আমার আদর্শ আমার মেন্টর

ওসমান গণি মনসুর | রবিবার , ২৫ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ

[বরেণ্য সাংবাদিক হাসান শাহরিয়ার গত ১০ এপ্রিল ’২১ পরলোকগমন করেছেন। প্রায় ৬ দশকের সাংবাদিকতায় তিনি ভুবনখ্যাত মার্কিন সাময়িকি নিউজ উইক, দৈনিক ইত্তেফাক, পাকিস্তানের ডন, ইভিনিং ষ্টার, মর্নিং নিউজ, ভারতের ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও দ্য ডেকান হেরাল্ড, দি এশিয়ান এইজ, আমিরাতের খালিজ টাইমস পত্রিকায় সুনামের সাথে কাজ করেছেন। তিনি ইন্দিরা গান্ধী, নরসীমা রাও, চন্দ্র শেখর, কাশ্মীরের ফারুক আবদুল্লাহ, জেনারেল জিয়াউল হক, বেনজির ভুট্টো, নওয়াজ শরীফ, কম্বোডিয়ার জার্নালিস্ট প্রিন্স নরোদম সিহাপুক, জাপানের প্রধানমন্ত্রী তোসকি কাইফু, বিশ্বকাপ বিজয়ী ক্রিকেটার ইমরান খান ও নোবেল বিজয়ী মাদার তেরেসার মতো রাষ্ট্রনায়ক ও সেলিব্রেটিদের সাক্ষাতকার নিয়েছেন। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবের প্রেসিডেন্ট এবং কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের ২ বার আন্তর্জাতিক প্রেসিডেন্ট ছিলেন।]
শাহরিয়ার ভাইকে নিয়ে দু’কলম লিখব। কিন্তু কী লিখব? ‘তিনি বড় মাপের খ্যাতিমান সাংবাদিক। দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব বিশ্বসাংবাদিক অঙ্গনে দেশকে উজ্জ্বল করেছেন। বিভিন্ন পর্যায়ে সাংবাদিক সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দেশের প্রধানতম পত্রিকার শীর্ষ পদবিতে অধিষ্ঠিত ছিলেন। বহু খ্যাতনামা সংবাদমাধ্যমে দাপটে কাজ করেছেন। বিশ্বের বহু দেশের রাষ্ট্রপ্রধানসহ আলোচিত ব্যক্তিবর্গের সংশ্রবে এসেছেন। রিপোর্টিং জার্নাালিজমে তিনি কয়েক দশক অতুলনীয় এক অবস্থানে ছিলেন। একজন বিশেষজ্ঞ সাংবাদিক প্রশিক্ষক এবং সাংবাদিকতায় আধুনিক মননের প্রতীক!’
মানতেই হয় এসব কথার প্রতিটি শব্দই শতভাগ সত্য এবং তা সর্বজনস্বীকৃত। তাই আমি পেশাগত তার জীবনচরিত নিয়ে লেখার স্পর্ধা করি না। কেবল তার আলোকপথের অনুসরণ করতে গিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে যতটুকু সংশ্রবে ধন্য হয়েছি তা নিয়ে হরফে সাজাতে চাই। নির্দ্বিধায় বলি, তিনি আমার আদর্শ ও আমার মেন্টর।
অনেকের মতো আমি মাঝে মাঝে ভালো কোন বিষয়ে নিবন্ধ থেকে উদ্ধৃতি টুকে রাখি। চেষ্টা করি তা জীবনে মেলাতে কিংবা অন্যের সঙ্গে শেয়ার করতে। তেমনি একটি উদ্ধৃতি আজ হাসান শাহরিয়ারের জন্য জুড়াতে চাই। গড়ংঃ ংঁপপবংংভঁষ সবহ যধাব হড়ঃ ধপযরবাবফ ঃযবরৎ ফরংঃরহপঃরড়হ নু যধারহম ংড়সব হব িঃধষবহঃং ড়ৎ ড়ঢ়ঢ়ড়ৎঃঁহরঃু ঢ়ৎবংবহঃবফ ঃড় ঃযবস. ঞযবু যধাব ফবাবষড়ঢ়বফ ঃযব ড়ঢ়ঢ়ড়ৎঃঁহরঃু ঃযধঃ ধিং ধঃ যধহফ. তিনি আমাদের দেশের তেমনি এক বিরল সফল ব্যক্তিত্ব। আমি তাঁকে কেবল সাংবাদিক পরিচয়ের ব্রেকেটে বন্দি রাখতে চাই না। কারণ তার সঙ্গে আমার সাংবাদিকতার পাশাপাশি পারিবারিক বন্ধন, পরামর্শক এবং সফরসঙ্গী হিসেবে অধিকতর হার্দিক সম্পর্ক বিদ্যমান। ্তুডযবহবাবৎ ুড়ঁ ংবব ধ ংঁপপবংংভঁষ ঢ়বৎংড়হ, ুড়ঁ ড়হষু ংবব ঃযব ঢ়ঁনষরপ মষড়ৎরবং, হবাবৎ ঃযব ঢ়ৎরাধঃব ংধপৎরভরপবং ঃড় ৎবধপয যরস.্থ শাহরিয়ার ভাই নিটোল গুণেমানেও তেমনি সুন্দর এক সজ্জন মানুষও। তিনি সবসময় অন্যের মাঝে সুন্দর প্রত্যক্ষ করেন। হয়ত তাই তাকে কারো সঙ্গে বিরোধে জড়াতে বা তার বিরোধী পক্ষ আমার নজরে আসেনি-কখনো শুনিনি। এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ জন লেননের (বিটলস) একটি উক্তি তার উদ্দেশ্যে নিবেদন না করে পারছি না। ্তুওঃ সধঃঃবৎং হড়ঃ যিড় ুড়ঁ ষড়াব, যিবৎব ুড়ঁ ষড়াব, যিবহ ুড়ঁ ষড়াব ড়ৎ যড় িুড়ঁ ষড়াব. ওঃ সধঃঃবৎং ড়হষু ঃযধঃ ুড়ঁ ষড়াব্থ. প্রকৃতই আমরা তাকে ভালোবাসি। তিনি নিখাদ ভালোবাসার মানুষ বলে।
সালটা ছিল ১৯৭৯। আমি চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নে দ্বিতীয় দফায় সাধারণ সম্পাদক। চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের বার্ষিক সম্মেলন। এ সম্মেলন আয়োজন নিয়ে বহু কথা লেখা যায়। আমি সেদিকে যাচ্ছি না। তবে এতটুকু বলা যায়, ঢাকার বাইরে এটি ছিল সাংবাদিকদের এই সর্বোচ্চ সংগঠনের প্রথম সম্মেলন। স্বাধীনতা-উত্তর দেশে খ্যাতিমান সব সাংবাদিকের এক অনন্য মিলনমেলা বসেছিল চট্টগ্রামে। সন্তোষ গুপ্ত, নির্মল সেন, আনোয়ার জাহিদ, আহমেদ হুমায়ূন, গিয়াস কামাল চৌধুরী, হাবিবুর রহমান মিলন, নজরুল ইসলাম, গোলাম সারওয়ার, রিয়াজউদ্দীন আহমদ, ইকবাল সোবহান চৌধুরী থেকে শুরু করে সে-সময়ে আলোচিত বরেণ্য সকল সাংবাদিকের সরব উপস্থিতিতে উচ্ছ্বাসে মেতেছিল চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব। সেই আয়োজনে অন্যতম ডেলিগেট হিসেবে ছিলেন তরুণ সাংবাদিকদের স্বপ্নের নায়ক দৈনিক ইত্তেফাকের চিফ রিপোর্টার হাসান শাহরিয়ার। কী কারণে জানি না, তার ঈগল-চোখ আমাকে অনুসরণ করছিল। সম্মেলনের শেষ দিনে তিনি আমাকে একান্তে ডেকে বললেন, ‘তুমি ইত্তেফাকে কাজ করবে? আমি একটু বিস্মিত। কোন উত্তরই দিতে পারলাম না। স্মিত হেসে, প্রশ্ন এড়িয়ে গেলাম। শাহরিয়ার ভাই আমার মনের অবস্থা বুঝে নিলেন। বললেন, কবে ঢাকা যাবে? বললাম, ক’দিন পর। ঢাকা এলে অবশ্যই আমার সঙ্গে দেখা কর। তার এই কথাটা মাথায় রাখলাম। কিন্তু মনে গাঁথিনি। বিস্মিত হয়েছিলাম এজন্য, তখন ইত্তেফাকের প্রতিনিধি/রিপোর্টার হওয়া মানে সাংবাদিকদের রাজ্যে সেনাধ্যক্ষ হওয়া -এ যেন এক অকল্পনীয় আহ্বান। কিন্তু তিনি এমনই পারফেক্ট ডিসিশন মেকার ছিলেন যে, সম্মেলন সমাপ্তির আগে নয়। পরে আমার কাছে কথাটা কানে দিলেন। অন্যথায় হয়তো এমন শোনাতো যে, সম্মেলনের নির্বাচনে প্রভাবিত করার কোন ট্রিকস। নির্বাচনে তো তেমনি অনেক কিছু ঘটে থাকে। কথাটা আমি পরে জেনেছিলাম। এমনি ছিল তার বিচারিক দৃষ্টিভঙ্গি।
যথারীতি আমি দু’মাসে আরো দু’বার ঢাকায় গেছি। কিন্তু শাহরিয়ার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাইনি। তার সেই আহ্বান মনে জমেনি; সম্ভবত আপনে আস্থার দুর্বলতা। আরো কয়েকমাস পর একবার ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবে আমাকে পেয়ে একটু ধমকে পরদিন সকালে ইত্তেফাক অফিসে তার সঙ্গে দেখা করতে বললেন। এবার অনেক সাহসে গেলাম। তিনি আমাকে সরাসরি নিয়ে গেলেন পত্রিকার সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের কক্ষে। পাঁচ-সাত মিনিটের সাক্ষাৎ। তার একটাই কথা মনে আছে, ‘ও আপনি মনসুর। শাহরিয়ার সাহেব আপনার কথা বলেছেন। ঠিক আছে কাজ করেন মন দিয়ে। ওখানে (চট্টগ্রামে) মঈনুল আলম সাহেব আছেন, আমাদের পারিবারিকভাবে ঘনিষ্ঠ। তাঁর সঙ্গে মানিয়ে চলবেন। তবে আপনার দায়িত্ব আপনারই।’ সেখান থেকে বেরিয়ে শাহরিয়ার ভাই বললেন, কাল এগারটার মধ্যে এপ্লিকেশন আমার ডেস্কে যেন পাই। আমি তখন স্থানীয় দৈনিক স্বাধীনতার মুখ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। পারিবারিক চাপ ছিল নামে মাত্র বেতনের এমন স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিকতা ছেড়ে উচ্চ শিক্ষা অব্যাহত রাখতে। এজন্য লন্ডনে পাঠানোর টোপও ছিল। এমনি সময়ে ১৯৮১ সালের এপ্রিল মাসে দৈনিক ইত্তেফাকে যুক্ত হওয়া (মাঝে আরো অনেক নাটকীয় পর্যায় ছিল)। শাহরিয়ার ভাইয়ের একটি ‘মন্ত্র’ নিয়ে কাজ শুরু করি। তা ছিল ‘ইত্তেফাকে ঢুকেছো, কিন্তু টিকে থাকার দায়িত্ব তোমার নিজের। আমি বা অন্য কেউ নয়।’ ঠিক ২৬ বছর ইত্তেফাকে কাজ করেছি। দাপুটে সময় কাটিয়েছি। মজার ব্যাপার হলো, ২০০৭ সালে ইত্তেফাক থেকে স্বেচ্ছাবসরে আসার পর শাহরিয়ার ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আরো জমে ওঠে। কাকতালীয়ভাবে কাছাকাছি সময়ে তিনিও ইত্তেফাক ছেড়ে আসেন। আমাদের সখ্য ব্যক্তিগত থেকে পারিবারিক পর্যায়ে গড়ায়। আমি চট্টগ্রামে দি ডেইলি পিপলস্‌ ভিউ পত্রিকার সম্পাদক হলাম। আমার অভিভাবক হয়ে সকল সংবাদকর্মী নিয়োগ ও প্রধান সম্পাদক হলেন তিনি। তার নির্দেশ ও পরামর্শে আমার নতুন পথ চলা। কমনওয়েলথ জার্নাালিস্ট এসোসিয়েশন (সিজেএ) সম্পৃক্ততা আমাকে তার আরো কাছে নিয়ে যায়। ২০০৩ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের প্রধানতম ও বৃহত্তম অভিজাত হোটেলে প্রথমবারের মত সিজেএ’র আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন হল। বর্ণাঢ্য এক রমরমা আয়োজন। এদেশের সাংবাদিকদের এমন এবং এতবড় আন্তর্জাতিক আয়োজন সেই প্রথম, যার রূপকার হাসান শাহরিয়ার। তার অনন্য সাংগঠনিক দক্ষতায় সবাই হতবাক। দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রীসহ বহু মন্ত্রী, দেশ-বিদেশের অনেক বরেণ্য, গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ অংশ নেন সে সম্মেলনে। হাসান শাহরিয়ার প্রথমবারের মতো সিজেএ’র আন্তর্জাতিক সভাপতি নির্বাচিত হন। সে এক মহা গৌরবোজ্জ্বল ক্ষণ। ৫৪টি কমনওয়েলথ দেশের মাথায় মুকুট বাংলাদেশে তখন থেকে সিজেএ’র কার্যক্রমে আমারও সম্পৃক্ততা বাড়ে। দ্বিতীয় দফা তিনি পুনর্বার আন্তর্জাতিক সভাপতি নির্বাচিত হন ২০০৮ সালে মালয়েশিয়ার কুচিং (কটঈঐওঘএ) শহরের সম্মেলনে। ২০১২ সালে ‘মাল্টা’ সম্মেলন পর্যাপ্ত রেকর্ড সময় ধরে তিনি সিজেএ প্রধান ছিলেন। তাঁর কীর্তিমান এই দায়িত্ব পালনের জন্য ঐ সম্মেলনে তাঁকে প্রেসিডেন্ট ইমেরিটাস হিসেবে সম্মানিত করা হয়। বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রপ্রধান, স্পীকার থেকে শুরু করে মন্ত্রী-আমলাদের সঙ্গে তার কনভার্সেশন, প্রেজেন্টেশন, স্মার্টনেস আমাদের মুগ্ধ ও উদ্বুদ্ধ করত। স্রষ্টাপ্রদত্ত তার মোহময় হাসি জাদুকরের মতো সম্মোহিত করে। এ বিষয়গুলো চর্বিতচর্বণ মনে হলেও আমার চর্মচক্ষে দেখা বলে, শাহরিয়ার ভাইকে নিয়ে আমার এই উচ্ছ্বাস এবং গর্বিত আস্ফালন।
সত্যি বলতে কি, সেই ছেলেবেলার কল্পনার রাজ্যে সাংবাদিক চরিত্রের বাস্তব সাক্ষাৎ পেয়েছিলাম হাসান শাহরিয়ারের মাধ্যমে। নয় তো সেই চরিত্রটি অধরা মনে হতো রূপকথার রাজকুমার-রাজকন্যার মতো।
আমি বেড়াতে ভালোবাসি, আর আমার সৌভাগ্য হয়েছিল কয়েকটি দেশে শাহরিয়ার ভাইয়ের সফরসঙ্গী হওয়া। বিশেষ করে ত্রিনিদাদ টোবাগো, ইতালি, সিসিলিস, মাল্টা, পোল্যান্ডের অভিজ্ঞতা আমার সারা জীবনের মধুর স্মৃতি ও অহংকার হয়ে থাকবে। সাধারণত বিদেশভ্রমণে একটা ভিন্নধরনের মানসিক টেম্পরোমেন্ট থাকে। এই জায়গায় শাহরিয়ার ভাইও বেশ ইন্টারেস্ট রাখেন। তবে তখন হলো, তিনি বেশ আয়েসী। তার কথা হলো, ‘উত্তম লভ্যে বঞ্চিত হওয়া বাঞ্চনীয় নয়।’ যে সুযোগ সাধ্যে থাকে সে সুযোগ গ্রহণ করাই উচিত। সম্ভবত ২০১০ সালে ত্রিনিদাদ টোবাগোতে কমনওয়েলথ হেড অব স্ট্রেটস (চোগাম) সম্মেলনে আমি ছিলাম বাংলাদেশ থেকে তার একমাত্র সাংবাদিক সহযোগী। লন্ডন থেকে ‘বারবাডোস’ হয়ে ফ্লাইট চেঞ্জ করে ‘পোর্ট অব স্পেন’ (ত্রিনিদাদ টোবাগোর রাজধানী) যেতে হয়। বারবাডোসে ট্রানজিট বিরতি প্রায় ছয় ঘণ্টা। বিমানবন্দর থেকে আধঘণ্টার ড্রাইভে বারবাডোসের মূল শহর। সমুদ্রপাড়ে ছবির মতো ছোট্ট শহর। অন্যসময় হলে এই ছয় ঘণ্টা হয়ত এয়ারপোর্টে কাটিয়ে দিতাম। কিন্তু শাহরিয়ার ভাই তা করলেন না। ঘণ্টাখানেক ঘুরে ফিরে কাছে চার তারকা হোটেলে রুম নিয়ে থেকেছেন। সফর সুখময় হোক। এই তার চাওয়া। ত্রিনিদাদ টোবাগো কমনওয়েলথ মিডিয়া সেন্টারে তিনি একাধিক সেশনে সভাপতিত্ব ও প্রধান আলোচক ছিলেন। সেসব অনুষ্ঠান স্থানীয় টিভিতেও সরাসরি সম্প্রচার করেছিল। এর মাঝে একটি ঘটনার জন্য হাসান শাহরিয়ারের চরিত্র আমার সারা জীবনের আদর্শ পুরুষ উদাহরণ হয়ে থাকবে। ঘটনাটি ছোট্ট। ত্রিনিদাদের রাষ্ট্রীয় টিভি থেকে বলা হলো পরদিন সকালে তার একটা লাইভ ইন্টারভিউ নিতে চায়। তিনি রাজি হলেন, কিছু পরে তাকে বলা হলো সকাল ৭টার মধ্যে টিভি স্টেশনে পৌঁছাতে হবে নিজ উদ্যোগে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে আপত্তি তুললেন। বললেন, এখানে আমার নিজস্ব কোন গাড়ি নেই। তোমরা যদি নিয়ে যাও এবং পৌঁছে দাও তবে যাওয়া হবে। বলা হলো, এত ভোরে তাদের সীমিত গাড়িগুলো ব্যস্ত থাকে। শাহরিয়ার ভাই আমাকে বললেন, এটা সম্মানের ব্যাপার, মর্যাদার ব্যাপার। তিনি সেই ইন্টারভিউতে যাননি। এই হলো আমার আদর্শ, স্বপ্নের রাজকুমার সাংবাদিক হাসান শাহরিয়ার। আপন ইন্টিগ্রেটি বজায় রাখতে তিনি কোনো ক্ষেত্রেই কম্প্রোমাইজ করেননি। সহকর্মী-স্বজনদের ভালোবাসায় সিক্ত থেকেছেন। ট্রফি-সনদের তকমা বা টোপ তাকে নতজানু করেনি কখনো।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক; সম্পাদক, ডেইলি পিপলস্‌ ভিউ, প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, দৈনিক পূর্বদেশ, চট্টগ্রাম

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশ হতে দেশান্তরে
পরবর্তী নিবন্ধএক্স হাজবেন্ডের কারেন্ট গার্লফ্রেন্ডের জন্মদিন!