বন্ড ব্যবস্থাপনায় অটোমেশন কতদূর

প্রকল্পের মেয়াদ প্রায় ৫ বছর শেষ হলেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৯ মে, ২০২১ at ৩:৪৯ পূর্বাহ্ণ

বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে ‘বন্ড অটোমেশন’ প্রকল্প হাতে নেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রকল্পের নির্ধারিত ৩ বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আরো দুই বছর বাড়ানো হয়। বর্ধিত দুই বছরের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৩০ জুন। তবে প্রকল্পের দুই মেয়াদ প্রায় ফুরিয়ে গেলেও কাজের উল্লেখ্যযোগ্য অগ্রগতি হয়নি তেমন। এনবিআরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে মাঝখানে প্রকল্পের কাজে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটে। তবে এখন সফটওয়্যার তৈরির কাজ চলছে। এরপর মডিউল সেটআপের কাজ শুরু হবে। প্রকল্পের মেয়াদ যেহেতু শেষ হয়ে যাচ্ছে, স্বাভাবিকভাবে মেয়াদ বাড়ানো হবে।
জানা গেছে, বর্তমানে সারাদেশে সাড়ে ৬ হাজারের কাছাকাছি বন্ড লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই বিশাল সংখ্যক প্রতিষ্ঠানকে এক সাথে অটোমেশনের আওতায় আনতে একটু সময় লাগবে। তবে সব প্রতিষ্ঠানকে অটোমেশনের আওতায় আনা সম্ভব হলে বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত পণ্য খোলা বাজারে বিক্রি ঠেকানো যাবে। ফলে সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে। চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কর্মকর্তারা বলছেন, বন্ড ব্যবস্থাপনায় অটোমেশন হয়ে গেলে কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধি পাবে। প্রায় সময় বিভিন্ন বন্ডেড প্রতিষ্ঠানের গুদাম পরিদর্শন করে অনিয়ম চিত্র দেখা যায়। দেখা যায়, বন্ড সুবিধায় আমদানি করা পণ্য গুদামে পাওয়া যায় না। প্রায় সময় প্রতিষ্ঠানমালিক পণ্য অন্যত্র সরিয়ে নেন কিংবা খোলা বাজারে বিক্রি করে দেন। ফলে সরকারও প্রচুর রাজস্ব হারায়। এছাড়া কাস্টমস বন্ড অফিসেও জনবলের সংকট রয়েছে। তাই নিয়ম করে সকল প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে বন্ড ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি অটোমেশন করা গেলে কম্পিউটারে বসেই কোন প্রতিষ্ঠান বন্ড সুবিধায় কি পরিমাণ পণ্য আমদানি করেছে, মজুদ কত এবং তা রপ্তানি করেছে তা সহজেই নজরদারি করা সম্ভব হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট চট্টগ্রামের কমিশনার একেএম মাহাবুবুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, কয়েক সপ্তাহ আগে এনবিআর থেকে বন্ড অটোমেশন সংক্রান্ত একটি চিঠি পেয়েছি। সেখানে বলা হয়েছে, সফটওয়্যার তৈরির জন্য ভেন্ডর নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের মেয়াদও বাড়বে শুনেছি। বন্ড ব্যবস্থাপনায় পুরোপুরি অটোমেশন হয়ে গেলে তখন আর কেউ সহজে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করতে পারবে না। বন্ড অফিসারদের কাজও আরো সহজ হয়ে যাবে।
পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, বন্ড অফিসের কর্মকর্তারা প্রায় সময় ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ তুলেন। এটি কিন্তু ঠিক না। পোশাক কারখানা মালিকদের রেজিস্টার চেক করলে সহজে দেখা যায় পণ্য সরানো হয়েছে কিনা। আমরা বন্ড সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি করি এবং পণ্য তৈরি করে রপ্তানি করি। তিনি বলেন, বন্ড অটোমেশন নিয়ে যখন থেকে কথা হচ্ছিল, তখন থেকেই আমরা এটিকে সাধুবাদ জানিয়ে আসছি। কারণ কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীর জন্য সবাই খারাপ হতে পারে না। অটোমেশন হয়ে গেলে বন্ড কাস্টমসের কর্মকর্তারা কার গুদামে কি পরিমাণ পণ্য আছে সেটি দেখতে পারবেন। এছাড়া কি পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়েছে, সেটি আরো সহজে চেক করা সম্ভব হবে। আমরা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ব্যবসা করতে চাই। সরকারকে রাজস্ব আদায়ে সহযোগিতা করতে চাই। তবে রাজস্ব আদায়ের প্রক্রিয়াটি অবশ্যই সহজ ও স্বচ্ছ হতে হবে। তাই অটোমেশন সিস্টেম যতদ্রুত সম্ভব চালু করা যাবে ততই আমাদের জন্য সুবিধা বলে মনে করি।
জানতে চাইলে এনবিআরের বন্ড অটোমেশন প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, বন্ড অটোমেশন প্রকল্পের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। এখন সফটওয়্যার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। যেহেতু প্রকল্পের মেয়াদ বাকি আছে আর এক মাস, তাই মেয়াদ আরো দুই বছর বাড়তে পারে। এই মেয়াদের মধ্যেই বন্ড অটোমেশন প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি সম্ভব হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅপহৃত পুত্রের শোকে মায়ের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধআমের ‘নতুন রাজধানী’