আমাকে সাইজ করার চেষ্টা করলে নিজেরাই সাইজ হয়ে যাবেন : নজিবুল বশর

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:২৩ পূর্বাহ্ণ

দুই পুত্রের বিরুদ্ধে প্রায় ৪০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের (দুর্নীতি দমন কমিশন) মামলার পর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তরিকত ফেডারেশন চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমপি। তিনি বলেন, ‘আমার মুখ খোলাবেন না। মুখ খুললে সরকারের অসুবিধা হয়ে যাবে। আমি আপনাদের (আওয়ামী লীগের) সঙ্গে আছি। আমাকে সাইজ করার চেষ্টা করলে নিজেরাই সাইজ হয়ে যাবেন। আমি ১৪ দলীয় জোটে আছি এবং থাকবো। আমার জন্য অনেক দেশ কথা বলবে, বিএনপিকে ঘরে ঢোকানো সম্ভব, নজিবুল বশরকে নয়।’ তিনি দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘কমিশনার মোজাম্মেল সাহেব, আপনি সাইন (স্বাক্ষর) করেছেন। শোনেনআপনার বাড়ি মাদারীপুর। আমি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে (যুদ্ধাপরাধী) বলেছিলামমাইজভাণ্ডার ভক্তদের বললে আপনার বাড়ির একটা ইটও থাকবে না, যদি আমরা ফতোয়া দিই, আপনার বাড়ির ইট সব খুলে নিয়ে আসবে। এটা আমি নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে বলেছিলাম। একই কথা আপনাকেও (দুদক কমিশনার) বলছি।’

তিনি সোমবার রাতে ফটিকছড়ির মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফ ময়দানে তার পিতা সৈয়দ শফিউল বশর মাইজভাণ্ডারীর ১০৪তম খোশরোজ শরীফ উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন। এর আগে রোববার নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর দুই ছেলে সৈয়দ তৈয়বুল বশর ও সৈয়দ আফতাবুল বশর সহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে ৩৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়১ এর সহকারী পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছেপ্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে সৈয়দ তৈয়বুল বশর ২০১১ সালের ২০ ডিসেম্বর ২০ কোটি টাকা এবং সৈয়দ আফতাবুল বশর ১৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা শর্তসাপেক্ষে পাঁচবছর মেয়াদী ঋণের জন্য আবেদন করেন।

দুদক সূত্র জানায়, আবেদনের দুইদিন আগেই প্রাইম ফাইন্যান্সের বোর্ড সভায় ঋণ দুটি অনুমোদন হয়। এ ছাড়া ঋণ মঞ্জুরে নানা অনিয়মও হয়েছে। নথিপত্র পর্যালোচনা করে দুদক আরও দেখতে পায়, ব্যক্তিগত প্রয়োজন মেটানোর জন্য তারা এই ঋণ নেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন কর্মকর্তাসহ এমপিপুত্ররা ঋণের শর্ত ভঙ্গ করে স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেন।

সভায় উপস্থিত মাইজভাণ্ডার ভক্তদের উদ্দেশে সৈয়দ নজিবুল বশর বলেন, ‘মামলা করেছে, কী মামলা? ৩৯ কোটি টাকা, এর চেয়ে কিছু বেশি। ধরেন, ৪০ কোটি টাকা নিলাম। এর মধ্যে ১০ কোটি টাকা জমা দিলাম, তাহলে সেটি কী আত্মসাৎ হয়? ১০ কোটি টাকা যে জমা হয়েছে দুদক সেটা মামলায় উল্লেখ করেনি। দুদক নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী এমপিকে চিনে নাই, যাতা কমেন্ট করতেছে সহকারী পরিচালক।’

উচ্চ আদালতে দুদকের মামলা চ্যালেঞ্জ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রিট করব। যদিও আমাকে নিষেধ করা হয়েছে, তবুও আমি রিট করব। আমার জন্য, আমার ছেলের জন্য মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফ কলঙ্কিত হলে আমার তো মরে যাওয়া উচিত। এটি শুধু রাজনীতির জন্য বলিনি। সব জায়গায়, টিভির স্ক্রলে, পত্রিকায় লিখেছে সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, নামের পাশে মাইজভাণ্ডারী লিখেছে। এ জন্য রিট করব। কারণ মাইজভাণ্ডারের একটি সেন্টিমেন্ট আছে। তাই আমি হাইকোর্টে রিট করব। দুদককে চ্যালেঞ্জ করব। আমার ছেলে বলছে, এই মামলায় কী হবে জানি না। আমি জানি এই মামলা মরা, কিছুই হবে না। মিডিয়া শুধু শুধু অতিরঞ্জিত করে ফেলতেছে। আমরা টাকা মেরে খাই নাই। চরিত্রহনন করছে, দুদক করছে। এটা ঠিক হচ্ছে না। দুদকের সঙ্গে কে জড়িত সেটি সরকার বের করুক।’

হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ‘মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফ এটি আধ্যাত্মিক জগতের প্রাণকেন্দ্র। মাইজভাণ্ডারকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে। আমাকে সাইজ করার চেষ্টা চলছে, সাইজ নিজেরা হয়ে যাবেন। এখানে যারা হাত দিয়েছে, তাদের হাত পুড়ে গেছে।’

সরকারের সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই মন্তব্য করে নজিবুল বশর বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি সরকার এটি করেনি। কেউ চেষ্টা করছে সরকারের সঙ্গে দূরত্ব করার জন্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলব, আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, আপনি বের করেন কারা এটি করছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারকে সহযোগিতা করতে বলেছিলেন জানিয়ে তরিকতের এই নেতা বলেন, ‘সহযোগিতা তো করেছি। এখনও করে যাচ্ছি। কওমি মাদরাসার সাথে গণ্ডগোল, আমি সরকারকে সহযোগিতা করেছি। করি নাই? সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি কী অবস্থা করেছিল? আমেরিকা কি করেছিল? সেটি ঠেকিয়েছে কে? সরকার আপনি? একমাসও হয় নাই আপনার সাথে আমার কথা হয়েছে। আমি আপনাকে বলেছি, এবারও আপনি প্রধানমন্ত্রী হবেন, নির্বাচন হয়ে যাবে। আল্লাহ চাইলে এই ফটিকছড়ি থেকে আমি আবার নির্বাচন করব। আমি সেই ব্যক্তি যে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করিয়েছি। আমার সাহস হয়েছে, আপনাদের সাহস হয় নাই নিজামী মুজাহিদদের বিরুদ্ধে মামলা করতে। তাদের জেলে ঢুকিয়েছি, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হয়েছে। যদি আমি না থাকতাম, আপনারা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতেন না। তাদের ফাঁসিও হতো না।’

এমপি পদ নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘যারা আমার এমপি পদ নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে, তারা মাজার বিরোধী, তরিকত বিরোধী, মাইজভাণ্ডার বিরোধী, আহলে সুন্নত বিরোধী। তারা বঙ্গবন্ধুকে প্রকাশ্যে গালি দিয়েছে। এই জায়গায় আমি বাধা দিয়ে যাব। আমরা মৃত্যুকে ভয় পাই না। মৃত্যুর ভয় নেই। কেউ কেউ ভুলে গেছে মাইজভাণ্ডারী কে? আমার জন্য অনেক দেশ কথা বলবে। বিএনপিকে ঘরে ঢোকানো সম্ভব, নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীকে না। এটা ১৯৯১ সাল না, ২০২৩ সাল। ওইদিন চলে গেছে। সরকার আসবেযাবে, আমার অবস্থান ঠিক থাকবে।’

সভায় সংসদ সদস্যের ভাই হাবিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, তার পুত্র মাহতাবুল বশর এবং এমিপপুত্র তৈয়বুল বশর বক্তব্য রাখেন।

আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রতিক্রিয়া : সোমবার রাতে মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের সভায় দুদকের মামলা নিয়ে নজিবুল বশর ও তার বড় ছেলে তৈয়বুল বশরের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ফটিকছড়িতে আলোচনাসমালোচনার ঝড় উঠেছে। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মহুরী বলেন, ‘নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী সরকার ও দুদককে নিয়ে কিছু কথা বলেছেন। তা আমি ফেসবুকে শুনেছি। অবশ্যই তার এসব কথা আমরা আমলে নিইনি। বিষয়টি হচ্ছে দুদক মামলা করেছে তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে। এখন আদালত এবং দুদকের মুখোমুখি হবেন তারা। যদি অর্থ আত্মসাৎ না করেন সেটা প্রমাণ করবেন। প্রমাণ করতে না পারলে শাস্তি পাবেন। এখানে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে তো লাভ নেই। তিনি তরিকত ফেডারেশনের হলেও আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এই কথা তার ভুলে গেলে চলবে না।’

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী মাহফিলে সরকারকে নিয়ে নানা বিষোদগার করেছেন, তা আমি ফেসবুকে দেখেছি। তার বক্তব্য শুনেছি। এলাকার লোকজনও আমাকে এ নিয়ে কথা বলেছেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় বেশ আলোচনা হচ্ছে। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে ফটিকছড়ি আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এই আসন থেকে আমার নির্বাচন করার কথা ছিল। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে তাকে আমি ছেড়ে দিয়েছি। আওয়ামী লীগের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। উল্টো বিষোদগার করছেন। তার দুই ছেলেসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক। আর নজিবুল বশর বলছেন, এ মামলা সরকার করিয়েছে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রকল্প পরিচালককে মারধরে ১১ ঠিকাদার চিহ্নিত
পরবর্তী নিবন্ধমোছলেম উদ্দিনের আসনে উপনির্বাচন ২৭ এপ্রিল