আমনের মাঠে ব্লাস্টের হানা

বোয়ালখালীর বেশির ভাগ ধান ক্ষেত এ রোগে আক্রান্ত

বোয়ালখালী প্রতিনিধি | বুধবার , ৪ অক্টোবর, ২০২৩ at ৪:২২ পূর্বাহ্ণ

এ বছর বর্ষা শুরুর প্রথম কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে বোয়ালখালীর ফসলি জমির রোপা আমন, আমনের বীজতলা, আউশ, শরৎকালীন সবজি ও ফল বাগানের ব্যাপক ক্ষতির পরও স্থানীয় কৃষকরা দমে যায়নি। পুনরায় চাষের মধ্যে দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন তারা। শত কষ্টের মধ্যেও তাদের মনে আশা ছিল এবছর আমনের বাম্পার ফলন হবে হয়তো। কিন্তু মৌসুমের শেষ পর্যায়ে এসে ক্ষেতের অবস্থা দেখে একেবারেই থ বনে যান তারা।

উপজেলার জৈষ্ঠ্যপুরা গ্রামের কৃষক সুবল দে জানান, তিনি প্রায় দুই একর জমিতে ব্রি ধান ৪৯ ও ব্রি ধান ২৮ জাতের চারা রোপণ করেছেন। গত সপ্তাহে তার আবাদ করা আমন ধানে কি যেন রোগ দেখা দেয়। ধান বাঁচাতে প্রায় ১ হাজার টাকার ওষুধও ছিটিয়েছেন। কিন্তু কোনো ফল পাওয়া যায়নি। চোখের সামনেই জমির সব ধান শেষ হয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করলে তারা এটাকে ব্লাস্টের আক্রমণ বলে চিহ্নিত করেন। উপজেলার শ্রীপুরখরণদ্বীপ ইউনিয়নের জৈষ্ঠ্যপুরা সূর্যব্রত বিল, ব্রহ্মপুত্র বিল ও বড়ুয়া পাড়া বিল ঘুরে দেখা গেছে, একরের পর একর জমির আমন ক্ষেত এ রোগে আক্রান্ত। হলুদ, সাদা ও ধুসর রঙ ধারণ করেছে এসব জমির ধান। প্রায় জমিতে পড়ে আছে পচা খড় বিছালির অবশিষ্ট অংশ। জৈষ্ঠ্যপুরা সূর্যব্রত বিলের কৃষক অজিত নন্দী, দীলিপ দেব, সুকুমার দত্ত, সন্তোষ চৌধুরী, সঞ্জয় মহাজন ও অরুণ দাশ জানান, তাদের জমির প্রায় ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন যে যা পরামর্শ দিচ্ছেন তাই ব্যবহার করে ফসল বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন তারা।

স্থানীয় কৃষক অনিল বলেন, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির পরামর্শে হাজার হাজার টাকার ওষুধ ছিটিয়েও ফল পাচ্ছি না। কৃষি অফিসের লোকজন এখানে আসেন না। তাদের চিনিও না। আমরা বিপদে আছি। অথচ তাদের কোনো দেখাও মিলছে না।

আবদুল হামিদ মাস্টার নামের পোপাদিয়ার এক চাষি বলেন, শুনেছি সরকার কৃষকদের উৎসাহ দেয়ার লক্ষে অনেক ধরনের সহায়তা কর্মসূচি চালু করেছেন। কিন্তু সে সহায়তা আমাদের পর্যন্ত পৌঁছে না। বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি পর্যন্ত গিয়ে থেমে যায়। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উদয়ন আচার্য্য বলেন, ব্লাস্টের কারণে এ এলাকার বেশ কিছু জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এ রোগ প্রতিরোধে কৃষকদের ছত্রাক নাশক নাটিবো ও লাল সার উপরি প্রয়োগ এবং পচা রোগের জন্য প্লেনাম টিটোগোল্ড ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আতিক উল্লাহ বলেন, ব্রি ২৯, ব্রি ২৮ ও ব্রি ৫২ জাতের ধানে ব্লাস্টের প্রকোপ থাকে বেশি। এছাড়া দিন ও রাতের তাপমাত্রায় তারতম্য থাকলে বা প্রচুর গরম পড়লে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এ রোগে আক্রান্ত জমি পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ছত্রাকনাশক ওষুধ ছিটিয়ে রোগ প্রতিরোধ করতে পরামর্শসহ সংশ্লিষ্ট সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি আমরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজামালখানে বসেছে হাতে আঁকা ৫৬ কিংবদন্তির পেইন্টিং
পরবর্তী নিবন্ধনিউইয়র্কে আইএফআইসি ব্যাংকের রেমিট্যান্স রোডশো