আমদানিকারকের প্রতিনিধি পণ্যের নমুনার বাহক!

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৫ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:১২ পূর্বাহ্ণ

আমদানি পণ্য বন্দরের জেটিতে পৌঁছানোর পর কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং আমদানিকারকের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর সংগৃহীত নমুনার ব্যাগে সিল এবং ট্যাগ লাগিয়ে কাস্টমসের নিজস্ব পরিবহনে করে কাস্টমসের নমুনা শাখায় পাঠানো হয়। নমুনা শাখা থেকে আমদানিকারকের প্রতিনিধি সিএন্ডএফ এজেন্টের লোকজনই পণ্যের নমুনা সংশ্লিষ্ট শুল্কায়ন শাখায় নিয়ে যান। শুল্ক কর্মকর্তারা আমদানি নথিতে ঘোষণা অনুযায়ী পণ্যের নমুনা ঠিক আছে কিনা তা যাচাই বাছাই করে নমুনার পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে শুল্ক কর্মকর্তারা পণ্যের নমুনা’র সিল ট্যাগ কেটে দিয়ে আমদানিকারকের প্রতিনিধির মাধ্যমেই নমুনা ল্যাবে পাঠিয়ে দেন। এক্ষেত্রে পুনরায় ট্যাগ লাগানোর কথা থাকলেও সেটি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। কাস্টমসের নিজস্ব লোক দিয়ে এসব নমুনা পণ্য স্থানান্তর না হওয়ায় আমদানিকারকের প্রতিনিধি চাইলেই নমুনা পরিবর্তন করে ফেলতে পারেন। ফলে নমুনা পরিবর্তনের পাশাপাশি রাজস্ব ফাঁকির ঝুঁকিও বাড়ছে বলে মত দেন আমদানি রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা।
কাস্টমস সূত্র জানায়, যথাযথভাবে নিয়ম না মেনে পণ্যের নমুনা পরীক্ষা না হওয়ায় অনেক সময় রাসায়নিক পরীক্ষাগারে (ল্যাব) পরীক্ষায় সমস্যা ধরা পড়ে না। ফলে সহজে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানিকৃত বিভিন্ন পণ্য খালাস হয়ে যায়। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। এছাড়া নমুনা পরীক্ষা করানো বাধ্যতামূলক এমন অনেক পণ্য নমুনা শাখা থেকে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয় না। শুধুমাত্র নথি দেখে খালাসের অনুমতি দিয়ে দেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জানতে চাইলে সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসে জনবল
সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে সিএন্ডএফ এজেন্টের লোকজন নমুনা আনা নেয়া করছে। যদিও এটি নিয়ম নেই। নিয়ম হচ্ছে, শুল্কায়ন করার আগে সংশ্লিষ্ট শুল্ক কর্মকর্তা আমদানি পণ্যের নমুনা দেখতে চাইলে তখন তিনি নমুনা শাখার পিয়নের মাধ্যমে নমুনা আনা নেয়া করবেন। এরপর নমুনা দেখে পুনরায় সিল ট্যাগ লাগিয়ে যদি পরীক্ষার প্রয়োজন হয় তখন ল্যাবে পাঠাবেন। এক্ষেত্রে একমাত্র অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখা ছাড়া বাকি শাখাগুলো নমুনা দেখে সিল ট্যাগ কাটা অবস্থায় ল্যাবে পরীক্ষণের জন্য পাঠিয়ে দেন। মূলত পর্যাপ্ত জনবল থাকলে সিএন্ডএফ এজেন্টের লোকজন দিয়ে পণ্য আনা নেয়া করার প্রয়োজন হতো না।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার (জেটি) মো. তোফায়েল আহমেদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, জেটি থেকে পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে আমাদের নিজস্ব পরিবহনে জেটির একজন এবং নমুনা শাখার লোকের মারফত নমুনা শাখায় পাঠানো হয়। জেটিতে নমুনার ব্যাগে সিল ট্যাগ লাগানোর পরে কিন্তু আমরা ট্যাগ নম্বর লিখে রাখি। পরবর্তীতে নমুনা শাখা থেকে হয়তো সিএন্ডএফের লোকজন শাখায় নিয়ে যায়, তবে নমুনার ব্যাগে ট্যাগ তো আছেই। এক্ষেত্রে খুব বেশি সমস্যা হওয়ার কথা না।
সিল ট্যাগ কাটা অবস্থায় আমদানিকারকের প্রতিনিধির মাধ্যমে ল্যাবে নমুনা প্রেরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা কখনো কাম্য হতে পারে না। শুল্কায়ন শাখা সিল ট্যাগ কাটলে পরে পুনরায় ট্যাগ লাগিয়ে দিবেন। তবে পণ্যের নমুনা পরিবর্তন হয়েছে এমন খবর আমাদের জানা নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রার্থীদের প্রচারণা শেষ হচ্ছে আজ
পরবর্তী নিবন্ধধর্ষণ মামলায় সেই দেলোয়ারের যাবজ্জীবন