যান এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল বলেন, রাউজানের সব আছে। চট্টগ্রামে শুধু নয় সারাদেশে রাউজানের মানুষ আছে। রাউজানের সাংবাদিকরা স্বনামখ্যাত। সকলের উত্তোরত্তর উন্নতি কামনা করি।

চট্টগ্রাম ১০ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, আমি রাউজানেরই সন্তান। গহিরা স্কুলের ছাত্র ছিলাম। ৪২ বছর আগে চট্টগ্রামে এসে রাউজানের আরেক সূর্য সন্তান বীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে থেকে কাজ করার সৌভাগ্য পেয়েছি। আমি রাউজানের সন্তান হিসেবে সকলের দোয়া চাই। যে কোনো সময় আমি আপনাদের সাথে একাত্ম থাকব।

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাউদ্দিন মো. রেজা বলেন, রাউজান একটি সমৃদ্ধ জনপদ। রাউজানের এমপি একজন সাংবাদিক বান্ধব নেতা। চট্টগ্রামের সাংবাদিকদের কল্যাণে তিনি এগিয়ে আসবেন আশাকরি।

সিইউজে সভাপতি তপন চক্রবর্তী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গ্রামকে শহর করার যে ভিশন ঘোষণা করেছেন সেক্ষেত্রে মডেল রাউজান।

সিআইপি এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সমিতি ওমানের সভাপতি ইয়াছিন চৌধুরী বলেন, রাউজানকে সন্ত্রাসমুক্ত এক সুন্দর জনপদে পরিণত করেছেন এমপি ফজলে করিম চৌধুরী।

স্বাগত বক্তব্যে রাউজান সাংবাদিক পরিষদ, চট্টগ্রাম এর সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম বলেন, রাউজান সব সময় এগিয়ে। রাউজানে আমরা একজন অভিভাবককে পেয়েছি যিনি সবসময় রাউজানের উন্নয়ন নিয়ে ভাবেন।

অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি মোহাম্মদ মনজুর কাদের, সিইউজের যুগ্ম সম্পাদক সাইদুল ইসলাম, প্রেস ক্লাবের সমাজসেবা ও আপ্যায়ন সম্পাদক আল রাহমান এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক খোরশেদুল আলম শামীমকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কনফিডেন্স সিমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান লায়ন রূপম কিশোর বড়ুয়া, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেব দুলাল ভৌমিক, সিইউজে সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম, সাবেক সিভিল সার্জন সরফরাজ খান চৌধুরী বাবুল, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, রাউজান পৌরসভার প্যানেল মেয়র বশির উদ্দিন খান, রাউজান সমিতি দুবাইর সভাপতি খোরশেদ জামান, প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা শেখ নবী প্রমুখ।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অভিষেক ও সংবর্ধনা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলী ও সদস্যসচিব সৈয়দ আলমগীর সবুজ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅবশেষে তাদের বিয়ে হলো
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬