আসন্ন দুর্গাপূজা ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা

রূপম চক্রবর্ত্তী | শুক্রবার , ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

শত শত বছর ধরে বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, সমপ্রদায়ের মানুষ বাংলাদেশে বাস করছে। বাংলাদেশের প্রায় সবাই নিজ নিজ ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এই শ্রদ্ধা থেকেই মানবতার সৃষ্টি হয়। এই মানবতাকে ধ্বংস করার জন্য একটি অশুভ চক্র বার বার চেষ্টা করেছে। গত কয়েকদিন আগে ইসলাম ধর্মের বড় উৎসব ঈদ উদযাপিত হয়েছে। আগামীকাল ০১ অক্টোবর হতে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় সনাতনী সমপ্রদায় দুর্গাপূজা করবেন। পূজা যেহেতু পাঁচদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় সেহেতু পূজার দুই মাস আগে থেকে বিভিন্ন ধরনের পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হয়। সামপ্রতিক সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনা আমাদেরকে খুবই মর্মাহত করেছে। ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু সমপ্রদায়ের বাড়িঘরে আগুন এবং কিছু শিক্ষকের উপর ধারাবাহিক হামলার কারণে এদেশের অনেক পূজার্থী নিরাপত্তা নিয়ে সংকিত। বাঙালি সনাতনী সমপ্রদায়ের কাছে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজা। এই দুর্গাপূজা নিয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় কিছু উগ্রবাদী মানুষ দুঃখজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ছোট ছোট শিশুরা উদগ্রীব হয়ে বসে থাকে কখন দুর্গাপূজা আসবে, কখন তারা নতুন জামা কাপড় পড়ে আনন্দ করবে। ভক্তরা অপেক্ষা করে বসে থাকেন মাতৃ চরণে অঞ্জলি দিয়ে ভক্তি ও প্রেমে নিজেকে সমৃদ্ধ করবে। স্মরণ করা যেতে পারে গত বছর ২০২১ সালে সকালে কুমিল্লায় পবিত্র কোরান শরীফ অবমাননার কথিত অভিযোগ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করতে গেলে তারা তোপের মুখে পড়ে, বাঁধে সংঘর্ষ। রংপুরের পীরগঞ্জ, নোয়াখালী, চাঁদপুরে পূজা মণ্ডপে ভাংচুর ও সংঘর্ষ হয়, সেখানে প্রাণহানিও ঘটে। চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও কর্ণফুলী উপজেলা, কক্সবাজারের পেকুয়া, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে ও ফেনীতে বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে হামলা করা হয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থার কিছু ঘাটতি ছিল বলেই হামলাকারীরা এই ধরনের সামপ্রদায়িক হামলা করার সাহস পেয়েছিল। যারা হামলা করেছিল তাদেরকে যদি অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে বিচারের মাধ্যমে একটা নিদর্শন রাখা যেত খুবই ভালো হতো। যারা হামলা করে তারা খুবই আত্মবিশ্বাসী। অনেকেই ভুলে গেছি অসামপ্রদায়িক চেতনায় লালিত হয়েই ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। সব ধর্মের মানুষের আত্মত্যাগ এবং ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বাংলাদেশ বেশ কিছু জায়গায় এগিয়ে গিয়েছে এটা আমাদের জন্য সুখকর সংবাদ। অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নত হয়েছে। মেট্রোরেলের সাহায্যে মানুষ চলাফেরা করতে পারবে। বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু ব্যবহার করে মানুষ চলাফেরা করছে। ঘরে ঘরে ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে গেছে। ঘরে বসেই মানুষ পৃথিবীর কোথায় কী হচ্ছে জানতে পারছেন। উন্নয়ন আর সমৃদ্ধিতে দেশ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মানুষের মানবতাবোধ এবং দেশের সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের নিরাপত্তা জন্য প্রয়োজনীয় কাজ পরিচালনা করাও সরকারের উচিত। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও দেশে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় তৈরী হয়নি। বাংলাদেশে বসবাসরত সংখ্যালঘুদের অধিকার ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সবার আগে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় করার যে দাবি বিভিন্ন মহল থেকে করা হয়েছে তার অবশ্যই প্রয়োজনীয়তা আছে। পাশাপাশি এ দেশে বসবাসরত হিন্দুদেরকে যেন কোনোভাবেই আর বিভাজিত ও নির্যাতিত হতে না হয় তার জন্য আইনের সংস্কার করার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করছি। অনেক দেবোত্তর সম্পত্তি বিভিন্ন ভূমিদস্যুরা দখল করে নিয়েছে। দেবোত্তর সম্পত্তিগুলো যাতে দখলমুক্ত হয় তার জন্য আইনের কঠোর প্রয়োগ হওয়া দরকার। দুর্গোৎসবে তিন দিনের সরকারি ছুটির দাবি জানিয়ে আসলেও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যখন কোনো আশ্বাস আসেনি যা খুবই দুঃখজনক। সপ্তমী থেকে নবমী অফিস খোলা থাকার কারণে লক্ষ লক্ষ সনাতনী সমপ্রদায় পূজায় বসে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে পারছেনা। এই উৎসব বছরে একবার আসে। তাই সকল সনাতনী একসাথে পূজা উদযাপন করতে ইচ্ছুক। আমি সম্মানিত প্রধানমন্ত্রী মহোদয়াকে বিনম্র অনুরোধ জানাবো আপনি দয়া করে আমাদের প্রতি দৃষ্টি প্রদান করুন। আমি মনে করি আপনি চাইলে আপনার ক্ষমতাবলে এই বছর থেকে আসন্ন দুর্গাপূজায় কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা সহ সনাতনী সমপ্রদায়ের বিভিন্ন দাবি পূরণ করে দুর্গাপূজায় ৩ দিনের ছুটির ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ জানাবো আইন প্রয়োগ কঠোর করে পূজা ও ধর্মীয় উৎসব নিরাপদ করার পাশাপাশি সমাজ ও রাজনীতি থেকে সামপ্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতা নির্মূল করে অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণ করার জন্য জন সচেতনতা তৈরি করার বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করতে পারেন। প্রত্যাশা করছি জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় সবাই মিলে মিশে থাকবে পাশাপাশি সবাই নিজের দেশের জন্য কাজ করবেন এবং রাষ্ট্র বিরোধী যেকোনো কাজকে ঘৃণা করবেন।
লেখক : প্রাবন্ধিক

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাফ বিজয়ী আমরা নারী, আমরাই পারি
পরবর্তী নিবন্ধজুম্‌’আর খুতবা