আমের ‘নতুন রাজধানী’

খাগড়াছড়িতে বেড়েছে আবাদ, যাচ্ছে সারা দেশে

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | শনিবার , ২৯ মে, ২০২১ at ৩:৫০ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়িতে বাড়ছে আম অর্থনীতির পরিধি। অনুকূল আবহাওয়া ও মাটি চাষের উপযোগী হওয়ায় প্রতিবছরই বাড়ছে বাগানের সংখ্যা। ছোট-বড় মিলিয়ে জেলায় বর্তমানে আম বাগানের সংখ্যা প্রায় ৭ শতাধিক। চলতি মৌসুমে প্রায় ৩ হাজার ৩৬৯ একর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এক সময়ের অনাবাদী পাহাড়ে এখন আম গাছের সারি। সেখান থেকে উৎপাদিত আম্রপালি, রাংগুয়াই, বারি-৪ প্রভৃতি উন্নত জাতের আম যাচ্ছে সারাদেশে। বলা হচ্ছে, আম উৎপাদনের নতুন রাজধানী এখন খাগড়াছড়ি।
স্থানীয়রা জানায়, খাগড়াছড়ির ৯ উপজেলায় আম চাষির সংখ্যা বাড়ছে। জেলা সদর, দীঘিনালা, মাটিরাঙা, গুইমারা, পানছড়িসহ সবখানেই বাড়ছে আমের আবাদ। শুধু জেলা সদরের ভাইবোন ছড়া ইউনিয়নের জোরমরম ও বানছড়া এলাকায় আম চাষির সংখ্যা প্রায় ১৫০ জন।
জানা যায়, সুজন চাকমা ২০০৭ সালে এই এলাকায় প্রথম বাগান গড়ে তোলেন। বিশ একর পাহাড়ি টিলাতে তিনি ২ হাজার আম গাছ রোপণ করেন। বর্তমানে তার বাগানের পরিমাণ ৭৬ একর। তিনি জানান, প্রথম বাগান করার সময় গ্রামবাসী আমাকে উপহাস করত। এত আম কে খাবে, বিক্রি করবে কোথায়, নানা কথা! তারা আমাকে সেগুন বা রাবার চাষ করার পরামর্শ দিত। তবে এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। আমার সাফল্য দেখে পুরো গ্রামে চাষির সংখ্যা বেড়ে দেড়শ। প্রত্যেকে দুই থেকে পাঁচ একরের চাষ গড়ে তুলেছে। বছরে আম বিক্রি করে আয় করছে ২ থেকে ১০ লাখ টাকা।
সরেজমিনে বানছড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে ছোট বড় টিলা। এসব টিলায় চাষ হয়েছে আম্রপালি, রাংগুয়ায়, বারি-৪ সহ বিভিন্ন জাতের আম। প্রতিটি বাগান ভরে উঠেছে কাঁচা-পাকা আমে।
এলাকার স্থানীয় আম চাষী সুমন চাকমা, প্রশান্ত চাকমা ও কিরণময় চাকমা জানান, প্রতিটি পরিবার আম বাগান গড়ে তুলেছে। প্রতিবছরই বাড়ছে বাগানের সংখ্যা। প্রতি একর জমিতে ২ থেকে ৫ টন পর্যন্ত আম উৎপাদন হয়। প্রতিটি পরিবার বাগান থেকে ২ থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করে।
জেলার মহালছড়ি এলাকায় ধুমনিঘাট এলাকায় ৩৫ একরের বাগান গড়ে তুলেছে মহালছড়ি ফল বাগান মালিক সমিতির সভাপতি হ্ল্যাশিমং চৌধুরী। তিনি জানান, ২০১৫ সালে বাগান গড়ে তুলেছি। বাগানে ৬০ প্রজাতির আম রয়েছে। গত মৌসুমে প্রায় ১০ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছি। চলতি মৌসুমে উৎপাদন আরো বাড়বে।
খাগড়াছড়ির মায়াবিনী লেক এলাকায় আম্রপালি, রাংগুয়াই ও বারি-৪ জাতের আমের বাগান গড়ে তুলেছে অংহ্ল্যা মারমা। তিনি বলেন, বাগানে ১৩শ আম গাছ রয়েছে। এবার আমের ভালো ফলন হয়েছে। ফলন তোলার আগে প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে বাগানটি ২০ লক্ষ টাকায় বিক্রি করতে পারব বলে আশাবাদী।
খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ড. মুন্সী রাশীদ আহমেদ জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৫ থেকে ২০ বছর আগে আম চাষ শুরু হলেও গত ১০ বছর ধরে ব্যাপকভাবে চাষ শুরু হয়। প্রতিবছরই নতুন করে আমের বাগান সৃজিত হচ্ছে। পাহাড়ের মাটি কিছুটা অম্লীয় ভাবাপন্ন এবং ঢালু অংশে চাষাবাদ করার কারণে সূর্যের আলোও বেশি পায়। ফলে বাগান ভালো হয়। এখানে যে আম হয় তা আকারে বড় হয় এবং মিষ্টতা বেশি হয়।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মর্ত্তুজ আলী জানান, চলতি মৌসুমে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩৬ হাজার ৪শ মেট্রিক টন। একসময় খাগড়াছড়িতে আম উৎপাদন হত যৎসামান্য। অথচ এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খাগড়াছড়ির আম যাচ্ছে। স্বাদে ও গুণে এখানকার আম বিশেষত আম্রপালি সারাদেশে সমাদৃত। তিনি জানান, খাগড়াছড়িতে আম চাষের উপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। বছরে আম চাষকে কেন্দ্র করে প্রায় ১৬০ কোটি টাকার লেনদেন হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবন্ড ব্যবস্থাপনায় অটোমেশন কতদূর
পরবর্তী নিবন্ধহলো না হোয়াইটওয়াশ